Advertisement
E-Paper

সিবিআই তদন্ত হোক, কিন্তু ব্ল্যাকমেলের চেষ্টা কাঙ্খিত নয়

এই ট্রাডিশন কি সমানে চলবে! সিবিআইকে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করার প্রবণতা কি থামবে না? প্রশ্ন তুললেন জয়ন্ত ঘোষালব্যক্তিগত কারণে বেশ কিছু দিন দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলাম। দিল্লি ফিরতেই দেখি সিবিআই কর্তারা খুব ব্যস্ত। হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিংহের বাড়িতে সিবিআই হানা দিয়েছে এমন একটা দিনে যে দিন তাঁর মেয়ের বিয়ে।

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:০০

ব্যক্তিগত কারণে বেশ কিছু দিন দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলাম। দিল্লি ফিরতেই দেখি সিবিআই কর্তারা খুব ব্যস্ত। হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিংহের বাড়িতে সিবিআই হানা দিয়েছে এমন একটা দিনে যে দিন তাঁর মেয়ের বিয়ে। বেচারা মুখ্যমন্ত্রী সঙ্কটমোচন মন্দিরে মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলেন পুজো দিতে। আর এমন একটা দিনে সিবিআই বাহিনী ভৈরব গতিতে তাঁর বাড়িতে ঢুকে তল্লাশি শুরু করে দেয়। বীরভদ্র সিংহের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তার তদন্ত নিয়ে কোনও প্রশ্ন তুলছি না। অভিযোগ হচ্ছে, চম্বা জেলায় ১৫ মেগাওয়াটের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প চালু করতে গিয়ে তিনি আট কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন। ভাকামুল্লা চন্দ্রশেখর নামের ব্যবসায়ী সংস্থা ভেঞ্চার এনার্জি ওই ঘুষ দেয়। এবং ওই টাকা শুধু বীরভদ্র নন, তাঁর স্ত্রী ও ছেলেও পান বলে অভিযোগ। সিবিআই এই ঘটনার তদন্ত করতেই পারে। তিনি মুখ্যমন্ত্রী বলে কোনও ভাবে পার পেতে পারেন না। কিন্তু সিবিআই নামক সংস্থাটি তদন্তের নামে কোনও রাজনৈতিক নেতা বা দলকে ব্ল্যাকমেল করবে সেটাও কিন্তু কাঙ্খিত নয়। বিজেপি যখন বিরোধী দলে ছিল তখন সিবিআইয়ের রাজনৈতিক অপব্যবহারের খেসারত যিনি সব থেকে বেশি দিয়েছেন তিনি হলেন নরেন্দ্র মোদী স্বয়ং। এ ব্যাপারে অমিত শাহকেও রেহাই দেওয়া হয়নি। বিজেপি সে সময়ে অভিযোগ করত, সিবিআইয়ের আসল নাম হল ‘কংগ্রেস ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন’। ভোটের আগে একাধিক আন্তর্জাতিক পত্রপত্রিকাতেও সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে লেখালেখি হয়।

এখন বিজেপি ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু এমন ধারণা যাতে তৈরি না হয় যে শাসক দলে পরিণত হয়ে বিজেপি-ও এখন কংগ্রেসের পথে হাঁটছে। রাজস্থানের কংগ্রেস নেতা সচিন পাইলট সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সাংবাদিক বৈঠক করেন। ঠিক তার পরের দিনই বীরভদ্রের বাড়িতে সিবিআই হানা দেওয়ায় কংগ্রেস এখন অভিযোগের পাল্টা আঙুল তুলে বলতে শুরু করেছে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই সিবিআই ওই তল্লাশি চালিয়েছে। রাজনীতিতে যাকে বলা হয় ইটের বদলে পাটকেল।

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সারদা কেলেঙ্কারির সময়ে ওই একই অভিযোগ করেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের জনশ্রুতি, মমতার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর যোগসাজশ হওয়ায় বিজেপি সিবিআই তদন্ত লঘু করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ এখন এসে দাঁড়িয়েছে মদন মিত্রের জামিন হবে কি হবে না, এই পর্যায়ে। আবার উত্তরপ্রদেশে মুলায়ম ও মায়াবতীরাও ওই একই অভিযোগ করে আসছেন দীর্ঘ দিন। অতীতে তাজ করিডর তদন্তে কংগ্রেস মায়াবতীর বিরুদ্ধে সিবিআইকে লেলিয়ে দিয়েছিল। আয়ুর্বেদ-সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে মলুয়ামের বিরুদ্ধে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পরে একদা আমায় বলেছিলেন, সিবিআই প্রধানের সঙ্গে আমি কোনও বৈঠক করি না। সিবিআইকে কোনও তদন্তে ধীরে চলো বা তাড়াহুড়ো করে কারওকে অভিযুক্ত করার জন্য নির্দেশও দিয়ে থাকি না। সিবিআই একটি স্বাধীন সংস্থা, তাই সেটি স্বাধীন ভাবেই কাজ করবে। নরেন্দ্র মোদী এ কথা বললেও, অধিকাংশ বিরোধী দল এই তত্ত্বে বিশ্বাস করে না। বিশেষ করে যে ভাবে বীরভদ্রের মেয়ের বিয়ের দিন হানা দেওয়া হয়েছে তা দেখে অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, সিবিআই এক দিন আগে বা পরে ওই কাজ করলে কী এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেত?

এক সময়ে ইন্দিরা গাঁধীর বিরুদ্ধে শাহ কমিশন বসিয়েছিল জনতা সরকার। কিন্তু তার পরেও বিপুল ভোটে জিতে প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। জিতে আসার পরে কিন্তু জনতা সরকারের প্রধানমন্ত্রী মোরারাজি দেশাইয়ের ছেলে কান্তিভাই দেশাইয়ের পিছনে সিবিআই লেলিয়ে দেননি ইন্দিরা। উল্টে তৎকালীন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখ্যোপাধ্যায়কে ইন্দিরা গাঁধী বলেছিলেন, ভোটের আগে রাজনীতিকদের প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অনেক কিছু বলতে হয়। যাকে বলা হয় নির্বাচনী রেটোরিক্স। কিন্তু ভোটের পরে শাসক দলের প্রতিহিংসা নেওয়ার রাস্তা থেকে সরে আসা উচিত। জরুরি অবস্থায় ইন্দিরা গাঁধীর নির্দেশে অনেকে বিরোধী নেতাকে জেলে পোরা হয়েছিল। সম্ভবত সেই অভিজ্ঞতা থেকেই এই শিক্ষা পেয়েছিলেন তিনি। ইন্দিরা গাঁধীর যুক্তি ছিল, তুমি যখন হেরে গিয়েছ, তখন তুমি শাসক দলকে আক্রমণ করতে পার। কিন্তু ক্ষমতায় থাকার সময় বিরোধী দলকে পরিবর্তে উদারতা দেখানো উচিত। ইউপিএ-র প্রথম সরকার আসার পরে তেহেলকা কাণ্ডে অভিযুক্ত জর্জ ফার্নান্ডেজকে ক্লিনচিট দিয়েছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। যা নিয়ে খাস কংগ্রেসের মধ্যেই বিক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছিল। প্রাথমিক তদন্তে জর্জের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ না পাওয়ায় সিবিআই তদন্ত শুরু করার পক্ষপাতী ছিলেন না প্রণববাবু। কিন্তু কপিল সিব্বল ও হংসরাজ ভরদ্বাজের মতো নেতাদের চাপে ফের সিবিআই ওই তদন্তের মামলা শুরু করে।

প্রশ্ন হল, এই ট্রাডিশন কি সমানে চলবে! সিবিআইকে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করার প্রবণতা কি থামবে না? মনে রাখতে হবে, দ্বিতীয় ইউপিএ জামানায় তৎকালীন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী হিসাবে অশ্বিনীকুমার সিবিআই প্রধানকে তদন্তের বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার বিষয়টি সামনে এলে তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিতে হয়। সুতরাং সিবিআই তদন্তে প্রভাব ফেলার চেষ্টা হলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে, এই উদাহরণও রয়েছে। তাই দল যে সিবিআইকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে ব্যবহার করছে না, জনমানসে এই বার্তা দেওয়ার প্রশ্নে আরও সচেতন হতে হবে বিজেপি নেতৃত্বকে।

jayanta ghosal shahi samachar latest shahi samachar political gain blackmailing cbi blackmailing cbi cbi political gain cbi shahi samachar indira gandhi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy