Advertisement
E-Paper

বাজেটে ঢালাও ব্যয়বরাদ্দ, আয়ের কোনও দিশা নেই

এটি নির্বাচন প্রাক্কালে প্রস্তাবিত ভোটমুখী বাজেট। সামগ্রিক আর্থিক বিশ্লেষণ নির্ভর সুপরিকল্পিত উন্নয়নমুখী বাজেট একে বলা যায় না। লিখছেন গৌরদাস সরকার ১ ফেব্রুয়ারি ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পার্লামেন্টে ২০১৯-২০২০ অর্থ বর্ষের জন্য ইন্টারিম বাজেট পেশ করলেন। বাজেট প্রস্তাবের দীর্ঘ অংশ জুড়ে রইল বর্তমান সরকার অন্য বছরে জনগণের জন্য কী কী ভাল করেছেন, কোন কোন প্রকল্প চালু করেছেন তার বর্ণনা।

শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৪:৪২

প্রথাগত ভাবে কেন্দ্রীয় সরকার প্রত্যেক অর্থবর্ষের জন্য বাজেট পেশ করে থাকে। সাধারণত সেটি প্রত্যেক বছর ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ কর্মদিবসে। কিন্তু ইন্টারিম বাজেট বা ভোট অন অ্যাকাউন্ট বাজেটের ক্ষেত্রে সে প্রথা মানা হয় না।

১ ফেব্রুয়ারি ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পার্লামেন্টে ২০১৯-২০২০ অর্থ বর্ষের জন্য ইন্টারিম বাজেট পেশ করলেন। বাজেট প্রস্তাবের দীর্ঘ অংশ জুড়ে রইল বর্তমান সরকার অন্য বছরে জনগণের জন্য কী কী ভাল করেছেন, কোন কোন প্রকল্প চালু করেছেন তার বর্ণনা। সমস্ত প্রথা ভেঙে কয়েক মাসের, এমনকি, ১ বছরের পরিবর্তে একেবারে ১২ বছরের স্বপ্ন দেখালেন অর্থমন্ত্রী।

সেই স্বপ্নে দেশের প্রতি কোণে ডিজিটাল ইন্ডিয়ার অস্তিত্ব, দূষণহীন পরিবেশ, গ্রামীণ শিল্পায়নের প্রসার, বিপুল কর্মসংস্থান, খাদ্যে স্বনির্ভরতা, দূষণমুক্ত নদী ও স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়ন— সবই জায়গা পেল। মধ্যবিত্ত জনগণের মন রাখতে আয়করের প্রস্তাব পেশ করে বসলেন ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী, যা রীতিনীতি ও প্রথাবিরুদ্ধ। অন্য সরকারের বাজেট প্রস্তাবকে প্রতিশ্রুতির সমাহার হিসাবে কটাক্ষ করে তিনি যা পেশ করলেন, তা বর্তমান সরকারের ভোট বৈতরণি পার করার উপায় ছাড়া আর কী-ই বা বলা যায়?

বাজেট শুধুমাত্র অনুমিত বার্ষিক আয়-ব্যয়ের বিবরণ নয়। বাজেট প্রস্তাবের মূল লক্ষ্য হল— পরিকল্পনার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে ব্যয়ের প্রস্তাব গ্রহণ করা এবং সেই ব্যয় নির্বাহের উপযোগী আয়ের উৎস নির্ধারণ করা। বর্তমান বাজেট প্রস্তাবে কিছু কিছু ব্যয়বরাদ্দের উল্লেখ থাকলেও আয়ের উৎসের কোনও দিশা পাওয়া গেল না।

চাকুরিজীবী জনসাধারণের কর ভার লাঘব করার কিছু প্রস্তাব বাজেটে স্থান পেল। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন ৪০০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০০০০ টাকা করা হল এবং ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করযোগ্য উপার্জনে আয়কর ছাড় ঘোষিত হল।

ব্যাঙ্কে এবং পোস্ট অফিসের আমানতের উপর যে সুদ পাওয়া যায় তার করমুক্ত সীমা ১০০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০০০০ টাকা করা হল। প্রভিডেন্ট ফান্ড, নির্দিষ্ট সঞ্চয় এবং বিমা প্রকল্পে বিনিয়োগ থাকলে ৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত মোট আয়ে কর মুকুব করা হল। পাশাপাশি, অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শ্রমযোগী মানধন প্রকল্পে মাসিক ৩ হাজার টাকা করে পেনশনের সুবিধা দেওয়া হল। প্রধানমন্ত্রী কিষাণ প্রকল্পে ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকদের জন্য বছরে ৬ হাজার টাকা করে নিশ্চিত উপার্জনের সুযোগ ঘোষিত হল। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে কৃষিঋণের উপর ২ শতাংশ ভর্তুকি এবং পশুপালন ও মৎস্যচাষের ক্ষেত্রে ঋণের সুদে ২ শতাংশ ভর্তুকি ও সময়ে ঋণ শোধ করলে বাড়তি ৩ শতাংশ ভর্তুকি ঘোষিত হল।

এক দিকে মুদ্রাস্ফীতি প্রতিরোধের কথা বললেও করমুক্ত সুদের সীমা বাড়িয়ে সঞ্চয়কে উৎসাহিত করে আমানত বাড়ালে, তা যে ঋণ সৃষ্টির মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতি ডেকে আনবে, তা তো সকলেরই জানা। কর ভার লাঘব করার মধ্যে দিয়ে সরকারের যে পরিমাণ আয় কমবে, তা কী ভাবে পূরণ হবে, সে বিষয়ে কোনও উল্লেখ বাজেটে পাওয়া গেল না। জাতীয় শিক্ষা মিশন ও আইসিডিএস প্রকল্পে ব্যয়বরাদ্দ যথাক্রমে ২০ শতাংশ ও ১৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। অনগ্রসর শ্রেণির মানুষের কল্যাণে ব্যয়বরাদ্দ কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এই বাড়তি অর্থের সংস্থান কী ভাবে হবে, তার উল্লেখ বাজেটে নেই।

জিএসটি-র প্রশংসা করে তা থেকে প্রাপ্ত আয়ের উল্লেখ করে তাকে একটি অভূতপূর্ব সাফল্যের তকমা লাগিয়ে দিলেও তা যে সাধারণ মানুষের উপরেই করের বোঝা চাপিয়ে দেয়, তা কি না বোঝার মতো কোনও বিষয়?

সৌভাগ্য যোজনার মাধ্যমে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার কথা বললেও তার জন্য অর্থবরাদ্দ কী ভাবে হবে, তার কোনও উল্লেখ না থাকায় তা প্রতিশ্রুতিরই নামান্তর।

‘রাষ্ট্রীয় কামধেনু আয়োগ’ ঘোষণা করে ৭৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হল, যার অর্থ সংস্থান কী ভাবে হবে, তা বলা হল না।

কর্মসংস্থানের উল্লেখ থাকলেও তার কোনও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব বাজেটের মধ্যে পাওয়া গেল না।

স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রকল্পের উল্লেখ থাকলেও ব্যয়বরাদ্দের কোনও উল্লেখ নেই। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যয়বরাদ্দ বাড়িয়ে, কর ভার কমিয়ে গালভরা প্রকল্পের উল্লেখ করে জনগণকে খুশি করার চেষ্টা করেছেন ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। বাজেটের মধ্যে ঢালাও ব্যয়বরাদ্দের কথা বলে, আয়ের কোনও দিশা না দেখিয়ে অর্থমন্ত্রী বাজেট নিয়ে একপ্রকার ছেলেখেলা করলেন।

মোটের উপর এটি একটি নির্বাচন প্রাক্কালে প্রস্তাবিত ভোটমুখী বাজেট। সামগ্রিক আর্থিক বিশ্লেষণ নির্ভর সুপরিকল্পিত উন্নয়নমুখী বাজেট একে বলা যায় না। নির্বাচনকে মাথায় রেখে বিগত বছরগুলিতে সরকারের সাফল্য বর্ণনা করার মধ্যে দিয়ে অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট পেশ করলেন। ভারতের মতো একটি বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশ যেখানে অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে বাজেট নিয়ে ছেলেখেলা করা হল। গণতন্ত্রের পক্ষে এ এক নির্মম পরিতাপের বিষয় ছাড়া আর কিছুই নয়।

কৃষ্ণনগর উইমেন্স কলেজের অর্থনীতির শিক্ষক

Budget 2019-20 Union Budget Piyush Goyal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy