Advertisement
E-Paper

নীতিশূন্যতা

কাশ্মীর লইয়া বর্তমান সরকারের নীতিশূন্যতা এবং দ্বিচারিতা গত তিন বৎসর ধরিয়াই দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়া আসিতেছে। কিন্তু এই মুহূর্তে সেই দ্বিচারিতা যে নাটকীয় উচ্চতায় উঠিয়াছে, সচরাচর তাহা দেখা যায় না।

শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৭ ০১:৩৩

কাশ্মীর লইয়া বর্তমান সরকারের নীতিশূন্যতা এবং দ্বিচারিতা গত তিন বৎসর ধরিয়াই দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়া আসিতেছে। কিন্তু এই মুহূর্তে সেই দ্বিচারিতা যে নাটকীয় উচ্চতায় উঠিয়াছে, সচরাচর তাহা দেখা যায় না। পরিস্থিতির চাপে সেই রাজ্যের রাজ্যপাল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাইতেছেন, যেন সব পক্ষকে একযোগে ডাকিয়া রাজ্যে একটি আলোচনার ব্যবস্থা করা হয়। রাজ্যপাল এন এন বোহরার বক্তব্য, কোনও প্রশাসনিক উদ্যোগেই শান্তি প্রতিষ্ঠার আশা নাই, এমনকী রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করিয়াও নয়, যদি না আলোচনার পথ খোলা হয়। তিনি বিশেষ ভাবে উল্লেখ করিয়াছেন হুরিয়ত ও কট্টর নেতৃত্বের কথা, যাহাদের বাদ দিয়া আলোচনা অর্থহীন। এত খোলাখুলি ও উদ্বিগ্ন প্রতিক্রিয়ার জবাবে রাজনাথ সিংহ কিছু আশ্বাস দিয়াছেন ঠিকই, কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের মনোগত বাসনাটি যে সম্পূর্ণ বিপরীত, তাহা ইতিমধ্যেই কাশ্মীরের ঘটনাপ্রবাহে স্পষ্ট। এক দিকে আলোচনার আশ্বাস, আর অন্য দিকে চলিতেছে সোপিয়ানে সেনা অভিযান। পর পর কতগুলি জঙ্গি হত্যাকাণ্ড এবং ভারতীয় সেনার মৃতদেহ বিকৃত করিবার প্রত্যুত্তর হিসাবে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের কথা শোনা যাইতেছে। পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে দিল্লিতে ডাকিয়া সতর্ক করা হইতেছে। এই সর্বব্যাপী যুযুধানতার মধ্যে উপত্যকার মানুষগুলিকে পাকিস্তানমুখিতার কবল হইতে ফিরাইয়া আনার পথ কী হইতে পারে, তাহা লইয়া সামান্যতম চিন্তাও কেন্দ্রীয় সরকারের আছে বলিয়া মনে হয় না। রাজ্যপাল মহাশয়কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যাহা বলিয়াছেন, সে সব নেহাত মৌখিক সান্ত্বনাবাণী।

কাশ্মীর প্রসঙ্গে পাকিস্তান ছাড়া আর কিছু ভাবিতে না পারা, বাস্তবিক, দিল্লির একটি অসুস্থতায় পর্যবসিত হইতেছে। রাজনৈতিক অশান্তি, জঙ্গি আক্রমণ, সবই সীমানা পার হইয়া আসিতেছে, আসিবে। কিন্তু উপত্যকার মানুষ কেন সাগ্রহে সেই সীমানা-পারের ‘সহায়তা’র জন্য এত উদ্গ্রীব, উন্মুখ, সেই কথাটি এখন ভাবিতে যদি এত অনীহা, তাহা হইলে সমস্যা কমিবার আশা দূর অস্ত্। কঠোর বাস্তব ইহাই যে, কাশ্মীরের তরুণ সমাজ সম্পূর্ণ মুখ ঘুরাইয়া লইয়াছে বলিয়াই পরিস্থিতি উত্তরোত্তর ঘোরালো হইতেছে। এতখানি বিমুখতা কিন্তু আগে ছিল না। অটলবিহারী বাজপেয়ীর প্রধানমন্ত্রিত্বে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে উন্নতির কথা শোনা যায়, ২০১০-এর আগে ইউপিএ আমলে শান্তিবৃদ্ধির কথা তুলনায় কম শোনা যায়। ঘটনা হইল, কেন গত কয়েক বৎসরে এই ভাবে অবস্থা আয়ত্তের বাহিরে চলিয়া গেল, তাহার কোনও দিশা বর্তমান সরকারের কাছে নাই। দিশা বাহির করিবার কোনও অভিপ্রায়ও তাহার নাই।

সেই কারণে কোনও বিপরীত মত কাশ্মীর হইতে ভাসিয়া আসিলেই তাহার রোধ ও প্রতিরোধের ব্যবস্থা হয়। কাশ্মীরি বিদ্রোহীদের কথা বাদই গেল, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা যখন ২০১৬ সালে একাধিক বার মন্তব্য করেন যে, কাশ্মীর সংকটের জন্য পাকিস্তানের দিকে তাকাইলে চলিবে না— কেন্দ্রীয় সরকার ও বিজেপি-প্রভাবিত প্রচারমাধ্যম তাঁহার বিরুদ্ধে রে-রে করিয়া ওঠে। এই ভাবেই বার বার মূল বিষয়টি চাপা পড়িয়া গৌণ বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়া দিল্লির অভ্যাসে পরিণত হইয়াছে। একটি দুইটি ভয়ংকর হামলা, তাহার পর হঠাৎ নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর খুব খানিক উত্তেজনা বৃদ্ধি, যুদ্ধ যুদ্ধ হুঙ্কার, তাহার পর আবার সব চুপচাপ। গত বৎসরে উগ্রপন্থী নেতা গিলানির সহিত কথোপকথনের প্রয়াস ব্যর্থ হইবার পর দ্বিতীয় কোনও উচ্চবাচ্য শোনা যায় নাই। রাজনৈতিক পদক্ষেপ ছাড়াই কাশ্মীরি নেতৃত্ব বাগ মানিবে, হয় ইহা অযৌক্তিক প্রত্যাশা, নয়তো চতুরতার সহিত দৃষ্টি ঘুরাইবার চেষ্টা। এই চরম, নীতিশূন্য এবং অবিবেচক দ্বিচারিতায় কাহার উপকার হইতেছে? কাশ্মীরের? ভারতের?

Government Jammu-Kashmir POK
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy