Advertisement
E-Paper

বন্দির মর্যাদা

তাই বন্দি প্রত্যর্পণের ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশ প্রশ্ন তুলিতেছে, ভারতের কারাগারে তাহাদের নাগরিক কতটা সুরক্ষিত? আশঙ্কা হয়, বিজয় মাল্যের মতো মানুষকে হেফাজতে লইবার দাবি প্রতিষ্ঠা করিতে সরকার যতটা তৎপর, বুধনদের প্রাণ বাঁচাইতে অতটা নহে। তাই তিনটি দশক কাটিয়া গেল আইন করিতে।

শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৯ ০০:০০
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

বুধন শবরের হত্যা দেশবাসী ভোলে নাই। পুরুলিয়ার খেড়িয়া শবর জনজাতির এই যুবককে প্রথমে পুলিশ হাজতে ও পরে জেলে লাগাতার প্রচণ্ড প্রহার করিয়াছিল পুলিশ। বুধনের মৃত্যুর বিচার দাবি করিয়া মহাশ্বেতা দেবী আদালতের দ্বারস্থ হইয়াছিলেন। সেই মামলায় শবরদের জয় হইয়াছিল, অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিকরা শাস্তি পাইয়াছিলেন। পুলিশি নির্যাতনের রূপ উন্মুক্ত হইয়াছিল। অতঃপর বিশ বৎসর কাটিয়াছে। থানায় বা জেলে পুলিশি নির্যাতন কমিয়াছে কি? গত বৎসর জেল হেফাজতে দেড় হাজারেরও অধিক, পুলিশ হাজতে প্রায় দেড়শোটি মৃত্যুর অভিযোগ পাইয়াছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। ইহাতে স্পষ্ট, বন্দির উপর নির্যাতনের তীব্রতা কত ভয়ানক। কিন্তু কয় জন নির্যাতিত বিচার প্রার্থনা করিতে পারেন? নির্যাতনের ফলে কত মানুষ শারীরিক ও মানসিক ভাবে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত, কেহ জানে না। সম্প্রতি কেন্দ্র হাজতে নির্যাতন নিষিদ্ধ করিবার আইন প্রণয়নে উদ্যোগী হইয়াছে। পশ্চিমবঙ্গের মতামতও চাহিয়াছে কেন্দ্র, রাজ্য তাহাতে সম্মতি জানাইয়াছে। হেফাজতে নিগ্রহের ফলে মৃত্যুর অভিযোগের সংখ্যায় উত্তরপ্রদেশের পরেই স্থান পশ্চিমবঙ্গের। গত বৎসর এই রাজ্য হইতে একশো সাতাশটি হেফাজতে মৃত্যুর বিচারের জন্য দরবার হইয়াছে মানবাধিকার কমিশনে। ১৯৮৪ সালে হাজতে নিগ্রহ নিষিদ্ধ করিবার আন্তর্জাতিক চুক্তিতে সই করে ভারত। অতঃপর অধিকাংশ দেশ সেই অনুসারে আইন করিয়াছে, ভারত-সহ আটটি দেশ করে নাই।

তাই বন্দি প্রত্যর্পণের ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশ প্রশ্ন তুলিতেছে, ভারতের কারাগারে তাহাদের নাগরিক কতটা সুরক্ষিত? আশঙ্কা হয়, বিজয় মাল্যের মতো মানুষকে হেফাজতে লইবার দাবি প্রতিষ্ঠা করিতে সরকার যতটা তৎপর, বুধনদের প্রাণ বাঁচাইতে অতটা নহে। তাই তিনটি দশক কাটিয়া গেল আইন করিতে। দোষ শুধু সরকারেরই নহে। পুলিশি নিগ্রহের প্রতি সমর্থন রহিয়াছে সমাজের একটি অংশের। এই সমর্থন অনেকটাই চিন্তার অভ্যাসের ফল। হাসপাতালে ডাক্তার রোগীর চিকিৎসা করিবে, স্কুলে শিক্ষক ছাত্রকে পড়াইবে, তেমনই থানায় পুলিশ হাজতবন্দিকে প্রহার করিবে, ইহাই যেন ‘স্বাভাবিক’। অভিযুক্তকে নিগ্রহ না করিলে যেন অপরাধের তদন্ত হয় না। বিশ্বের কতগুলি দেশে এমন ‘তদন্ত’ হয়? এই অমানবিকতার সমর্থনে চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন সিরিয়াল কোমর বাঁধিয়াছে। পর্দার কাহিনিতে সৎ পুলিশ অফিসারের নায়কোচিত পৌরুষ প্রকাশ পাইবার উপায়, অভিযুক্তদের নির্মম প্রহার। চিত্রনাট্যে আদালতের বিচার অকারণ বিড়ম্বনা, এবং পুলিশের নিগ্রহই ‘উচিত বিচার’ বলিয়া প্রতিষ্ঠিত হয়।

হাজতে বন্দি-নিগ্রহের কঠোর শাস্তি বিধান করিয়া আইন প্রয়োজন। তবে বিচারাধীন বন্দি এবং সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের দৈহিক ও মানসিক নির্যাতন নিষিদ্ধ করাই যথেষ্ট নহে। বন্দির অধিকার শুধু মানবাধিকারের দৃষ্টিতে দেখা হইবে কেন? নাগরিক অধিকারকেও মান্যতা দিতে হইবে। পরিচ্ছন্ন ঘর, শুইবার-বসিবার ন্যূনতম স্থান, চিকিৎসার ব্যবস্থাকেও অলঙ্ঘনীয় করিতে হইবে আইনে। গ্রেফতার বা তদন্তের প্রক্রিয়া আইন অতিক্রম করিবে না, সেই নিশ্চয়তাও চাই। অপরাধের প্রতিকার চাহিয়া আরও অপরাধের ছাড়পত্র দিবে সমাজ, নীরবে তাহা সমর্থন করিবে রাষ্ট্র, ইহার অবসান হউক। বন্দি-নিগ্রহ বন্ধে আইন চাই, প্রচারও চাই।

Jail Prisoner Torture Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy