Advertisement
E-Paper

কণ্টকশয্যা

লোকসভায় সংশোধিত আইনে লঘুকরণের প্রস্তাব অগ্রাহ্য করিয়া আগেকার শর্তগুলি ফিরাইয়া আনিয়া সংশোধিত আইন পাশ হয়। এ বার দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু করে পরশুরাম সেনা, জনকল্যাণ সংগঠন, ক্ষত্রিয় সেনার মতো উচ্চবর্ণ গোষ্ঠীগুলি।

শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:০৩
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

জাতির নামে রাজনীতি করিতে গেলে যে জাত নামক বিষয়টি মধ্যখানে কণ্টকশয্যা বিছাইয়া ধরে, সে সত্য আজিকার নহে। একশত বৎসর আগেও ভারতীয় বাস্তব তাহাই দেখিয়াছে। এখনও এক-আইডেন্টিটির পথে জাতিত্ব তৈরি করিতে গেলে জাতের প্রশ্ন মুহূর্তমধ্যে মাঝখানটিতে মাথা উঁচাইয়া বড় আকারের সঙ্কট তৈরি করিতে পারে, ভারতীয় জনতা পার্টির শাসনাধীন ভারত তাহাই দেখাইতেছে। বিজেপির এই সঙ্কট এক রকম অনিবার্য ছিল, কেননা ‘অচ্ছে দিন’ ‘স্বচ্ছ ভারত’ ইত্যাদি বিবিধ চমৎকারী ধুয়ার পরও হিন্দু-জাতির ঐক্যপ্রতিষ্ঠাই তাহাদের এক-জাতি তৈরির তুরুপের তাস থাকিয়া গিয়াছে। ফলত, সর্ব ক্ষণ বিজেপির আরাধ্য জাতির অন্দরে কন্দরে মাথা তুলিতেছে অন্ত্যজ নিম্নবর্ণের বিদ্রোহী বিক্ষুব্ধ সত্তা, যাহারা নিজেদের হিন্দুত্বের বৃহৎ প্রকল্পে জড়াইতে যথেষ্ট নারাজ। অথচ বিজেপির ভোটের হিসাব অনুযায়ী নিম্নবর্ণকে ক্রুদ্ধ করিয়া দিলে কপালে অশেষ দুঃখ, তাই উপায়ান্তরবিহীন ভাবে কেন্দ্রীয় শাসক দল মাঝে মধ্যেই নিম্নবর্ণের গোসা সামলাইতে নামে। ভরতের সন্ততিসম্প্রদায় অবশ্য ছাড়িবার পাত্র নয়, তাই নিম্নবর্ণের রাগ কিঞ্চিৎ প্রশমিত হইবামাত্র ফোঁস করিয়া উঠে উচ্চবর্ণ। এই দুই পক্ষের সংঘর্ষ, পারস্পরিক অবিশ্বাসের শিকড় এত গভীরপ্রসারী ও সুদূরগামী যে, আইডেন্টিটির রাজনীতিতে দুই পক্ষকে একই সঙ্গে খুশি রাখা এক অসাধ্য সাধনা। প্রত্যহ এই বার্তা পাইতেছে বিজেপি। সম্প্রতি উত্তর ভারতে যে উচ্চবর্ণের হিন্দুরা বিক্ষোভে ফাটিয়া পড়িলেন, তফসিলি জাতি-জনজাতি পরিচয়ের লোক দেখিবামাত্র মারধর শুরু করিলেন, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করিয়া শাসক দলের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করিলেন— সব কিছুকেই বিজেপির এই বৃহত্তর সঙ্কট-কাহিনির অংশ হিসাবে দেখিতে হইবে। যে ‘এসসি-এসটি প্রিভেনশন অব অ্যাট্রসিটিজ়’ (সংশোধিত) আইনের বিরুদ্ধে এ বারের আন্দোলন, তাহার সংশোধনের ইতিবৃত্তের মধ্যেই এই গোটা কাহিনিটি অণু-আকারে ধরা রহিয়াছে।

বিতর্কিত আইনটি ১৯৫৫ সালের, যাহা ফিরিয়া আসে বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহের প্রধানমন্ত্রিত্ব কালে। এই আইন অনুযায়ী কোনও দলিতের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করিলে আচরণকারীর তৎক্ষণাৎ জামিনবিহীন গ্রেফতার ঘটিতে পারে। কড়া আইনটির হামেশা অপব্যবহার ঘটিয়া থাকে, এমন অভিযোগ তুলিতে শুরু করেন উচ্চবর্ণভুক্ত ও অন্য পশ্চাৎপদ সম্প্রদায়ভুক্ত নাগরিকগণ। মামলা শেষ অবধি সু্প্রিম কোর্টে গেলে গত মার্চ মাসে সর্বোচ্চ আদালত এই আইনের শর্তগুলি লাঘবের পক্ষে রায় দেয়। ক্ষোভে ফুঁসিয়া ওঠে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নিম্নবর্ণ সমাজ। রামবিলাস পাসোয়ানের মতো এনডিএ-র শরিক নেতারা বিজেপির উপর চাপ দিতে থাকেন, যাহাতে প্রস্তাবিত লঘুকরণ অমান্য করিয়া আইন সংশোধিত হয়। হুমকি দেন যে নতুবা বিজেপির উপর হইতে তাঁহারা সমর্থন উঠাইয়া লইবেন।

স্বভাবতই এত বড় ঝুঁকি বিজেপির পক্ষে গলাধঃকরণ করা মুশকিল। সুতরাং লোকসভায় সংশোধিত আইনে লঘুকরণের প্রস্তাব অগ্রাহ্য করিয়া আগেকার শর্তগুলি ফিরাইয়া আনিয়া সংশোধিত আইন পাশ হয়। এ বার দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু করে পরশুরাম সেনা, জনকল্যাণ সংগঠন, ক্ষত্রিয় সেনার মতো উচ্চবর্ণ গোষ্ঠীগুলি। উত্তর ভারতে বহু জায়গায় সংঘর্ষ তীব্র আকার ধারণ করে। সঙ্কট এখনও অব্যাহত। এখনও পর্যন্ত দাঁড়িপাল্লার দুই দিককে ভারসাম্যে আনিবার মন্ত্র বিজেপি জোগাড় করিতে পারে নাই। অদূর ভবিষ্যতে, অর্থাৎ ২০১৯-এর আগে তাহা পারিবে, এমন ভাবাও মুশকিল। সে ক্ষেত্রে কী ফর্মুলায় ‘হিন্দু ভোট’ নামক অসম্ভবটিকে সম্ভব করিবার বন্দোবস্ত করেন অমিত শাহ ও নরেন্দ্র মোদী জুটি, তাহাই দেখিবার।

BJP communalism Loksabha Election 2019 লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy