Advertisement
E-Paper

কর্মীদের অসন্তোষ এ ভাবে বাড়িয়ে প্রশাসন কিন্তু নিজেরই ক্ষতি করছে

পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মীদের সঙ্গে যে বঞ্চনাই হচ্ছে, সে কথা অনস্বীকার্য। কেন্দ্রীয় হারে মহার্ঘ ভাতার দাবিতে সরকারের বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে কর্মীদের। দেশের প্রায় সব রাজ্যে সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হয়ে গিয়েছে।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৮ ০০:৪৫
পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মীদের সঙ্গে যে বঞ্চনাই হচ্ছে, সে কথা অনস্বীকার্য।  —ফাইল চিত্র।

পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মীদের সঙ্গে যে বঞ্চনাই হচ্ছে, সে কথা অনস্বীকার্য। —ফাইল চিত্র।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী পদে বসার পর থেকে এ রাজ্যে প্রশাসনিক কাজকর্মের গতি আগের জমানার চেয়ে ঈষৎ হলেও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কথা সম্ভবত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধীরাও স্বীকার করবেন।

কেন বাড়ল প্রশাসনের গতি? এ প্রশ্নের নানা উত্তর হতে পারে। কেউ বলতে পারেন, গোটা রাজ্যে ছুটে বেড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী নজরদারি চালান, তাই গতি বেড়েছে। কেউ বলতে পারেন, রাজ্য সচিবালয়ের একটা ক্ষুদ্র সংস্করণকে সঙ্গে নিয়ে ব্লক স্তর পর্যন্ত পৌঁছে যান মুখ্যমন্ত্রী, তাই গতি বেড়েছে। কেউ বলতে পারেন, ভয়ে গতি বেড়েছে। কেউ বলতে পারেন, ভক্তিতে।

প্রশাসনিক কাজের গতি কোন কারণে বাড়ল, তার অনুসন্ধান জরুরি ঠিকই। কিন্তু যাঁদের প্রত্যক্ষ সক্রিয়তায় প্রশাসন অধিকতর সচল হল, তাঁদের অবদানের স্বীকৃতিটাও সমান ভাবে জরুরি। তাঁরা হলেন সরকারি কর্মীরা। তর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বার্থে মেনে নেওয়া যাক যে, বামফ্রন্ট মন্ত্রিসভার চেয়ে তৃণমূল মন্ত্রিসভার কর্মতৎপরতা বেশি, সদিচ্ছাও বেশি। কিন্তু মন্ত্রিসভার সে তৎপরতা বা সদিচ্ছার বাস্তব রূপায়ণটা তো মন্ত্রীরা স্বহস্তে ঘটান না। রূপায়ণটা তো সরকারি কর্মীরাই ঘটান। তাই কর্মীদের চাহিদা, প্রয়োজনীয়তা বা দাবিদাওয়ার বিষয়েও সরকারের তরফে সমপরিমাণ তৎপরতা থাকা উচিত। কিন্তু তেমনটা ঘটছে না। যে কর্মীদের কাঁধে ভর করে সরকারি কাজের গতি বাড়ানো হল, সেই কর্মীদের ন্যায্য প্রাপ্য মেটানোর প্রশ্ন এলেই সরকার শ্লথ হয়ে যাচ্ছে। কর্মীরা মহার্ঘ ভাতা চাইলে মামলা এক আদালত থেকে অন্য আদালত, সেখান থেকে আর এক আদালতে গড়াচ্ছে। কর্মীরা বেতন কমিশনের সুপারিশ জমা পড়ার অপেক্ষায় থাকলে বেতন কমিশনের মেয়াদ ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে, সাড়ে তিন বছরে গিয়ে ঠেকছে। অতএব সরকারের গতি যতই বাড়ুক, কর্মীদের জীবনের মানোন্নয়নের গতি রুদ্ধ হয়ে গিয়েছে।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মীদের সঙ্গে যে বঞ্চনাই হচ্ছে, সে কথা অনস্বীকার্য। কেন্দ্রীয় হারে মহার্ঘ ভাতার দাবিতে সরকারের বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে কর্মীদের। দেশের প্রায় সব রাজ্যে সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রতিকতম বেতন কমিশনটা কিছুতেই সুপারিশ জমা দিচ্ছে না। গত তিন বছর ধরে বার বার কমিশনের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: বেতন কমিশনের মেয়াদ আরও ছ’মাস বাড়িয়ে দিল রাজ্য, ক্ষুব্ধ তৃণমূলের সংগঠনও

এই পরিস্থিতির পরিবর্তন কিন্তু দরকার। বঞ্চনার অভিযোগ যে ভাবে তীব্র হচ্ছে কর্মীদের মধ্যে, তাতে কিন্তু ক্ষতিই হচ্ছে সরকারের। কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে, ফলে কাজের অনুপ্রেরণা কমছে, কমছে তৎপরতাও। নিজের স্বার্থেই তাই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উচিত, যত দ্রুত সম্ভব টালবাহানা থেকে বেরিয়ে আসা, কর্মীদের দাবিদাওয়া যতটা সম্ভব এবং যত দ্রুত সম্ভব মিটিয়ে দেওয়া। না হলে ফলাফল কী হতে পারে, সে বিতর্কে যাচ্ছি না। কিন্তু সরকারি কর্মীদের ক্ষতিবৃদ্ধি যে বেনজির স্তরে পৌঁছতে পারে, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই।

Newsletter Anjan Bandyopadhyay অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় Pay Commission State Government BJP TMC Congress
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy