Advertisement
E-Paper

এক পয়সার পালা

নরেন্দ্র মোদীকে ডুবাইয়াছে তাঁহার অস্বচ্ছ নীতির কুঅভ্যাসটি। তেলের দাম লইয়া তিনি রাজনীতি করিয়াছেন বিলক্ষণ, কিন্তু অর্থনীতির যুক্তিটি কখনও স্পষ্ট করিয়া বলেন নাই।

শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৮ ০১:১৭

মানুষ ভুলিলেও ইন্টারনেট ভোলে না। অতএব, ইউপিএ জমানায় পেট্রল-ডিজ়েলের মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে অরুণ জেটলি, স্মৃতি ইরানি আদি নেতারা, এবং অবশ্যই নরেন্দ্র মোদী যে আক্রমণগুলি শানাইতেন, ইন্টারনেট তাহা ফিরাইয়া দিতেছে। প্রতিটি টুইট, প্রতিটি ভিডিয়ো ক্লিপিং তাঁহাদের দিকে প্রশ্ন ছুড়িয়া দিতেছে, বর্তমান মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে তবে কী বলিবেন? অবশ্য, বলিবার মতো কথা তাঁহাদের আছে। অমিত শাহ বলিয়াছিলেন, তেলের দাম কমিবে। কমিয়াছে। প্রথম বারে এক পয়সা, তাহার পরের বার সটান সাত গুণ— সাত পয়সা। তাঁহারা আরও বলিতে পারেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়িলে সরকার নাচার। এই যুক্তিটি ধোপে টিকিবে না। নরেন্দ্র মোদীর জমানাতেই আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম কমিতে কমিতে যখন ব্যারেলপ্রতি ২৫ ডলারে ঠেকিয়াছিল, সেই অনুপাতে দেশের বাজারে তেলের দাম কমিয়াছিল কোথায়? মনমোহন সিংহের আমলে ব্যারেলপ্রতি ১১০ ডলার দামের তেল দেশের বাজারে যে দামে বিক্রি হইত, এখন ৮০ ডলারের তেলই তাহার অধিক দামে বেচিতে হইতেছে কেন? প্রশ্নগুলির উত্তর তাঁহাদের মুখে জোগাইবে না। অতএব, এক পয়সার পালাই ভরসা।

নরেন্দ্র মোদীকে ডুবাইয়াছে তাঁহার অস্বচ্ছ নীতির কুঅভ্যাসটি। তেলের দাম লইয়া তিনি রাজনীতি করিয়াছেন বিলক্ষণ, কিন্তু অর্থনীতির যুক্তিটি কখনও স্পষ্ট করিয়া বলেন নাই। সত্য কথা হইল, যে দীর্ঘ সময় আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেল অতীব সস্তা ছিল, সেই সময় সরকার তেলের ওপর করের টাকায় রাজকোষ ভরিয়াছে, ঘাটতি কমাইয়াছে। কাজটি অন্যায় নহে, কিন্তু তাহা স্বীকার না করা, এবং ঘাটতির পরিমাণ কমাকে সরকারের অকৃত্রিম সাফল্য হিসাবে দেখানো ঘোরতর অন্যায়। উপরন্তু, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের রাজস্ব আদায়ের নীতিতেও ফারাক আছে। কেন্দ্রীয় রাজস্বটি ‘স্পেসিফিক রেট অব ডিউটি’, অর্থাৎ তেলের দাম যাহাই হউক না কেন, রাজস্বের পরিমাণ নির্দিষ্ট। রাজ্য সরকারগুলির রাজস্ব যুক্তমূল্য, অর্থাৎ তেলের দাম কম থাকিলে রাজ্যের রাজস্বও কম থাকে। স্পষ্টতই, কম দামি তেলের লাভ সর্বাধিক হইয়াছে কেন্দ্রীয় সরকারেরই।
২০১২-১৩ সালে, যখন দেশের বাজারে তেলের মূল্যবৃদ্ধি লইয়া বিজেপি আকাশ ফাটাইয়া ফেলিত, তখন কেন্দ্রীয় সরকার পেট্রোলিয়াম পণ্য বাবদ রাজস্ব আদায় করিয়াছিল এক লক্ষ বিয়াল্লিশ হাজার কোটি টাকা। আর ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে এই আদায়ের পরিমাণ ছিল তিন লক্ষ পঁয়ত্রিশ হাজার কোটি টাকা। রাজ্য সরকারগুলির সম্মিলিত রাজস্ববৃদ্ধির হার কেন্দ্রের অর্ধেক। তেলের দামে কাহার লাভ হইয়াছে, সংশয় থাকিবার কথা নহে।

অপরিশোধিত তেলের দাম কমিলেও উপভোক্তারা যদি তাহার সুফল না পান, তবে দাম বাড়িলে সেই দায় তাঁহাদের উপর চাপাইয়া দেওয়ার মধ্যে নির্লজ্জতা এবং অন্যায়, উভয়ই আছে। নির্বাচনের বৎসরে তাহা রাজনীতি হিসাবেও ভুল। পরিস্থিতিটি সরকারের নিকট উভয় সঙ্কটের। তেলের দাম না কমিলে জনগণ রুষ্ট হইবে তো বটেই, মূল্যস্ফীতির হারও ফের মাথাচাড়া দিবে। তাহার প্রভাব পড়িবে অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের হারের উপর। আবার, তেলের দাম কমাইতে হইলে রাজস্ব ছাড়িতে হয়। তাহাতে ঘাটতির পরিমাণ বাড়িবে— অরুণ জেটলি, পীযূষ গয়ালের আর বড় মুখে কৃতিত্ব দাবি করিবার উপায় থাকিবে না। নরেন্দ্র মোদী সম্ভবত এখন বুঝিতেছেন, অস্বচ্ছ নীতির, এবং অর্থনীতির ঘাড়ে রাজনীতি চাপাইবার বিপদ কতখানি। পরিস্থিতি যখন অনুকূল ছিল, তখন যদি তাঁহারা দেশের মানুষকে না ঠকাইতেন, আজ এই বিপাকে পড়িতে হইত না।

oil price revenue
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy