সোভিয়েট ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ হওয়ার পর নবগঠিত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিনের বিরুদ্ধে সাংবিধানিক আদালতে যান পার্টি সদস্যরা। এর পর, ১৯৯২-এর জুলাই থেকে পাঁচ মাস পার্টির বিরুদ্ধেই এক বিচারপর্ব চলে, তা সরাসরি সম্প্রচারিত হয়, আখ্যা পায় ‘রাশিয়ান নুরেমবার্গ’। এই রাজনৈতিক বিচারে যদিও কারও বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ ছিল না। শেষতম পার্টিপ্রধান মিখাইল গর্বাচভ বলেন, এখানে ‘নির্দিষ্ট ব্যক্তি’র ‘নির্দিষ্ট অপরাধের বিচার’ হচ্ছে না। “যে পার্টি নেতারা সত্যিই অপরাধী তাঁরা প্রয়াত হয়েছেন। কেবলমাত্র ইতিহাসই তাঁদের বিচার করতে পারে।”
আজ সোভিয়েট পতনের ৩০ বছরে ইতিহাসের বিচার যদি দেখি? কথা ছিল, রাশিয়ার সোভিয়েট অতীত থেকে মুক্তি এবং আপাদমস্তক গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির প্রসার। জমানা পতনের অত্যুৎসাহে গোড়াতেই জাতীয় পতাকা বা সঙ্গীতের মতো চিহ্ন পাল্টে যায়, কিন্তু ক্রমশ সোভিয়েট গরিমাতেই আশ্রয় নেয় রুশ রাজনীতি। প্রেসিডেন্ট পুতিন বোঝেন, দেশকে বিশ্বশক্তি বানাতে হলে নস্টালজিয়াই শ্রেষ্ঠ পথ, সেই আমলেই তাঁরা শিখরে পৌঁছন। অতএব, ইতিহাসের কিছু ‘গোলমাল’ স্বীকার করেও তিনি ‘নিজেদের উপর অপরাধবোধের বোঝা চাপতে দিতে’ রাজি নন। স্তালিনের অপরাধের হিসাব না নিয়ে তাঁকে ‘গৌরবোজ্জ্বল সোভিয়েট অতীত’-এর বিপ্রতীপে রাখতে বলেন। ইয়েলৎসিন আমলের উনিশ শতকীয় জাতীয় সঙ্গীত বদলে ৮৭ বছর বয়সি সের্গেই মিখালকোভ-কে (সোভিয়েট জাতীয় সঙ্গীতের সৃষ্টিকর্তা) দিয়েই গান লেখানো হয়। অর্থাৎ যা কথা দেওয়া হয়েছিল, কিছুই রাখা হয়নি।
রাখা হয়নি, না কি রাখা যায়নি? ইতিহাস ঘাঁটলে মালুম হবে, একনায়কতন্ত্রী জমানা থেকে যে গণতন্ত্র জন্ম নেয়, সেখানে সুবিচার হয় তৎক্ষণাৎ আসে, নয়তো আসেই না। কমিউনিস্ট অভিজাতবর্গ ১৯৯১-এর ধাক্কা কাটিয়ে ফেলেছিল, ইয়েলৎসিনের সরকার প্রাক্তন কমিউনিস্টদের নিয়েই গঠিত হয়, আইনি বাধা না থাকায় তাঁদের ক্ষমতায় ফিরে যেতেও অসুবিধা ছিল না। ইয়েলৎসিন নিজেই
কেজিবি-র উত্তরসূরি নজরদার পুলিশবাহিনী গঠন করেন। ১৯৯২-এ পার্টি ও কেজিবি কর্তাদের সরকারি পদে আসীন হওয়া ঠেকাতে বিল আসে, যা খারিজ হয়ে যায় পার্লামেন্টে। তত দিনে রাজনীতি, সংবাদমাধ্যম ও অর্থনীতির উপর আবারও সার্বিক দখলদারি তৈরি করে ফেলেছে ভূতপূর্ব ব্যবস্থা।