Advertisement
E-Paper

দেশের স্বার্থে

দিল্লি এবং মুম্বই, দুই তরফই সাদা পতাকা উড়াইয়া দিয়াছে। অর্থমন্ত্রক বিবৃতি দিয়া জানাইয়াছে, তাহারা রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের স্বশাসনের এক্তিয়ারে হস্তক্ষেপ করিবে না। হাওয়ায় খবর ভাসিলেও ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিত পটেল পদত্যাগ করেন নাই। তবে, এই শান্তিকেই চূড়ান্ত ভাবিয়া লইলে সম্ভবত ভুল হইবে।

শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৮ ০০:৩৪
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

আপাতত শান্তিকল্যাণ। দিল্লি এবং মুম্বই, দুই তরফই সাদা পতাকা উড়াইয়া দিয়াছে। অর্থমন্ত্রক বিবৃতি দিয়া জানাইয়াছে, তাহারা রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের স্বশাসনের এক্তিয়ারে হস্তক্ষেপ করিবে না। হাওয়ায় খবর ভাসিলেও ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিত পটেল পদত্যাগ করেন নাই। তবে, এই শান্তিকেই চূড়ান্ত ভাবিয়া লইলে সম্ভবত ভুল হইবে। কারণ, সমস্যা যেখানে, তাহার সমাধান হয় নাই। হইবে, তেমন আশাও ক্ষীণ। অর্থমন্ত্রক জানাইয়াছে, দেশের স্বার্থেই কেন্দ্রীয় সরকার রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ককে পরামর্শ দিয়া থাকে, এবং দিয়া চলিবে। সরকারি মহল যাহা করে, সবই যে ‘দেশের স্বার্থ’-এ, তাহা বলা বাহুল্য। যেমন, দেশের স্বার্থেই রাফালের দাম সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য গোপন রাখা হইয়াছে; দেশের স্বার্থেই তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয় করিয়া সর্দার পটেলের মূর্তি নির্মিত হইয়াছে। কিন্তু, ‘দেশের স্বার্থ’-এ সেই পরামর্শ দেওয়ার জন্য রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক আইনের সাত নম্বর ধারার উল্লেখ করিতে হইল কেন, সেই উত্তর অর্থমন্ত্রক দেয় নাই। ধারার এই উল্লেখটি প্রকৃত প্রস্তাবে হুমকি— সরকারের কথা না শুনিলে আইন প্রয়োগ করিয়া, ব্যাঙ্কের ক্ষমতা খর্ব করিয়া, সরকার নিজের মত চাপাইয়া দিতে পারে। বিজেপি মহল স্বভাবতই এই ‘আলোচনা’য় দোষ দেখে নাই। বলিয়াছে, বে-আইনি কিছু তো করা হয় নাই, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক আইনেই তো সাত নম্বর ধারাটি আছে। সত্য, কিন্তু প্রশ্ন তো আইন, বে-আইনের নহে। প্রশ্ন হইল, গত ৮৩ বৎসরে যে ধারা ব্যবহার করিতে হয় নাই, আজ হঠাৎ তাহার প্রয়োজন পড়িল কেন? অতীতের তুলনায় ‘দেশের স্বার্থ’-এর তাগিদ তীব্রতর হইয়া উঠিয়াছে, না কি, অতীতের সব সরকারের তুলনায় নরেন্দ্র মোদীর সরকারের নিয়ন্ত্রণ বাসনা প্রবলতর?

সমস্যা এই নিয়ন্ত্রণ করিবার ইচ্ছা লইয়াই। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের অসন্তোষের কারণগুলির যাথার্থ্য বিচার অন্যত্র, কিন্তু স্বনিয়ন্ত্রিত কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের সহিত নির্বাচিত সরকারের মতের অমিল গোটা দুনিয়াতেই আকছার ঘটে। ভারতেও কার্যত সব সরকারের সহিত রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের দড়ি টানাটানি চলিয়াছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও ফেডারেল রিজ়ার্ভ-এর সহিত সরকারের মত মিলে না। কিন্তু, কোনও ক্ষেত্রেই সমস্যা এত দূর গড়ায় না যে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করে। বিরল আচার্যের বক্তৃতাটি সেই অর্থে সত্যই বিরল। তাহার পরবর্তী ঘটনাক্রমও। অনুমান করা চলে, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ককে বজ্রমুষ্টিতে নিয়ন্ত্রণের বহরটি এমনই বাড়িয়াছে যে উর্জিত পটেলের ন্যায় সর্বংসহ গভর্নরেরও ধৈর্যচ্যুতি হইতেছে। ব্যাঙ্কের নীতি দেশের আর্থিক স্বাস্থ্যের পরিপন্থী হইতেছে কি না, অনাদায়ী ঋণের ক্ষেত্রে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ভূমিকা প্রশ্নযোগ্য কি না, কেন্দ্রীয় সরকার এ হেন সব আপত্তিই বিলক্ষণ জানাইতে পারে— দেশের স্বার্থে— কিন্তু, সেই সমালোচনাকে গণপরিসরে টানিয়া আনিলে বোঝা যায়, দেশের অর্থনীতির হাল এবং বৈঠা যাঁহাদের হাতে, তাঁহাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র তালমিল নাই। পরিস্থিতিটি আরও জটিল হইয়াছে রাজনীতির অনুপ্রবেশে। স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের নেতা ফতোয়া দিয়াছেন, ব্যাঙ্কের গভর্নর যদি কেন্দ্রীয় সরকারের কথা শুনিয়া না চলিতে পারেন, তবে তাঁহাকে পদত্যাগ করিতে হইবে। কথাটি কোনও খুচরা রাজনীতিকের নহে, এই মঞ্চ আরএসএস-এর শাখা সংগঠন। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক যে সরকারের অধীন প্রতিষ্ঠান নহে, অথবা তাহার গভর্নর যে প্রধানমন্ত্রীর আজ্ঞাবহ নহেন, অর্থনীতির রাজনীতিকরণের খেলায় নরেন্দ্র মোদীরা সেই কথাটি সম্পূর্ণ গুলাইয়া দিতে সক্ষম হইয়াছেন। বস্তুত, কথাটি সম্ভবত আর তাঁহাদেরও স্মরণে নাই। কোন ব্রাহ্মীরসে সেই স্মৃতি ফিরিবে, তাহা না জানা অবধি সমস্যা মিটিবে না। এক বিদ্রোহ শান্তি হইলে আরও এক বিদ্রোহ জাগিবে বলিয়াই আশঙ্কা। শান্তিকল্যাণ সাময়িক মাত্র।

RBI Finance Ministry Black Money
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy