Advertisement
E-Paper

রাম মন্দির ভরসা

নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসা ইস্তক যে হিসাবে জাতীয় আয় মাপা হয়, তাহার ‘ব্যাক সিরিজ়’ প্রকাশ করিল জাতীয় নমুনা সমীক্ষা সংস্থার সাব-কমিটি। তাহাতেই দেখা যাইতেছে, ২০০৬-০৭ অর্থবর্ষে ভারতে গ্রস ভ্যালু অ্যাডেড (জিভিএ) বা মোট যুক্তমূল্যের বৃদ্ধি-হার পৌঁছাইয়াছিল ১০.০৮ শতাংশে।

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৮ ০০:০০
নরেন্দ্র মোদী (বাঁ দিকে) এবং মনমোহন সিংহ। নিজস্ব চিত্র।

নরেন্দ্র মোদী (বাঁ দিকে) এবং মনমোহন সিংহ। নিজস্ব চিত্র।

হিসাবের কড়ি জুমলায় খায় না। সুদীপ্ত মান্ডলের নেতৃত্বাধীন কমিটির রিপোর্ট আসিয়া নরেন্দ্র মোদীর হাতের শেষ তাসটিও কা়ড়িয়া লইয়া গেল। মনমোহন সিংহের সরকার তবে অর্থনীতির খেলাতেও তাঁহাকে দশ— আরও নিখুঁত হিসাবে বলিলে, ১০.০৮— গোল মারিয়া গিয়াছে। নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসা ইস্তক যে হিসাবে জাতীয় আয় মাপা হয়, তাহার ‘ব্যাক সিরিজ়’ প্রকাশ করিল জাতীয় নমুনা সমীক্ষা সংস্থার সাব-কমিটি। তাহাতেই দেখা যাইতেছে, ২০০৬-০৭ অর্থবর্ষে ভারতে গ্রস ভ্যালু অ্যাডেড (জিভিএ) বা মোট যুক্তমূল্যের বৃদ্ধি-হার পৌঁছাইয়াছিল ১০.০৮ শতাংশে। এক যুগ পূর্বের আয়বৃদ্ধির হিসাব হঠাৎ আজ কষা হইতেছে কেন? তাহার কারণ, যে হেতু ২০১৫ সাল হইতে আয়ের হিসাব কষিবার ‘বেস ইয়ার’ ২০০৪-০৫ সাল হইতে বদলাইয়া ২০১১-১২ সাল হইয়াছে, ফলে তাহার পূর্বের বৎসরগুলির পরিসংখ্যানের সহিত নূতন পরিসংখ্যান আর তুলনীয় থাকে নাই। তুলনা করা অতি জরুরি, নচেৎ অর্থনীতি কোন পথে চলিতেছে, তাহা বোঝা যাইবে কী উপায়ে? সেই কারণেই ব্যাক সিরিজ়— পূর্বের বৎসরগুলির পরিসংখ্যানকে তুলনীয় করিয়া তুলিবার ব্যবস্থা। তাহাতেই দেখা যাইতেছে, শুধু একটি নির্দিষ্ট বৎসরে নহে, ইউপিএ এক এবং দুইয়ের নিকট প্রায় নিয়মিত ভাবে পর্যুদস্ত হইয়াছে নরেন্দ্র মোদীর জমানা। তাহারও অধিক তাৎপর্যপূর্ণ, যে সময়কালটিকে ‘ইন্ডিয়া শাইনিং’-এর মোড়কে বেচিতে চাহিয়াছিল বিজেপি, সেই অটলবিহারী বাজপেয়ীর শাসনকালের তিন বৎসর বৃদ্ধির হার সাড়ে পাঁচ শতাংশের গণ্ডি পার হয় নাই। তাহার মধ্যে দুই বৎসর এই হার ছিল চার শতাংশেরও কম। অর্থাৎ, অতীত হউক বা বর্তমান, বিজেপির আর্থিক বৃদ্ধির আখ্যানে জুমলাই মুখ্য।

কমিটির রিপোর্টটিকে সরকারি মান্যতা পাইতে হইলে আরও দুইটি গণ্ডি অতিক্রম করিতে হইবে। লোকসভা নির্বাচনের পূর্বে তাহা ঘটিবে কি না, আশঙ্কা থাকিতেছে। কিন্তু, ঝুলি হইতে বাঘ বাহির হইয়া গিয়াছে। দুনিয়াব্যাপী আর্থিক মন্দার ধাক্কা সামলাইয়াও দ্বিতীয় ইউপিএ-র আমলে বৃদ্ধির হার প্রায় সাড়ে সাত শতাংশের কাছাকাছি ছিল। আর, গোটা দুনিয়া যখন ছন্দে ফিরিয়াছে, তখন ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে ভারতে বৃদ্ধির হার ৬.৭ শতাংশ। দুইটি কথা স্পষ্ট। এক, ছাতিতে চাপড় মারিতে জানিলেই অর্থনীতির কান্ডারি হওয়া যায় না; এবং দুই, গুজরাত মডেলের চুয়াইয়া পড়া অর্থনীতির তত্ত্বে সাধারণ মানুষের লাভ তো হয় নাই বটেই, অর্থনীতিরও লাভ হয় নাই। এক দিকে তাঁহারা দেশের আর্থিক স্বাস্থ্য লইয়া ছেলেখেলা করিয়াছেন। ডিমনিটাইজ়েশন হইতে জিএসটি-র বেহিসাবি প্রবর্তন, সবেতেই অর্থনীতির অপূরণীয় ক্ষতি হইয়াছে। আর অন্য দিকে, ইউপিএ আমলের উত্তরাধিকারকে অস্বীকার করিবার অত্যুৎসাহে তাঁহারা একশত দিনের কাজ হইতে গণবণ্টন ব্যবস্থা, সব কিছুরই মেরুদণ্ড ভাঙিয়া দিয়াছেন। সামাজিক উন্নয়নের প্রসঙ্গ উঠিলেই ভক্তরা এত দিন জাতীয় আয় বৃদ্ধির যুক্তিতে চুপ করাইয়া দিতেন। ব্যাক সিরিজ় আসিয়া সেই যুক্তিও কাড়িয়া লইল। বর্ধিত তেলের দামের যুক্তিও ধোপে টিকিবে না, কারণ ইউপিএ জমানায় সেই বিপদটিও তীব্রতর ছিল। তাহা হইলে, নরেন্দ্র মোদী কোন যুক্তি পেশ করিবেন? না কি, অর্থনীতি বিপাকে পড়িলে রাম মন্দির ভরসা?

Economy Gross Value Added GVA Narendra Modi Manmohan Singh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy