কর্নাটক হাই কোর্ট ২০২২-এর ১০ ফেব্রুয়ারি নির্দেশিকা জারি করে জানায়, ইউনিফর্মের সঙ্গে হিজাব বা গেরুয়া শাল পরে, কিংবা ধর্মীয় পতাকা নিয়ে পডুয়ারা রাজ্যের কলেজগুলিতে ক্লাস করতে পারবেন না, যত দিন না বিষয়টি নিয়ে আদালতে ফয়সালা হচ্ছে। কোন ঘটনাক্রমে এই নির্দেশিকা এল, কর্নাটকের বহু জায়গায় কী ভাবে ফেটে পড়ল হিংসা, আর নিষেধাজ্ঞার নৈতিক প্রভাব সম্পর্কে বিস্তর লেখা হয়েছে। রাজ্যে হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসনের এটাই কিন্তু একমাত্র উদাহরণ নয়। ধর্মান্তরণ-বিরোধী বিল থেকে হিন্দু ধর্মীয় উৎসবে মুসলমানদের দোকান দিতে না দেওয়া, স্কুলের পাঠ্যক্রমে ভগবদ্গীতাকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব, গত কয়েক মাসে কর্নাটকে ঘটে গিয়েছে এমন অনেকগুলো ঘটনা, যার প্রতিটির মধ্যেই মুসলমান-বিদ্বেষের ছাপ অতি স্পষ্ট। প্রশ্ন হল, কেন?
এই প্রশ্নের একটা উত্তর হল, কর্নাটক গোটা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। সাম্প্রতিক কিছু বছরে, দেশের বহু জায়গাতেই হিংসা, নজরদারি এবং নানা ধরনের অসহিষ্ণুতার ঘটনা বেড়েই চলেছে। মধ্যপ্রদেশে তা ধর্মান্তরণ-বিরোধী আইন, উত্তরপ্রদেশে গোহত্যা-গুজব, অসমে জাতীয় নাগরিকপঞ্জিকে কেন্দ্র করে ডি-ভোটারের নামে মূলত মুসলমানদের হেনস্থা করা, পশ্চিমবঙ্গে এসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হুমকি দিয়ে যাওয়া যে রাজ্যে নয়া নাগরিকত্ব আইন চালু হবেই— যে দিকেই তাকাবেন, মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ রাষ্ট্রীয় হিংস্রতা চলছে। এত দিনে সবাই জানি, বিশ্ব জুড়েই অসহিষ্ণুতায় সমাজমাধ্যমের কী বিরাট অবদান! প্রায় প্রতিটি নাগরিকের হাতেই এখন প্রচারের নিজস্ব বিশাল চোঙা আছে। তার মাধ্যমে অনলাইনে অসহিষ্ণু মতপ্রকাশ মাত্রেই নিজগোষ্ঠীর উল্লাস, তৎক্ষণাৎ শিরায় শিরায় চেগে ওঠে ডোপামিন।
যে সব কারণে গোটা দেশে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, কর্নাটকেও সেই কারণগুলি বর্তমান। প্রথমত, বর্তমান সরকারের প্রধান বিরোধীরাই তো নখদন্তহীন। কংগ্রেস অস্তিত্বের সঙ্কটে ভুগছে— কর্নাটকেও তার সাংগঠনিক শক্তিক্ষয় হয়েছে বহুলাংশে। বিরোধী রাজনীতির উপর সাধারণ মানুষের ভরসাও কমেছে। রাষ্ট্র যদি সংখ্যালঘুকে নিপীড়ন করে, তবে বিরোধীরা তার যথাসাধ্য প্রতিরোধ করবেন, এই আশা সংখ্যাগরিষ্ঠ বা সংখ্যালঘু, কারও নেই— সরকারেরও নেই। ফলে, সংখ্যালঘুকে বিপন্ন করার ‘ঝুঁকি’ নিতান্ত কম।