Advertisement
E-Paper

ভেজালের বিরুদ্ধে

ভেজাল ভোজন যে অসুস্থতা ও মৃত্যুকে আমন্ত্রণ করিয়া আনে, তাহা জানিতে কাহারও বাকি নাই। কিন্তু কী করিতে পারে ক্রেতা? তাহার অসহায়তার ইতিহাস অতি দীর্ঘ।

শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৭ ০০:০০

মাছ ধরিতে অভিযান চালাইবে পুরসভা। ক্ষতিকর রাসায়নিক প্রয়োগ করিয়া মাছ সংরক্ষণ করা হইয়াছে কি না, তাহা নির্ণয় করিতে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হইয়াছে ফুড ইনস্পেক্টরদের। রাজ্যবাসী উদ্বিগ্ন, আশ্চর্য নহেন। ভেজাল লইয়া মাঝে মাঝেই হইচই হয়। এই বৎসরও এপ্রিল-মে মাসে নদিয়ার শান্তিপুর এবং উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গা হইতে প্রচুর ভেজাল তেল বাজেয়াপ্ত করিয়াছে সিআইডি। ফেব্রুয়ারিতে দত্তপুকুরে ধরা পড়িয়াছিল ভেজাল দুধ। সরকারি পরীক্ষাগারে ধরা পড়িয়াছে, নষ্ট হওয়া দুধ, ছানার জল, অ্যারারুট, মেয়াদ-উত্তীর্ণ গুঁড়ো দুধ, ইউরিয়া, পানিফলের গুঁড়ো, বটের আঠা ইত্যাদি মিশাইয়া এই ভেজাল দুধ তৈরি হইতেছে। স্বল্পমূল্যের তুষের তেল বা সয়াবিনের তেলের সহিত এমন রাসায়নিক মেলানো হইতেছে, যাহা ঝাঁঝ ও গন্ধে সর্ষের তেলের ন্যায়। এই রাসায়নিক ক্যান্সারও ঘটাইতে পারে। আশির দশকের শেষে বেহালায় ভেজাল তেল খাইয়া পঙ্গুত্ব ও অন্ধত্বের ঘটনা স্মরণীয়। ভেজালের কারবার এত বিস্তৃত, এত ধারাবাহিক ভাবে ভেজালের ব্যবসা চলিতেছে, অথচ তাহা পরীক্ষা করিবার নিয়মিত ব্যবস্থা নাই। কর্তারা অভিযান চালান ক্বচিৎ কদাচিৎ, ধরা পড়ে দুই-একজন ব্যবসায়ী। ভেজাল বন্ধ করিতে হইলে যে ব্যাপক তল্লাশি এবং ধরপাকড়ের প্রয়োজন, তাহার সিকিভাগও হয় নাই। যে সকল স্থানে ধরপাকড় চলিতেছে, অতীতেও দুধ, তেলে ভেজালের সংবাদ সেই সকল এলাকা হইতে আসিয়াছে। ফল: প্রশাসনের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ও প্রতিশ্রুতি।

ভেজাল ভোজন যে অসুস্থতা ও মৃত্যুকে আমন্ত্রণ করিয়া আনে, তাহা জানিতে কাহারও বাকি নাই। কিন্তু কী করিতে পারে ক্রেতা? তাহার অসহায়তার ইতিহাস অতি দীর্ঘ। সিপাহি বিদ্রোহের এক দশক আগে বাংলায় ভেজাল প্রতিরোধে আইন করা হইয়াছিল। খাদ্য-পানীয়ে নজরদারির জন্য খোলা হইয়াছিল ‘নুইসন্স ডিপার্টমেন্ট।’ কিন্তু ঘি, দুধে ভেজাল মিশাইবার ধারা উনিশ শতক জুড়িয়া অব্যাহত থাকিল। স্বাস্থ্য বিভাগের রিপোর্টে দুধে বাতাসা, চক, অ্যারারুট, সর্ষের তেলে সজনের রস, লঙ্কাগুঁড়া এবং ঘিয়ে ভেড়ার চর্বি মিশাইবার উল্লেখ একাধিক বার মিলিয়াছে। ভেজাল খাদ্য যাহাতে কলিকাতায় ঢুকিতেই না পারে, তাহার জন্য হাওড়া স্টেশন, জগন্নাথ ঘাট, নিমতলা ঘাট, আহিরীটোলা ঘাটে বহাল করা হইয়াছিল ইনস্পেক্টর। তাহাতেও ভেজাল প্রতিরোধ করা যায় নাই। বরং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বাজারে তাহা অপ্রতিরোধ্য হইয়া উঠিয়াছিল।

ভেজাল প্রতিরোধের যে পদ্ধতি এখন চালু রহিয়াছে, তাহা কার্যকর নহে। কেবল খাদ্য ইনস্পেক্টরের রিপোর্ট আর পুলিশি তল্লাশির উপর নির্ভর করিলে ভেজালের এক শতাংশও ধরা পড়িবে না। অন্য উপায় ভাবিতে হইবে। ভেজাল-বিষাক্ত খাদ্যকে জনস্বাস্থ্য সমস্যা বলিয়া ঘোষণা করিয়া, সংক্রামক অসুখ প্রতিরোধে যেমন ব্যাপক কার্যক্রম লওয়া হয়, তেমনই লইতে হইবে। ভেজাল প্রতিরোধের জন্য নাগরিক সংগঠন এবং বাজার কমিটিগুলিকে সম্পৃক্ত ও দায়বদ্ধ করিতে হইবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং ক্রেতা সুরক্ষা, এই দুই পথ ধরিয়া ভেজালের মোকাবিলা করিতে হইবে। পথ অজানা নহে। কিন্তু সেই পথে চলিবে কে?

Adulterated Milk Adulterated Fish Adulterated Vegetables Life Crisis Adulteration
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy