Advertisement
E-Paper

গরিবের চিকিৎসা মানেই বিমা?

খাতায়-কলমে এই সব চিকিৎসার অধিকাংশ নিখরচায় করানো যায় সরকারি হাসপাতাল থেকে। কিন্তু শয্যা কম, লম্বা অপেক্ষা, ডাক্তার বা যন্ত্রপাতি অমিল, এমন নানা কারণে লোকে সরকারি হাসপাতালকে এড়াতে চান

সুমিত মজুমদার

শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:০০

গরিবের চিকিৎসা হবে কী করে? নরেন্দ্র মোদীর উত্তর, প্রধানমন্ত্রী জন-আরোগ্য যোজনা। এটি একটি স্বাস্থ্যবিমা, যা নিখরচায় হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ জোগাবে। বর্তমান রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনার (আরএসবিওয়াই) ধাঁচেই এই নতুন প্রকল্পের গড়ন। বেশ কিছু রাজ্যে তারও আগে থেকে এই ধরনের সরকারি স্বাস্থ্যবিমা চলে আসছে। যেমন অন্ধ্রপ্রদেশে রাজীব আরোগ্যশ্রী যোজনা (সূচনা ২০০৭) বা কর্নাটকের বাজপেয়ী আরোগ্যশ্রী (সূচনা ২০১২)। তামিলনাড়ু, ছত্তীসগঢ়, এমনকি এ রাজ্যের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পেরও মূল বৈশিষ্ট্য একই, সামান্য প্রিমিয়ামের বিনিময়ে খরচসাপেক্ষ চিকিৎসা পাওয়ার নিশ্চয়তা।

খাতায়-কলমে এই সব চিকিৎসার অধিকাংশ নিখরচায় করানো যায় সরকারি হাসপাতাল থেকে। কিন্তু শয্যা কম, লম্বা অপেক্ষা, ডাক্তার বা যন্ত্রপাতি অমিল, এমন নানা কারণে লোকে সরকারি হাসপাতালকে এড়াতে চান। সরকারি স্বাস্থ্যবিমা বেসরকারি হাসপাতালের দরজা খুলে দেয় গরিবের কাছে। আরএসবিওয়াই-এর উচ্চসীমা ছিল বছরে ত্রিশ হাজার টাকার চিকিৎসা। নতুন যোজনায় তা পাঁচ লক্ষ টাকা। সুযোগ পাবে প্রায় এগারো কোটি পরিবার।

আরও বেশি মানুষ আরও বেশি টাকার চিকিৎসা পেলে নিশ্চয়ই ভাল। কিন্তু বাস্তবে বিমার সুবিধে পেতে কী কী সমস্যা হতে পারে, তা আরএসবিওয়াই কার্যকর করতে গিয়েই স্পষ্ট। প্রায় সব রাজ্যেই অধিকাংশ নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার বিমার বাইরে থেকে যাচ্ছে। বড় বড় বেসরকারি হাসপাতাল প্রকল্পের অধীনে আসতে আগ্রহী নয়। দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে। আর মোদী সরকার যে টাকা বরাদ্দ করেছে তা এগারো কোটি পরিবারের জন্য যথেষ্ট কি না, সে প্রশ্ন থাকছেই।

তবে সব চাইতে চিন্তার কথা, বেশ কিছু ছোট-বড় গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, সরকারি স্বাস্থ্যবিমার আওতায় থাকা পরিবারদের মধ্যেও চিকিৎসার বার্ষিক গড় খরচ তেমন কিছু কমেনি। কেন? দেখা যাচ্ছে, হাসপাতালের চিকিৎসাতে সব চাইতে বেশি খরচ হয়, এমন নয়। সাধারণ অসুখবিসুখ যা বার বার হয়, তার চিকিৎসা, কিংবা ডায়াবিটিস, হাঁপানি, উচ্চ রক্তচাপ প্রভৃতি দীর্ঘমেয়াদি রোগের ওষুধপত্রের খরচ মেটাতে গিয়ে বিপর্যস্ত হচ্ছে অসংখ্য পরিবার। হাসপাতালে ভিড় যতই চোখে পড়ুক, বছরে চার শতাংশেরও কম মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হন। অথচ এ দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের দশ শতাংশ ডায়াবিটিসে এবং প্রায় পঁচিশ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন। অন্যান্য জটিলতা যাঁর নেই, তেমন ডায়াবিটিস রোগীর ওষুধ লাগে মাসে হাজার তিনেক টাকার মতো। রোগ জটিল হলে তা বেড়ে হাজার দশেক টাকাও হতে পারে। এই ধরনের রোগগুলি স্বাস্থ্যবিমার অধীনে আসে না, এই নয়া প্রকল্পেও আসেনি। অথচ এত দিনে স্পষ্ট যে, হাসপাতালমুখী স্বাস্থ্যবিমার চাইতে নিখরচায় দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার ব্যবস্থা করা বেশি প্রয়োজন।

বলা হচ্ছে বটে, ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পের অধীনে দেশে দেড় লক্ষের মতো ‘ওয়েলনেস’ সেন্টার গড়ে তোলা হবে, যেখানে বিনা পয়সায় প্রায় সব চিকিৎসা মিলবে। কিন্তু ভয় হয়, ধুঁকতে ধুঁকতে চলা সরকারি প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রগুলির এক পোঁচ রং আর নতুন সাইনবোর্ডেই হয়তো সে কাজ সীমাবদ্ধ থাকবে।

তা হলে উপায়? অন্যান্য দেশ থেকে বিকল্প সূত্র মেলে। বোঝা যায়, ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ মানেই সবার জন্য বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা, আর তার জন্য স্বাস্থ্যবিমার বরাদ্দ বাড়ানো নয়।

Heath Insurance Hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy