Advertisement
E-Paper

শুরুর শেষ, নাকি শেষের শুরু?

ছ’দিন ধরে মুম্বইয়ের দিকে হাঁটছিল কৃষক মিছিল। দাবি কৃষিঋণ মকুবের, দাবি অরণ্যের জমির অধিকার অরণ্যবাসীর হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার,দাবি ফসল ফলানোর খরচের অন্তত দেড়গুণ অর্থ ন্যূনতম সহায়ক মূল্য হিসেবে দেওয়ার, দাবি লাঙ্গলের মালিককে জমির মালিক করার।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৮ ০০:২৭
আজাদ ময়দানে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন প্রতিবাদী কৃষকেরা। ছবি: রয়টার্স।

আজাদ ময়দানে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন প্রতিবাদী কৃষকেরা। ছবি: রয়টার্স।

একটা দ্বিমুখী জয় সূচিত হল। কৃষক বিক্ষোভে কম্পন অনুভূত হচ্ছিল গোটা মহারাষ্ট্রে। আর সুদীর্ঘ রক্তাভ মিছিলের দিকে একদৃষ্টে চেয়ে ছিল গোটা দেশ। অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মিছিল, শাসককে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছোড়ার মিছিল। অত্যন্ত স্বাভাবিক কারণেই সঙ্ঘাতের আশঙ্কা ছিল। কিন্তু এই বিপুল বিক্ষোভের কর্মসূচি কোনও অপ্রীতিকর বাঁক নিল না, সরকারের সঙ্গে নাগরিকের কোনও সঙ্ঘাত ঘটল না। নির্বিঘ্নে মিটল কর্মসূচি, মসৃণ ভাবে সাফল্য পেয়ে গেলেন আন্দোলনকারীরা, সোল্লাসে প্রত্যাহৃত হল বিক্ষোভ সমাবেশ।

ছ’দিন ধরে মুম্বইয়ের দিকে হাঁটছিল কৃষক মিছিল। দাবি কৃষিঋণ মকুবের, দাবি অরণ্যের জমির অধিকার অরণ্যবাসীর হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার,দাবি ফসল ফলানোর খরচের অন্তত দেড়গুণ অর্থ ন্যূনতম সহায়ক মূল্য হিসেবে দেওয়ার, দাবি লাঙ্গলের মালিককে জমির মালিক করার।

যে মুহূর্ত থেকে মুম্বইয়ে ঢুকতে শুরু করেছিল মিছিল, সেই মুহূর্ত থেকে যেন শিহরণ খেলে গিয়েছিল গোটা দেশের শিরায় শিরায়। ক্রমশ বাড়ছিল জমায়েতের বহর। নৈতিক এবং সক্রিয় সমর্থন প্রকাশ করে পথে নামছিলেন ছাত্র-যুব। গ্রাম-গ্রামান্তর থেকে, খরাক্লিষ্ট ভূভাগ থেকে, মহারাষ্ট্রের নানা প্রান্ত থেকে পায়ে হেঁটে মুম্বইতে পৌঁছনো জনতার দিকে নানা ভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছিলেন তাঁদের মুম্বইবাসী সাধারণ মধ্যবিত্ত সহ-নাগরিকরা। নিখরচায় খাবার পৌঁছে দিচ্ছিলেন মুম্বইয়ের বিখ্যাত ডাব্বাওয়ালারা।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

হতদরিদ্র, নিরন্ন কৃষকের আন্দোলনকে ঘিরে সমাজের প্রায় সব স্তরে এমন স্বতঃস্ফূর্ত জনাবেগ কিন্তু খুব কম অবকাশেই দেখা গিয়েছে এ দেশে। এমন এক পরিস্থিতিতে নতিস্বীকার করা ছাড়া অন্য কোনও পথ সম্ভবত খোলা ছিল না দেবেন্দ্র ফডণবীসের সরকারের সামনে।

তবে নতিস্বীকারই বা বলব কেন? কেন বলতে পারব না যে, কৃষকের দাবি-দাওয়ার প্রতি উপযুক্ত সহানুভূতিই দেখাল সরকার?

প্রায় এক সপ্তাহ ধরে গোটা দেশের নজর নিজেদের দিকে টেনে রাখলেন যাঁরা, রক্তিম স্রোতের রূপ ধরে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী ভাসিয়ে দিলেন যাঁরা, তাঁরা শুধুই কৃষক নন, শুধুই সরকারের চ্যালেঞ্জারও নন। তাঁরা এ দেশের নাগরিকও। সরকার তো নাগরিকের জন্যই। জীবন-জীবিকার দাবি নিয়ে যখন বিপুল সংখ্যক নাগরিক পথে নামছেন এবং প্রত্যয়ের বহরে সম্ভ্রম জাগাচ্ছেন, তখন সে সব দাবি মেনে নেওয়াই তো সরকারের কর্তব্য। সরকার সে কর্তব্য যে সুষ্ঠুভাবে পালন করল, তা অস্বীকার করার অবকাশও এই মুহূর্তে কম। ফডণবীস মন্ত্রিসভার সদস্য গিরিশ মহাজন মিছিলকে মুম্বইতে স্বাগত জানালেন, সরকার কৃষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসল, সরকার ঘোষণা করল সব দাবি মেনে নেওয়া হচ্ছে। একে নতিস্বীকার হিসেবে না দেখে শাসকের সংবেদনশীলতা হিসেবেও তো দেখা যেতে পারে।

আরও পড়ুন: দাবির সঙ্গে মনও জিতল লাল মিছিল

সংবেদনশীলতার মাপকাঠিতে সরকার হয়ত উত্তীর্ণ। কিন্তু মহারাষ্ট্রে কৃষকের আন্দোলন যে সাফল্যের মুখ দেখল, তা কিন্তু কালোত্তীর্ণ। মৌখিক আশ্বাস নিয়ে ফিরে যাননি কৃষক এ বার। সরকার লিখিত ভাবে জানিয়েছে, কৃষকদের সব দাবি মেনে নেওয়া হচ্ছে। আন্দোলনকারীদের তরফে এ নিঃসন্দেহে এক বিরাট জয়। বাস্তবে বা কার্যক্ষেত্রে ঠিক কতটা সুরাহা হবে কৃষকের, সরকার কতটা আন্তরিক হবে নিজের প্রতিশ্রুতির প্রতি— সে সব এখনও প্রমাণ হওয়া বাকি। কিন্তু গোটা দেশে যখন দোর্দণ্ডপ্রতাপ রাজ গেরুয়া পতাকার, তখন লাল মিছিল সম্বল করে নিরন্ন কৃষক গেরুয়া সরকারের কাছ থেকে আদায় করে নেবেন দাবি পূরণের লিখিত প্রতিশ্রুতি, এ বড় কম কথা নয়।

প্রশ্ন হল, এটা কি কোনও শুরুর শেষ? নাকি কোনও শেষের শুরু?

আরও পড়ুন: সঙ্কট সুগভীর, মহারাষ্ট্রের কৃষক মিছিল বহিঃপ্রকাশ মাত্র

সুদীর্ঘ বঞ্চনা, অবহেলা, অধিকার হরণের অভিযোগ তুলে সে সবের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে সরব হতে শুরু করেছেন কৃষকরা। দেশের প্রতিটি প্রায় প্রান্ত থেকে কৃষক অসন্তোষের খবর আসছে। মহারাষ্ট্রেই সবচেয়ে সংগঠিত চেহারা নিয়ে আত্মপ্রকাশ করল আন্দোলনটা, গোটা দেশের কৃষক আন্দোলনের প্রতীক হয়ে সে দেখা দিল জাতির সামনে যেন। মহারাষ্ট্র থেকেই হয়ত শুরু হয়ে যেতে পারত একটা নতুন অধ্যায়, গোটা দেশে চারিয়ে যেতে পারত হয়ত সংগঠিত এবং অপ্রতিরোধ্য কৃষক আন্দোলন। মহারাষ্ট্র সরকারের কুশলী পদক্ষেপ কি শুরুতেই শেষ করে দিল সেই সম্ভাবনাকে? নাকি পথ দেখিয়ে গেল এই আন্দোলন? বঞ্চনা বা যন্ত্রণার কোনও সুদীর্ঘ অতীত যদি থেকে থাকে, তা হলে মহারাষ্ট্র থেকেই কি তার শেষের শুরু হয়ে গেল? নজর রাখতে হবে এই প্রশ্নের উত্তরের দিকেও।

Newsletter Anjan Bandyopadhyay Farmers March Maharashtra Devendra Fadnavis Loan Waiver অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় দেবেন্দ্র ফডণবীস মহারাষ্ট্র
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy