—ফাইল চিত্র।
আবেগ উচ্ছ্বাস বিদ্রূপ আশাভঙ্গ সান্ত্বনা ক্রন্দন আলিঙ্গন জাতীয়তাবাদ রাজনীতি ফেসবুক টুইটার ইত্যাদি তেত্রিশ কোটি অনুষঙ্গ সরাইয়া রাখিলে দ্বিতীয় চন্দ্রযান প্রকল্পের যে নির্যাস পড়িয়া থাকে তাহার নাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। এই বৈজ্ঞানিক অভিযান ষোলো আনা সফল হয় নাই, কিন্তু তাহাকে ব্যর্থ বলিবার কোনও যুক্তি নাই, ইসরো তথা সংশ্লিষ্ট সমস্ত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কৃতিকে তাহার প্রাপ্য অভিবাদন না জানাইবারও কোনও কারণ নাই। আইরিশ নাট্যকার স্যামুয়েল বেকেট একটি গল্পে লিখিয়াছিলেন: আবার চেষ্টা করো, আবার ব্যর্থ হও, আরও ভাল ভাবে ব্যর্থ হও। এই উক্তির আক্ষরিক অর্থ গ্রহণ করা বুদ্ধির পরিচায়ক হইবে না— সাফল্যই লক্ষ্য, ব্যর্থতা নহে। কিন্তু বেকেটের সুগভীর উচ্চারণের মর্মার্থে নিহিত আছে বিজ্ঞানের ধর্ম। বিজ্ঞান স্বভাবত স্থিতপ্রজ্ঞ, সে সুখ এবং দুঃখ, সাফল্য এবং ব্যর্থতা উভয়কেই নির্মোহ নিরাসক্ত যুক্তির দ্বারা বিশ্লেষণ করে, প্রয়োজনীয় শিক্ষা গ্রহণ করে এবং নব উদ্যমে পরবর্তী প্রকল্পের পথে অগ্রসর হয়।
ইসরোর কর্ণধাররা জানাইয়াছেন, চন্দ্রযান-২ প্রকল্প ইতিমধ্যেই শতকরা ৯০-৯৫ ভাগ সফল। হিসাবটি আপাতদৃষ্টিতে ঈষৎ চমকপ্রদ। বিক্রম এবং তাহার গর্ভস্থ প্রজ্ঞান নামক রোভার বা ভ্রমণ-যানের সফল অবতরণ ঘটিলে চন্দ্রযান প্রকল্পের আর মাত্র ৫-১০ শতাংশ বেশি কাজ হইত? কিন্তু সেই সংশয় নিরসনের অধিকার একমাত্র বিশেষজ্ঞদের। ইসরোর কর্তারা কেন চন্দ্রযানের সাফল্য প্রার্থনায় দেবতার মন্দিরে গিয়াছিলেন, সেই সঙ্গত প্রশ্নও আপাতত মুলতবি থাকুক। এই প্রকল্পের কল্যাণে মহাকাশ গবেষণার যে অগ্রগতি ঘটিয়াছে এবং ঘটিতে পারে, তাহা মূল্যবান। বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদরাই সেই অভিযানের প্রকৃত নায়ক। আশা করা যায় রাষ্ট্রের চালকরা তাঁহাদের সেই কাজ সুষ্ঠু ভাবে সম্পাদন করিতে সমস্ত প্রয়োজনীয় সাহায্য করিবেন। এই ধরনের কাজে সরকার তথা রাজনীতির ছায়া যত কম পড়ে ততই মঙ্গল। অতঃপর যাত্রী-বাহী গগনযান উৎক্ষেপণের নির্ঘণ্ট অপরিবর্তিত থাকিবে কি না, তাহার আগে আরও একটি চন্দ্রযান প্রেরিত হইবে কি না, সেই সকল প্রশ্নের বিচারও চলিতেই পারে। কিন্তু সেই বিচারে যদি সুযোগসন্ধানী রাজনীতির কোনও প্রকার ছায়াপাত ঘটে, তাহা কেবল দুর্ভাগ্যজনক নয়, বিপজ্জনক হইবে।
দ্বিতীয় চন্দ্রযানের অরবিটার বা পরিক্রমণ-যান ইতিমধ্যে কাজ শুরু করিয়াছে। তাহার পর্যবেক্ষণ হইতে প্রচুর মূল্যবান তথ্য মিলিবার সম্ভাবনা। ইহা অবশ্যই প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য। ইহার পাশাপাশি অসাফল্যের বিশ্লেষণও বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে অগ্রগতির একটি অঙ্গ, যাহার গুরুত্ব কোনও অংশে কম নহে। শেষ ২.১ কিলোমিটার বিক্রমের সমগ্র যাত্রাপথের মাত্র ০.০০০৬ শতাংশ বাকি ছিল, সুতরাং ব্যর্থতার অনুপাতও ০.০০০৬ শতাংশ— এমন হিসাবকে মাছিমারা বুদ্ধিহীনতা বলিলে মাছিও অপমানিত বোধ করিবে। এই অনুপাতের কোনও অর্থ নাই। অভিযানের শেষাংশটি ভয়ানক কঠিন, তাহা ইসরোর বিশেষজ্ঞরা আগেই বলিয়াছিলেন। শেষ পর্বে ঠিক কী ঘটিয়াছে, তাহা জানিবার এবং বিচার করিবার কাজটি অতঃপর, কেবল ভারতের নহে, গোটা দুনিয়ার বিশেষজ্ঞদের নিকট গুরুত্বপূর্ণ। মহাকাশে দেশভেদ নাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy