মাসকয়েক আগে লন্ডনে একটি ন’বছর বয়সি মেয়ে প্রবল শ্বাসকষ্টে মারা গেল। তার ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ লেখা হয়েছে ‘বায়ুদূষণ’। সারা বিশ্বে এই প্রথম কারও মৃত্যুর কারণ হিসেবে সরাসরি বায়ুদূষণকে দায়ী করা হল। বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষ এখন এমন জায়গায় বাস করছেন, যেখানে বায়ুদূষণের মাত্রা সহনসীমার অনেক উপরে। বিশেষ করে কলকাতা, দিল্লি, মুম্বইয়ের মতো শহরে।
শহরাঞ্চলে যানবাহনজনিত বায়ুদূষণ কমানোর মূলত তিনটি উপায় আছে— ১) গণপরিবহণ ব্যবস্থা বাড়ানো; ২) ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমানো; এবং ৩) পেট্রল ও ডিজ়েল গাড়ির সংখ্যা কমিয়ে ব্যাটারিচালিত বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার বহুগুণ বাড়ানো। শেষের বিকল্পটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ভারতে ৮০% যাত্রী সড়ক পরিবহণে যাতায়াত করেন। এর মধ্যে বড় গাড়ি যেমন আছে, তেমনই ব্যক্তিগত গাড়ি, ট্যাক্সিতে যাতায়াত করা মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। বায়ুদূষণকে নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে পেট্রল বা ডিজ়েলচালিত গাড়ির ব্যবহার কমাতেই হবে।
পেট্রল বা ডিজ়েল গাড়ি চলে ইন্টারনাল কমবাসচন ইঞ্জিন দ্বারা। এই ইঞ্জিনে তেল বা গ্যাস দহন করে শক্তি উৎপন্ন করা হয়, যার সাহায্যে গাড়িটি চলে। এর ফলে যে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য উৎপন্ন হয়, তা ধোঁয়ার আকারে নির্গত হয়ে বাতাসে মেশে। এতে কঠিন ভাসমান কণা, তরল ড্রপলেট ও কিছু দূষিত গ্যাস থাকে, যেগুলো বায়ুদূষণ ঘটায়। অন্য দিকে, বৈদ্যুতিক গাড়ি চলে মোটরের সাহায্যে, এই মোটর বিদ্যুৎশক্তি পায় রিচার্জেবল ব্যাটারি থেকে। তাই বৈদ্যুতিক গাড়ি বায়ুদূষণ করে না।
ভারতে এখন বাণিজ্যিক ভাবে তিন রকমের বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি হচ্ছে— চার চাকার গাড়ি, যেমন বাস; তিন চাকার অটো বা ই-রিকশা; এবং দু’চাকা স্কুটার। পুণে, মুম্বই বা শিমলার মতো কলকাতা শহরেও বৈদ্যুতিক বাস পরীক্ষামূলক ভাবে চলছে। গত দু’বছর ধরে ৮০টি বৈদ্যুতিক বাস কলকাতার বিভিন্ন রুটে চালানো হচ্ছে। সামনে থেকে এই বাস দেখলে সাধারণ বাসের সঙ্গে কোনও তফাত নেই। কিন্তু পিছন থেকে দেখলে অবাক হতে হয়— বাস চলছে, অথচ কালো ধোঁয়া বেরোচ্ছে না। এই শহরের মানুষের কাছে এটা নতুন অভিজ্ঞতা।
কলকাতায় প্রতি দিন ৫০০০ ডিজ়েল বাস রাস্তায় নামে— সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে। ৮০টি বৈদ্যুতিক বাস সেই তুলনায় খুবই নগণ্য। তবু নিঃসন্দেহে শুভ সূচনা। আগামী পাঁচ বছরে বৈদ্যুতিক বাসের সংখ্যা দ্রুত বাড়িয়ে অন্তত ২৫০০ করা, এবং ডিজ়েল বাসের সংখ্যা ২৫০০-য় নামিয়ে আনার পরিকল্পনা হওয়া উচিত। এবং, এই বদলের প্রক্রিয়াটা চালিয়ে যেতে হবে, যত দিন না রাস্তায় সব বাসই বৈদ্যুতিক হয়। কাজটা খুব কঠিন নয়। ২০০৭-০৮ সালে যে ভাবে টু-স্ট্রোক অটো বন্ধ করে কলকাতায় ফোর-স্ট্রোক অটো চালু করা হয়েছিল, সেই পদ্ধতিতেই করা যেতে পারে। একই সঙ্গে শহরের বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক বাসের ব্যাটারি রিচার্জ করার পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে।