Advertisement
E-Paper

শোভন হচ্ছে না একেবারেই

রাজনীতির পথে এত দীর্ঘ পরিক্রমা যাঁর, তিনি জন-পরিসরে অযোগ্য— সরাসরি এমন মন্তব্য করতে একটু দ্বিধাই হচ্ছে। কিন্তু শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক ক্রিয়াকলাপ দেখে তাঁকে রাজনীতির উপযুক্ত বলতেও মন সায় দিচ্ছে না।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৮ ০০:৫০
শোভন চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

শোভন চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

পুকুরঘাটে সর্বসমক্ষে পরিধেয় ধুতি বা শাড়ি কাচা যেতে পারে। কিন্তু অপরিচ্ছন্ন অন্তর্বাস প্রকাশ্য পরিসরের জন্য নয়। একটি ইংরেজি প্রবচনের বাংলা সারানুবাদ করলে অর্থটা অনেকটা এ রকমই দাঁড়ায়।

প্রবাদ-প্রবচনের প্রাসঙ্গিকতা অবশ্য ভাষার গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়। দেশ, কাল, সীমান্তরেখাতেও সীমাবদ্ধ নয়। অধিকাংশ প্রবচনই শাশ্বত এবং ধ্রুব। অতএব ইংরেজদের প্রবচন এ বঙ্গেও প্রাসঙ্গিক হতেই পারে। প্রাসঙ্গিক ঠেকছেও সম্ভবত প্রবচনটা অনেকের কাছেই।

প্রত্যেকের জীবনেই একটা ব্যক্তিগত পরিসর থাকে। থাকা জরুরিও। যাঁরা জন-পরিসরে জীবন কাটান, যেমন রাজনীতিক বা সেলিব্রিটি, তাঁদের জীবনে ব্যক্তিগত পরিসরের সংজ্ঞাটা সাধারণ নাগরিকের ব্যক্তিগত পরিসরের সংজ্ঞার চেয়ে কিয়ৎ আলাদা। তাঁদের ব্যক্তিগত ক্ষেত্রটা অনেকটা সঙ্কুচিত হয়ে আসে। কারণ তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনে উঁকি দেওয়ার উৎসাহ অন্য অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। কিন্তু সে সব উৎসাহ, আগ্রহ, কৌতূহলকে এড়িয়ে শিখে নিতে হয়, ব্যক্তিগত জীবনটাকে ব্যক্তিগত পরিসরেই কী ভাবে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। এটুকু যাঁরা পারেন না, ধরে নিতে হবে তাঁরা জন-পরিসরে জীবন কাটানোর অযোগ্য।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে কলকাতা কর্পোরেশনে রয়েছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। রাজনীতিতে রয়েছেন তারও আগে থেকে। অর্থাৎ, এই সুদীর্ঘ সময় জন-পরিসরেই বেঁচেছেন শোভন। আজ তিনি কলকাতার মেয়রও। রাজনীতির পথে এত দীর্ঘ পরিক্রমা যাঁর, তিনি জন-পরিসরে অযোগ্য— সরাসরি এমন মন্তব্য করতে একটু দ্বিধাই হচ্ছে। কিন্তু শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক ক্রিয়াকলাপ দেখে তাঁকে রাজনীতির উপযুক্ত বলতেও মন সায় দিচ্ছে না।

শোভন চট্টোপাধ্যায় তাঁর নিজের জীবন কী ভাবে কাটাবেন, কার সঙ্গে কাটাবেন, স্ত্রীয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রাখবেন কি না, বিবাহ বিচ্ছেদের পথে হাঁটবেন কি না, অন্য আত্মীয়-স্বজনের মুখ দেখতে চাইবেন কি না— সে সব নিতান্তই তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। সে বিষয়ে শোভনের আত্মীয়-পরিজনরা বা সংশ্লিষ্টরা কিয়দংশে বা অনেকাংশে নাক গলাতে পারেন। তাঁরা ছাড়া আর কেউই এই টানাপড়েনে প্রাসঙ্গিক নন। কিন্তু শোভন চট্টোপাধ্যায়ের দুর্বোধ্য আচরণে আজ গোটা রাজ্যের কাছে ‘প্রাসঙ্গিক’ হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন।

আরও পড়ুন: শোভন দূরেই, বোঝাল তৃণমূল

এটা কী করছেন শোভন! তিনি কি ভুলে গিয়েছেন যে, তিনি একজন রাজনৈতিক নেতা? তিনি কি ভুলে গিয়েছেন যে, নিরন্তর জনসাধারণের মাঝে এবং জনসাধারণকে সঙ্গে নিয়ে চলাটাই তাঁর কর্তব্য? তিনি কি ভুলে গিয়েছেন যে, ভাবমূর্তিই সম্বল রাজনীতিকদের? নিজের দাম্পত্য কলহকে এমন প্রকাশ্য হাটের মাঝে এনে ফেললেন কেন শোভন? অন্য স্বজন-পরিজনদের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব এখন কতখানি এবং তিনি ও তাঁরা এখন পরস্পর সম্পর্কে কতটা তিক্ত ধারণা পোষণ করছেন, তা-ও বা শোভন জনসমক্ষে আসতে দিলেন কেন?

নিজের মর্যাদা তথা ভাবমূর্তি সম্পর্কে শোভন চট্টোপাধ্যায় ঠিক কতখানি ভাবিত আজকাল? হতেই পারে যে তিনি ভাবিত নন। কিন্তু কলকাতা পৌরসংস্থা সম্পর্কে তো ভাবিত হতেই হবে শোভনকে। চিত্তরঞ্জন দাশ বা সুভাষচন্দ্র বসু বা বিধানচন্দ্র রায়েরা কলকাতার মহানাগরিক পদ অলঙ্কৃত করেছেন বিভিন্ন সময়ে। বর্তমান মহানাগরিক সেটুকু অন্তত খেয়াল রাখবেন আশা করা যায়।

Sovan Chatterjee Kolkata Newsletter Anjan Bandyopadhyay শোভন চট্টোপাধ্যায় কলকাতা অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় TMC Mayor KMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy