Advertisement
E-Paper

প্রতিশ্রুতির ফারাক

ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকাম বা সর্বজনীন ন্যূনতম আয়ের জল কত দূর গড়ায়, সেই প্রশ্নের মীমাংসার জন্য অন্তত বাজেট অবধি অপেক্ষা করাই যায়। কিন্তু একটি কথা স্পষ্ট: ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের মূল প্রশ্নগুলি অর্থনীতিরই।

শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:০০

ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকাম বা সর্বজনীন ন্যূনতম আয়ের জল কত দূর গড়ায়, সেই প্রশ্নের মীমাংসার জন্য অন্তত বাজেট অবধি অপেক্ষা করাই যায়। কিন্তু একটি কথা স্পষ্ট: ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের মূল প্রশ্নগুলি অর্থনীতিরই। কৃষিঋণ মকুবই হউক বা কর্মসংস্থান, অথবা সর্বজনীন আয়, মূল তর্ক হইতেছে দারিদ্র এবং তাহা দূর করিবার সম্ভাব্য পন্থা লইয়া। আলোচনায় সেই রাম মন্দিরও নাই, সেই গোমাংসও নাই। ভোট এখনও বহু দূরে, বহুতর কুনাট্য অভিনীত হওয়া বাকি— রাম মন্দির লইয়া নূতন কৌশল শুরু হইয়াছে, তাহাও সুস্পষ্ট। কিন্তু, প্রয়াগরাজের ‘সাধুসন্ত’রা যতই আহ্লাদিত হউন, ভোটের বাজারে এই সব কৌশল আজ আর কাটিবে কি না, নরেন্দ্র মোদী ও তাঁহার সতীর্থরাও নিশ্চিত নহেন। অন্তত, মেরুকরণের রাজনীতিকে পিছনে ফেলিয়া সূচনাটি মন্দ হয় নাই। স্মরণীয়, ২০০৪ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ীর ‘ভারত উদয়’ নামক ঢক্কানিনাদের পর যে ভারতের কঙ্কাল পড়িয়া ছিল, তাহার নিকট ভাতকাপড়ের সংস্থানই একমাত্র চিন্তা ছিল। নরেন্দ্র মোদীর পাঁচ বৎসর ব্যাপী ‘অচ্ছে দিন’-এর আগমনি শুনিবার পরেও আবার, দারিদ্রই প্রশ্ন।

২০১৪ সালের নির্বাচনের প্রচারপর্বটি এই পরিপ্রেক্ষিতে ব্যতিক্রমী ঠেকিবে। সেই বারও অর্থনীতি লইয়া চর্চা হইয়াছিল বিস্তর। নরেন্দ্র মোদীই তৎকালীন ইউপিএ সরকারের ঢের সমালোচনা করিয়াছিলেন। কিন্তু, সেই আলোচনা দারিদ্র বিষয়ে ছিল না, ছিল সমৃদ্ধি বিষয়ে। নরেন্দ্র মোদীদের দাবি ছিল, ভারতের যত দ্রুত হারে আয়বৃদ্ধি করা উচিত ছিল, ভারত তাহা করে নাই। জরুরি সমালোচনা, অবশ্যই। কিন্তু, ভারত দারিদ্রের মোকাবিলা করিতে পারে নাই, এমন অভিযোগ নরেন্দ্র মোদীও করেন নাই। সম্ভবত ভাবেনও নাই। পৌনে পাঁচ বৎসর শাসনের পর তিনি ভারতকে ফের এমন জায়গায় লইয়া যাইতে পারিয়াছেন, যেখানে বৃদ্ধির হারের প্রসঙ্গ অবধি যাওয়াই অসম্ভব, দারিদ্রই আলোচনার কেন্দ্রে— তাহার জন্য শ্রীমোদী কৃতিত্ব দাবি করিতেই পারেন।

তিনি ‘অচ্ছে দিন’ আনিবেন বলিয়াছিলেন। তাঁহার বহু পূর্বে ইন্দিরা গাঁধীও গরিবি হটাইবার ডাক দিয়াছিলেন। রাহুল গাঁধী সর্বজনীন আয়ের ব্যবস্থা করিবার প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন। সবই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি, এবং বাকিগুলির ন্যায় রাহুলের প্রতিশ্রুতিও সম্ভবত পঞ্চভূতে বিলীন হইয়া যাইবে। যদি সত্যই তিনি ক্ষমতায় আসেন, প্রতিশ্রুতি রূপায়ণ করেন, তাহাতেও যে ভারতের গরিবের নির্বিকল্প কল্যাণ হইবে, তেমন কথাও বলিবার উপায় নাই। কিন্তু, ‘গরিবি হটাও’ বা ‘অচ্ছে দিন’-এর সহিত সর্বজনীন আয়ের প্রতিশ্রুতির কি কোনও ফারাক আছে? সেই ফারাকেই কি নরেন্দ্র মোদীর ব্যর্থতার শিকড়? উত্তর বহুমাত্রিক, কিন্তু আপাতত লক্ষণীয়, ‘অচ্ছে দিন’-এর প্রতিশ্রুতিতে কোনও নির্দিষ্ট বক্তব্য ছিল না। তিনি জানাইয়াছিলেন, বৃদ্ধির হার বাড়িবে, কর্মসংস্থান হইবে, কৃষকের আয় দ্বিগুণ হইবে ইত্যাদি। কিন্তু কী ভাবে তাহা হইবে, উল্লেখ করেন নাই। অর্থাৎ, এই প্রতিশ্রুতিতে কোনও নীতি ছিল না। গরিবি হটাও-এর স্লোগানেও যেমন কোনও নির্দিষ্ট নীতি অনুপস্থিত ছিল। সর্বজনীন আয়ের প্রতিশ্রুতি চরিত্রগত ভাবে ভিন্ন, কারণ এই ক্ষেত্রে একটি সুস্পষ্ট নীতির কথা বলা হইতেছে। কৃষিঋণ মকুব যেমন একটি সুস্পষ্ট নীতি। কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি বা গ্রামীণ কর্মসংস্থান যোজনা আর একটি উদাহরণ। বস্তুত, মোদী যে ভঙ্গিতে এনরেগার বিরোধিতা করিতেন, তাহাকে ‘ইউপিএ জমানার ব্যর্থতার প্রমাণ’ হিসাবে রাখিবার ব্যঙ্গ করিতেন, তাহা তাৎপর্যপূর্ণ। অথচ তাহার বদলে তিনি উপহার দিলেন পথনির্দেশিকাহীন, নীতি-হীন কিছু শুষ্ক প্রতিশ্রুতি। কেন তাঁহার মেয়াদের শেষে দারিদ্র ফের রাজনৈতিক তর্কের কেন্দ্রে উপস্থিত, তাহা বুঝিতে আর বাকি থাকে কি?

UPA NDA India Central Government South Block BJP Congress Narendra Modi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy