Advertisement
E-Paper

নাম বদলালেই কি ইতিহাস মুছে দেওয়া যায়?

জোর করে প্রয়াগ নামকরণ করে ২০১৯-এর আগে হিন্দুত্বের তাস প্রয়োগ কি সুস্থ রাজনীতি? প্রশ্ন তুললেন জয়ন্ত ঘোষাল মেট্রো স্টেশনের নাম যেমন কলকাতায় উত্তমকুমার, নজরুল, নেতাজি সুভাষ, সর্বশেষ নামকরণ কবি সুভাষ। আমার মনে হয়, এই সব নামকরণ আরোপিত। এলগিন রোডকে এলগিন রোড বলাই বাঞ্ছনীয়। ব্রাবোর্ন রোড তো ব্রাবোর্ন রোডই। নামকরণের সঙ্গে সেই সময়ের ইতিহাসের অনুষঙ্গ থাকে, সেটা ভুললে চলবে কী করে? নাম বদলালেই কি মুঘল সাম্রাজ্যের ঔরঙ্গজেবের ইতিহাসকে মুছে দেওয়া সম্ভব হবে?

জয়ন্ত ঘোষাল

শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৮ ০১:০৬
ইলাহাবাদ স্টেশনের নামও পরিবর্তিত হয়ে প্রয়াগরাজ হচ্ছে।—ফাইল চিত্র

ইলাহাবাদ স্টেশনের নামও পরিবর্তিত হয়ে প্রয়াগরাজ হচ্ছে।—ফাইল চিত্র

উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ঘোষণা করেছেন যে ইলাহাবাদ শহরের নাম এ বার হবে প্রয়াগ। ফলে ইলাহাবাদ স্টেশনের নামও হবে প্রয়াগরাজের নামে। আগামী বছর জানুয়ারি মাসে ত্রিবেণী সঙ্গমে অর্ধকুম্ভ। তাই তার আগেই এই নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে নাকি বিজেপি রাজনৈতিক বাজিমাত করবে। এমনটাই ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির পরিকল্পনা। এটাও এত দিনে আমরা জেনে গিয়েছি, এ বার প্রজাতন্ত্র দিবসের সময় যে সব বিদেশি প্রতিনিধি আসছেন তাঁদেরও নিয়ে যাওয়া হবে কুম্ভমেলায়। শুধু বোটক্লাবে কুচকাওয়াজ দেখলে কি ভারত দর্শন হবে!

এ সব বুঝলাম। কিন্তু নাম পরিবর্তন কেন? নাম পরিবর্তনের চেয়ে রাজ্য ও ইলাহাবাদ নগরীর উন্নয়ন করাটা কি বেশি জরুরি নয়? আর নাম বদলের প্রয়োজনটাই বা কি? এত দিন ধরে শহরটাকে জেনে এসেছি ইলাহাবাদ বলে৷ এখন সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করে নতুন নাম প্রয়াগ বলা হলেই কি তা মানুষের মনে প্রয়াগ হয়ে যাবে? ধরুন, দিল্লির ঔরঙ্গজেব রোডের নাম বদলে এখন নাম হয়েছে আব্দুল কালাম রোড। দিল্লির লোকেদের কিন্তু কাউকেই নতুন নাম বলতে শুনি না। দিল্লির কনট প্লেসের নাম বদলে রাজীব গাঁধী চক করে দেওয়া হয় কংগ্রেস জমানায়। এখনও দিল্লিবাসী কনট প্লেসই বলে। ক’জন রাজীব গাঁধী চক বলে তাঁকে স্মরণ করে?

মেট্রো স্টেশনের নাম যেমন কলকাতায় উত্তমকুমার, নজরুল, নেতাজি সুভাষ, সর্বশেষ নামকরণ কবি সুভাষ। আমার মনে হয়, এই সব নামকরণ আরোপিত। এলগিন রোডকে এলগিন রোড বলাই বাঞ্ছনীয়। ব্রাবোর্ন রোড তো ব্রাবোর্ন রোডই। নামকরণের সঙ্গে সেই সময়ের ইতিহাসের অনুষঙ্গ থাকে, সেটা ভুললে চলবে কী করে? নাম বদলালেই কি মুঘল সাম্রাজ্যের ঔরঙ্গজেবের ইতিহাসকে মুছে দেওয়া সম্ভব হবে?

নাম পরিবর্তনের চেয়ে রাজ্য ও ইলাহাবাদ নগরীর উন্নয়ন করাটা কি বেশি জরুরি নয়।—ফাইল চিত্র

ইতিহাসের নির্মোহ নিরপেক্ষ বিচার হোক, কিন্তু তার জন্য নাম বদলে লাভ কী?

আরএসএস প্রয়াগ শব্দটি ইলাহাবাদের চেয়ে বেশি পছন্দ করে, ঠিক যেমন বারাণসীর চেয়ে বেশি পছন্দ কাশী। ইলাহাবাদ শহরের পরিচয়ের সঙ্গে নেহরু-গাঁধী পরিবার ও আনন্দ ভবনের ঐতিহ্য যুক্ত হয়ে আছে আজও। বিজেপি কি নামবদলে সেই ঐতিহ্যের পরিবর্তন চাইছে? ঠিক যে ভাবে নেহরু-গাঁধী মতাদর্শের বিরুদ্ধে আরএসএস তার নিজস্ব ভারত ভাবনাকে তুলে ধরতে বেশি মরিয়া।

এ কথা ঠিক, শুধু নেহরু নন, এই ইলাহাবাদের আরএসএস-এর প্রাক্তন সরসঙ্ঘচালক রাজেন্দ্র সিংহ, যিনি ‘রজ্জুভাইয়া’ বলেই বিশেষ পরিচিত, তিনিও এই ইলাহাবাদ শহর থেকেই এসেছেন। তিনি আরএসএস-এর একমাত্র প্রধান যিনি উত্তর ভারতের প্রতিনিধি ছিলেন তিনি ইলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। মুরলীমনোহর যোশী তো এখনও এই শহরে থাকেন। এ ছাড়া বিশ্ব হিন্দু পরিষদের অশোক সিঙ্ঘলও এই এলাকা থেকে এসেছিলেন।

তবে মনে রাখতে হবে, প্রয়াগ কিন্তু শুধু হিন্দুধর্মের নয়, বৌদ্ধধর্মের জন্যও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে অশোকস্তম্ভটি ইলাহাবাদ দুর্গের মুখে বসানো হয়েছিল মোগল আমলে। ১৫৮৩-তে আকবর এই দুর্গটি বানান। জাহাঙ্গিরের বিদ্রোহী পুত্র রাজকুমার খুসরুর সমাধিও এই দুর্গের বাইরে। এই দুর্গটি এখন ভারতীয় সেনাদের অধীনে। সিপাহি বিদ্রোহের ইতিহাসের সঙ্গেও যুক্ত ইলাহাবাদ।

তাই জোর করে প্রয়াগ নামকরণ করে ২০১৯ সালের আগে হিন্দুত্বের তাস প্রয়োগ কি সুস্থ রাজনীতি? তার চেয়ে যোগী আদিত্যনাথের উচিত উন্নয়নের কাজে মন দেওয়া। শুধু নাম বদলালেই কি আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার উন্নতি হবে?

(এই প্রতিবেদনটি প্রথম প্রকাশের সময় দিল্লির আব্দুল কালাম রোডের নাম ভুলবশত মৌলানা আবুল কালাম আজাদ রোড লেখা হয়েছিল। এই অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির জন্য আমরা দুঃখিত)

Allahabad Rename Prayagraj Yogi Adityanath
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy