Advertisement
E-Paper

একে একে

মুশকিল হইল, কোনও দেশের বিদেশনীতির সঙ্গতি বা সুদূরপ্রসারী গুরুত্ব তো কেবল এক ব্যক্তির নিজস্ব ব্যক্তিগত তাগিদের মাধ্যমে নিশ্চিত করা য়ায় না।

শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৭ ০০:১১

কো নও উত্তরসূরি যখন পদে পদে প্রমাণ করিবার চেষ্টা করেন যে তিনি পূর্বসূরির অপেক্ষা আলাদা, তখন তাঁহার স্বাভাবিক প্রশাসনিক বোধবুদ্ধির উপর একটি অন্য ভার জমিয়া যায়। নিজেকে প্রমাণের ভার। ডোনাল্ড ট্রাম্প পদে পদে বুঝাইতে ব্যস্ত তিনি প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ওবামার অপেক্ষা কতটাই আলাদা। পরিবর্তনের এই বিপুল তাগিদ মাথায় না থাকিলে কেহ প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ লইবার পরের দিনই ওবামাকেয়ার বা স্বাস্থ্যবিমা সংক্রান্ত বিরাট গুরুত্বপূর্ণ বিলের সংশোধন ঘোষণা করেন না। ট্রাম্পের পিছনে এতখানি তাড়া বলিয়াই খুব ভাবনাচিন্তার অবকাশ না দিয়াই ওবামার আলে স্বাক্ষরিত মার্কিন দেশের কিউবা নীতিটি ত্যক্ত হইল। নীতি পরিবর্তনের ফলে কী কী ধরনের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সুবিধা বা অসুবিধা হইবে, সে সমস্ত খোলসা করিয়া আলোচনাও হইল না, কিন্তু কিউবার ‘মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনমন’-এর যুক্তিতে আমেরিকা-কিউবা যাতায়াত, বাণিজ্য, আদানপ্রদান সবই আপাতত স্থগিত হইল। ট্রাম্পের উদ্দেশ্য সফল। ওবামা যাহা করিয়াছিলেন, তিনি তাহা বাতিল করিলেন। এইটুকু বার্তা দেওয়াই তাঁহার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল।

মুশকিল হইল, কোনও দেশের বিদেশনীতির সঙ্গতি বা সুদূরপ্রসারী গুরুত্ব তো কেবল এক ব্যক্তির নিজস্ব ব্যক্তিগত তাগিদের মাধ্যমে নিশ্চিত করা য়ায় না। এতখানি ব্যক্তিকেন্দ্রিক অ্যাজেন্ডা দেশের মৌলিক স্বার্থগুলিকে বিবেচনার স্তরে ঠিক ভাবে আনিতেই দেয় না। মার্কিন দেশ এখন ঠিক এই সমস্যায় হাবুডুবু খাইতেছে। দীর্ঘ পঞ্চাশ বৎসরের সম্পর্কহীনতার পর বারাক ওবামার আমলে যখন ‘কমিউনিস্ট’ কিউবার সহিত মার্কিন নাগরিকদের একটি খোলাখুলি সম্পর্ক সূচিত হইল, অস্তমিত কমিউনিজমের দেশটিতে তাঁহারা স্বাধীন ভাবে আসা-যাওয়ার অধিকার পাইলেন, দুইটি অতি ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী দেশের মধ্যে অতি স্বাভাবিক আদানপ্রদানের রাস্তা খুলিয়া গেল, তখন যেন খোলা সুবাতাস টের পাওয়া গিয়াছিল। দুই দেশের মধ্যে এমনিতেই বেআইনি পণ্য ও মানুষের চলাচল চলিতে থাকে, আইনি পথে সেই চলাচল ঘটিতে পারিলে রাষ্ট্রেরও সুবিধা।

সেই সব স্বার্থ ট্রাম্পের নূতন প্রতিরোধক নীতিতে ব্যাহত হইবে, ইহাই এখন আশঙ্কা। কিউবা দরিদ্র দেশ, সেখান হইতে সহজগম্য ফ্লোরিডা উপকূলে সাঁতরাইয়া চলিয়া আসার রেওয়াজ আগেও চলিত, আবারও চলিবে। আইনি চলাচলের সুযোগ বেআইনি পথগুলিকে বন্ধ করিতে পারিত। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেই সুযোগ রইল না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক দিকে বেআইনি আগমনকারীদের মার্কিন ভূমি হইতে ঠেকাইয়া রাখিতে চাহেন, অন্য দিকে তাঁহার অদূরদৃষ্টি দিয়া বেআইনি আগমন বাড়াইয়া দিতে চাহেন। এই পরস্পরবিরোধী নীতি-দর্শন লইয়া প্রেসিডেন্ট সম্ভবত ভাবিত নন, অন্যরা তাঁহাকে ভাবাইবে, এমন সম্ভাবনাও নাই, কেননা চাটুকার ছাড়া কোনও নীতিবিশারদ কিংবা উপদেষ্টায় তিনি বিশ্বাস করেন না। তবে নানা পরস্পরবিরোধিতার মধ্যে একটি কাজ অবশ্য ট্রাম্প বেশ দক্ষ ও সুষ্ঠু ভাবে করিতেছেন। মার্কিন সমাজ-রাজনীতিতে খোলা হাওয়া বহিবার জানলাগুলি একে একে বন্ধ করিতেছেন।

Donald Trump Cuba US International Affairs ডোনাল্ড ট্রাম্প কিউবা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy