নিপা ভাইরাস জনিত রোগের কথা ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত ছিল সম্পূর্ণ অজানা। এর সঙ্গে এনসেফ্যালাইটিস রোগের সম্পর্ক রয়েছে। কেরল এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষ এখন এই রোগের জন্য বেশ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত এবং খানিকটা আতঙ্কিত। দুশ্চিন্তা হওয়ারই কথা, কারণ নিপা ভাইরাস আক্রান্ত হলে কোনও নির্দিষ্ট ওষুধ নেই, আক্রমণ প্রতিরোধ করার মতো কোনও টিকা আবিষ্কৃত হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) মতে, আক্রান্ত মানুষকে দ্রুত এমন হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে, যেখানে রোগীকে সবার থেকে আলাদা রাখার ও ইনটেনসিভ সাপোর্টিভ কেয়ারের ব্যবস্থা আছে। নিপা ভাইরাস আক্রান্ত হয়েছে কি না তা বুঝবার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য উপযুক্ত স্থানে পাঠাতে হবে। ভারতে পুণের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি এবং মণিপাল সেন্টার ফর ভাইরাল রিসার্চ, দু’টি পরীক্ষাগারেই কেবলমাত্র এ পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে।
১৯৯৮ সালে মালয়েশিয়ার শুঙ্গাই নিপা গ্রামে শূকরপালকদের মধ্যে দেখা দিল এনসেফ্যালাইটিস, বহু শূকরকেও অসুস্থ হয়ে পড়তে দেখা গেল। কিন্তু লক্ষণগুলি অন্য ধরনের, দ্রুত অসুস্থ হয়ে অবস্থার অবনতি হওয়ার হার এবং মৃত্যুহার বেশি। এর পর ১৯৯৯, এ বার শূকররা অনেক কম রোগগ্রস্ত হল, কিন্তু শূকরপালক এবং শূকরের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে থাকা মানুষের মধ্যে প্রায় মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়ল এই রোগ। ১৯৯৯ সালেই শনাক্ত হল ভাইরাস। শুঙ্গাই নিপা গ্রামের নামে নাম দেওয়া হল নিপা ভাইরাস। মালয়েশিয়ায় কয়েক লক্ষ শূকর হত্যা করা হল। এর পরেই সেখানে এই রোগের প্রকোপ বন্ধ হয়ে গেল। সিঙ্গাপুরেও যে প্রাদুর্ভাব দেখা গিয়েছিল তার আর পুনরাবৃত্তি হয়নি।
এর পর ব্যাপক সমীক্ষা ও পরীক্ষা থেকে বোঝা গেল, ফ্লাইং ফক্স নামে পরিচিত বেশ বড়সড়ো বাদুড় (বৈজ্ঞানিক নাম পিটারোপাস মিডিয়াস) এই রোগের বাহক। এরা ফলভোজী বাদুড় নামেও পরিচিত। ফলভোজী বাদুড় তার ধারালো দাঁত দিয়ে ফল খায়, কিন্তু পুরো ফলটা খাওয়া শেষ না করেই উড়ে যায়। এ জন্য ফলের উপর দাঁতের দাগ থাকলে বা কোনও পাখির ঠোঁটের দাগ বা কোনও আঁচড়ের দাগ দেখলে সেই ফল খাওয়া উচিত নয়। তবে, বিশেষজ্ঞ জোনাথান এপস্টাইনের মতে, যদি নিপা ভাইরাস কোনও বাদুড়ের দেহে প্রবেশ করেও থাকে, তা হলে বড় জোর দু’সপ্তাহ ওই ভাইরাস তার শরীরে থাকে; তার পরই তারা শরীর থেকে ভাইরাস ঝেড়ে ফেলে দেয়।