Advertisement
E-Paper

তারকাতন্ত্র 

সরকারি বিজ্ঞাপনে, বিশেষত কোনও রাজ্যের পর্যটন শিল্পের বিজ্ঞাপনে তারকার মুখ ব্যবহার— দীর্ঘ দিনের রেওয়াজ।

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২৩:৪৪

সরকারি বিজ্ঞাপনে, বিশেষত কোনও রাজ্যের পর্যটন শিল্পের বিজ্ঞাপনে তারকার মুখ ব্যবহার— দীর্ঘ দিনের রেওয়াজ। ইতিপূর্বে বিভিন্ন রাজ্যের পর্যটন দফতরের বিজ্ঞাপনে প্রতিপত্তিশালী চিত্রতারকাদের মুখচ্ছবি লক্ষ করা গিয়াছে। এক সময় পশ্চিমবঙ্গও সেই পথে হাঁটিয়াছিল, রাজ্যের ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডার’ শাহরুখ খানকে প্রচারের মুখ হিসাবে তুলিয়া ধরিয়াছিল। অতি সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সরকার সেই রীতি হইতে সরিয়া আসিবার সিদ্ধান্ত লইয়াছে। প্রশাসনের অন্দরে সিদ্ধান্ত শোনা যাইতেছে, রাজ্যের পর্যটন শিল্পের প্রচারে তারকা-মুখ নহে, বরং স্থানমাহাত্ম্যেরই অধিক গুরুত্ব পাওয়া উচিত। অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের যাহা নিজস্ব সম্পদ, যেমন চা, রয়াল বেঙ্গল টাইগার, কিংবা দুর্গাপূজা, ইত্যাদির উপর বিশেষ জোর দিয়া প্রচার পরিকল্পনা করা উচিত। এই পরিকল্পনা অত্যন্ত সুবিবেচনার পরিচয়। ইহাকে স্বাগত জানানো কর্তব্য।

তারকা কেন, কোনও ব্যক্তিমুখের উপর নির্ভরশীলতাই পর্যটন বিজ্ঞাপনে থাকা উচিত নয়। প্রসঙ্গক্রমে, এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের অবস্থানটি স্মরণ করা যাইতে পারে। ২০১৫ সালে একটি রায়ে সুপ্রিম কোর্ট সরকারি বিজ্ঞাপনে কোনও রাজনৈতিক নেতা অথবা বিশিষ্ট ব্যক্তির ছবি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করিয়াছিল। আদালতের বক্তব্য ছিল, এই ধরনের ছবি সরকারি নীতির দিক হইতে জনগণের দৃষ্টি সরাইয়া দেয়, অনাবশ্যক ভাবে সরকারি প্রকল্পের সঙ্গে ব্যক্তিবিশেষকে যুক্ত করে এবং এক ধরনের ব্যক্তিপূজার পথ প্রশস্ত করে। জনগণের করের অর্থ কোনও ভাবেই এই ধরনের রাজনৈতিক ব্যক্তিপূজায় ব্যয় হইতে পারে না। একমাত্র ছাড় দেওয়া হইয়াছিল প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান বিচারপতি— এই তিন সাংবিধানিক প্রধানের ছবিকে, এবং তাহাও পূর্বানুমতিক্রমে। অবশ্য পরের বৎসরই দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে মান্যতা দিয়া এই কঠোর নিষেধাজ্ঞা কিছু শিথিল করা হয় এবং সরকারি বিজ্ঞাপনে মুখ্যমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, রাজ্যপাল এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের মন্ত্রীরাও জায়গা পাইবেন বলিয়া নূতন রায় দান করে সুপ্রিম কোর্ট। অতি সম্প্রতি এক জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে সর্বোচ্চ আদালত আবারও কেন্দ্রীয় সরকার ও ছয়টি রাজ্য সরকারকে নোটিস পাঠাইয়াছে। অভিযোগ, তাহারা সরকারি বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে আদালতের সংশোধিত নির্দেশটিও যথেচ্ছ ভাবে অমান্য করিয়াছে। লক্ষ করিবার বিষয়, এই ছয়টি রাজ্যের মধ্যে তেলঙ্গানা ছাড়া পাঁচটিই বিজেপি-শাসিত— উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ঝাড়খণ্ড, ছত্তীসগঢ়।

এই প্রেক্ষিতে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তটি আরওই সময়োচিত বলিয়া মনে হয়। যে ব্যক্তিপূজা রোধ করিবার লক্ষ্যে সরকারি বিজ্ঞাপনে ব্যক্তিবিশেষের ছবির ব্যবহার বন্ধ করিতে চাহে দেশের সর্বোচ্চ আদালত, তারকার মুখ ব্যবহারেও কি পক্ষান্তরে সেই ব্যক্তিপূজাকেই প্রশ্রয় দেওয়া হয় না? এই সূত্রে আর একটি কথাও ভাবিবার অবকাশ রহিয়াছে। যাবতীয় সরকারি কর্মসূচি এবং সরকারি কাজের খতিয়ান সংক্রান্ত পোস্টার ব্যানার ফেস্টুনে কি শাসক দলের প্রধান মুখগুলির এত প্রবল ও পরিব্যাপ্ত ব্যবহার সত্যই জরুরি? ইহাও কি এক অর্থে সরকারি অর্থে ব্যক্তিমহিমার প্রচার নয়? বিষয়টি জরুরি। গণতন্ত্রের স্বার্থেই তারকাতন্ত্রে কিছু সীমা মানিয়া চলা ভাল।

Place Ambassador Actor Advertisement
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy