Advertisement
E-Paper

আপন বেগে

আইএস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স (এসডিএফ)-এর বড় সহায় ছিল আমেরিকা। আইএস অধিকৃত বহু এলাকা ছিনাইয়া লইয়াছিল তাহারা। আমেরিকার সরিয়া আসিবার পরে কুর্দ নেতৃত্বাধীন এসডিএফ দুর্বল হইতে পারে, আইএস ফের সক্রিয়।

শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:২০

কথা রাখিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নানা দেশে মার্কিন তৎপরতা লইয়া ২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচারে বারংবার প্রশ্ন তুলিয়াছিলেন তিনি। আফগানিস্তান ও ইরাকে মার্কিন সেনার হস্তক্ষেপকে ব্যয়বহুল নির্বুদ্ধিতা বলিয়া কটাক্ষ করিয়াছিলেন। যুক্তি ছিল, মার্কিন সম্পদ ও শোণিত সাগরপারের মানুষের জন্য ব্যয় করা হইবে কেন! অতএব, ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ মন্ত্রে বুধবার সকালে উঠিয়া আচম্বিতে সিরিয়া হইতে অর্ধেক ও আফগানিস্তান হইতে সকল মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা হইল। হঠকারিতা সীমা ছাড়াইলে অতি নিকটজনও সরিয়া যাইতে বাধ্য হন। পত্রপাঠ ইস্তফা দিয়াছেন ট্রাম্পের স্বহস্তে নির্বাচিত প্রতিরক্ষা সচিব জেমস ম্যাটিস। প্রেসিডেন্টকে খোলা চিঠিতে তিনি লিখিয়াছেন: সমমনস্ক প্রতিরক্ষা সচিব বাছিয়া লওয়ার অধিকার প্রেসিডেন্টের আছে, তাঁহারও পদত্যাগের অধিকার আছে। আমেরিকার যাবতীয় বৈদেশিক দায়িত্ব নস্যাৎ করিবার সিদ্ধান্ত লইবার ফলে আপন দেশের অপর প্রতিষ্ঠানগুলির সহিত ট্রাম্পের সংঘাত আরও জোরদার হইবার আশঙ্কা। আশঙ্কা আপন পার্টির সদস্যদের সহিত সংঘাতেরও। ট্রাম্প-জমানায় আন্তর্জাতিক রাজনীতির অঙ্গনে আমেরিকার অস্থিরচিত্ততাই একমাত্র স্থিরতা।

আইএস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স (এসডিএফ)-এর বড় সহায় ছিল আমেরিকা। আইএস অধিকৃত বহু এলাকা ছিনাইয়া লইয়াছিল তাহারা। আমেরিকার সরিয়া আসিবার পরে কুর্দ নেতৃত্বাধীন এসডিএফ দুর্বল হইতে পারে, আইএস ফের সক্রিয়। শক্তি বাড়াইতে পারেন রাশিয়া ও ইরান সমর্থিত বাশার আল আসাদ। অন্য দিকে, আফগানিস্তানের সরকার হীনবল হইলে তালিবান জঙ্গিরা ক্ষমতা বাড়াইতে পারে। তাহা টের পাইয়াই হয়তো রবিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদে দুই কট্টর তালিবান-বিরোধীকে বসাইয়াছেন প্রেসিডেন্ট আশরফ গনি। ভারতের উদ্বেগ বাড়িল। প্রথমত, আমেরিকা সহসা পিছু হটিবার ফলে পশ্চিম এশিয়ায় নূতন অস্থিরতার সৃষ্টি এবং তালিবান জঙ্গিদের বাড়বাড়ন্ত, দুইই ভারতের স্বার্থের পরিপন্থী। দ্বিতীয়ত, ম্যাটিসই ট্রাম্প প্রশাসনের একমাত্র সচিব, যিনি দুই বার ভারত সফরে আসিয়াছিলেন। রাশিয়া হইতে অস্ত্র কিনিবার ফলস্বরূপ ভারতকে শাস্তি দিবার পরিকল্পনাও রদ করিয়াছিলেন তিনি। তাঁহার বিদায় দিল্লির পক্ষে সুখের নহে।

বিশ্বের নানা প্রান্তে আমেরিকার সামরিক হস্তক্ষেপ লইয়া রাজনৈতিক আপত্তি বহু দিনের। কিন্তু অগ্রপশ্চাৎ না ভাবিয়া রণাঙ্গন ত্যাগ করিলে তাহা অবিবেচকের ন্যায় সিদ্ধান্ত, এবং তাহার ফলে লাভের অধিক ক্ষতিই হইয়া থাকে। প্রতিটি ক্রিয়াই নির্দিষ্ট পদ্ধতি অবলম্বন করিয়া চলে। যে মতবাদে এই সকল ভাবিবার দায় নাই, তাহাই আগমার্কা ‘ট্রাম্পিজ়ম’। হঠকারিতা যাহার স্বধর্ম। যে হঠকারী ট্রাম্পবাদের তাড়নায় সেনা অপসারণও বিপজ্জনক হইয়া উঠে! কূটনীতি তথা নীতি নামক বস্তুটি ট্রাম্পের মনোগহনে কখন কোন পথে ধাবিত হয়, তাহার খোঁজ বোধ করি তাঁহার নিজেরও জানা নাই। এবং সেই অ-তুলনীয় উন্মাদনার সহিত তাল মিলাইতে না পারিলে সরিয়া যাইতে হইবে— ইহাই সরল বিধান। আলাপের পরিসর নাই, শ্রীমুখ হইতে বাণী নির্গত হইলে তাহা শিরোধার্য করিতে হয়। তাহার পর, মহাকাল।

US Troops Syria Afghanistan Donald Trump
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy