Advertisement
E-Paper

দুর্বোধ্য উন্মাদনার গ্রাস

‘কিকি চ্যালেঞ্জ’ আমাদের বুঝিয়ে দিল, ইন্টারনেটের এ বিপদ সহজে টলার নয়, নতুন নতুন রূপ ধরে হানা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে সে।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৮ ০০:৩৬
দর্শনা বণিকের কিকি চ্যালেঞ্জ। ইউটিউব ভিডিয়োর স্ক্রিন শট।

দর্শনা বণিকের কিকি চ্যালেঞ্জ। ইউটিউব ভিডিয়োর স্ক্রিন শট।

নীল তিমির বিভীষিকা এখনও স্মৃতিতে উজাগর। তবে বিপদ টলেছে বলে সকলেই হয়তো ভাবতে শুরু করেছিলাম। কারণ ‘ব্লু হোয়েল’ গেম এখন শুধুই স্মৃতি। অন্তর্জালের ওই মারণ জালে নতুন করে আর কারও আটকে পড়ার খবর মিলছে না। কিন্তু বিপদের বড়সড় দিগন্ত খুলে দিল অন্তর্জাল ভিত্তিক আর এক উন্মাদ আচরণ। ‘কিকি চ্যালেঞ্জ’ আমাদের বুঝিয়ে দিল, ইন্টারনেটের এ বিপদ সহজে টলার নয়, নতুন নতুন রূপ ধরে হানা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে সে।

অদ্ভুত, উদ্ভট, বিস্ময়কর আচরণ! সোশ্যাল মিডিয়া ভিত্তিক এই নতুন রিয়্যালিটি চ্যালেঞ্জ কেন কেউ ছুড়ছেন, কেনই বা অন্যরা তা গ্রহণ করছেন, দুর্বোধ্য গোটাটাই। কোনও খেলাই এই রকম অবান্তর হতে পারে না, হওয়া উচিতও নয়। তাও খেলা চলছে, রমরমিয়ে চলছে,জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। যে কোনও মুহূর্তে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, প্রাণহানি হতে পারে। তথাকথিত চ্যালেঞ্জটিতে যে বা যাঁরা অংশ নিচ্ছেন, শুধু তাঁদের নয়, এ সবের বিন্দুবিসর্গ জানেন না যাঁরা, তাঁদের জীবনেও আচমকা বিপদ নেমে আসতে পারে। কিন্তু সে সব ঠিক-বেঠিক, ভাল-মন্দ, উচিত-অনুচিতের হিসেব ভুলে গিয়ে কোনও অমোঘ টানে যেন দলে দলে সব ছুটছেন চ্যালেঞ্জ নিতে। ছুটছেন চ্যালেঞ্জ দিতেও।

কিকি চ্যালেঞ্জ কী? এই চ্যালেঞ্জও ইন্টারনেট ভিত্তিক গেমের মতোই। গাড়ি চালাতে চালাতে রাস্তায় নেমে পড়তে হবে। নেমে পড়তে হবে চলন্ত গাড়ি থেকেই। একটি গানের ছন্দে নাচতে নাচতে চলন্ত গাড়ির সঙ্গে রাস্তা ধরে ছুটতে হবে। তার পরে ফের সেই চলন্ত গাড়িতে চড়ে বসতে হবে। এই ঝুঁকিপূর্ণ এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন কাণ্ডকারখানার ভিডিয়ো পোস্ট করতে হবে ফেসবুকে।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

এই দুর্বোধ্য কাণ্ডকারখানা এবং এই অকারণ চ্যালেঞ্জে কেন অংশগ্রণ করতে হবে? এই তথাকথিত চ্যালেঞ্জে অংশগ্রহণ করলে কী লাভ হবে? ‘চ্যালেঞ্জে’ উতরাতে পারলে কোন মোক্ষে পৌঁছনো যাবে? ‘চ্যালেঞ্জে’ যদি কেউ অংশ না নেন, তাহলেই বা কী ক্ষতি হবে? কোনও প্রশ্নেরই উত্তর মিলবে না। কারণ, গোটা বিষয়টাই অবান্তর। তবু কেউ প্রশ্ন করছেন না। আগুন দেখে যেমন দলে দলে ছুটে আসে পতঙ্গ, ঠিক সেভাবেই সোশ্যাল মিডিয়ার জীবদের একাংশ ছুটছেন চ্যালেঞ্জ নিতে এবং চ্যালেঞ্জ দিতে। আগুনে ঝাঁপ দেওয়ার চেয়ে কোনও অংশে কম নয় সোশ্যাল মিডিয়ায় এই রিয়্যালিটি গেমিং।

আরও পড়ুন: ‘কিকি চ্যালেঞ্জ’ ছড়াচ্ছে নেটিজেনদের মধ্যে, বিপদের গন্ধ পাচ্ছেন মনোবিদরা

আজগুবি খেলাটার উদ্ভাবন মার্কিন মুলুকে। এ বার ভারতেও জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে। কিকি চ্যালেঞ্জের নামে রাস্তাঘাটে বিপজ্জনক কার্যকলাপ দেখে মুম্বই পুলিশ উদ্বিগ্ন। গুজরাতের পুলিশ সতর্কবার্তা জারি করেছে। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রমশ ভাইরাল হতে থাকা এই ‘রিয়্যালিটি চ্যালে়ঞ্জ’ নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশাসনকে ধন্দেই থাকতে হচ্ছে।

এই ধরণের কার্যকলাপ শুধু যে দায়িত্বজ্ঞান সংক্রান্ত প্রশ্ন তোলে, তা কিন্তু নয়। প্রশ্ন ওঠে মানসিক সুস্থতা বা স্থিতি নিয়েও। মানসিকভাবে কেউ যদি স্থির হন, তাহলে এই গেম বা এই চ্যালেঞ্জে কেন অংশগ্রহণ করবেন? কিসের রিয়্যালিটি চ্যালেঞ্জ! বাস্তবের রাস্তায় নেমে আজগুবি এবং বিপজ্জনক কার্যকলাপগুলো ঘটানো হচ্ছে বটে। কিন্তু এই কিকি চ্যালেঞ্জের উদ্ভাবন না হলে মানুষের বাস্তব জীবনে ঠিক কী ধরণের ঘাটতি থাকত? সোশ্যাল মিডিয়ার বাস্তবতায় বিপজ্জনকভাবে বুঁদ হয়ে প্রকৃত বাস্তবতা থেকে আমরা কি অনেক দূরে সরে যাচ্ছি না? সামাজিক মাধ্যমের আচ্ছন্নতা আমাদের বাস্তবতা বা কাণ্ডজ্ঞানের ঠিক বিপরীত মেরুতে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করাচ্ছে না তো? চোখটা কচলে নিয়ে একবার নতুন করে দেখা জরুরি হয়ে পড়েছে।

VIral Ki Ki challenge Newsletter Anjan Bandyopadhyay কি কি চ্যালেঞ্জ অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় Online game
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy