Advertisement
E-Paper

দায়বদ্ধতা প্রমাণের তাড়নায় দায়িত্বজ্ঞানহীন হওয়া কাম্য নয়

প্রশাসনিক সভা থেকে রোগ-বালাই সম্পর্কে বেশ কিছু কথা বলতে শোনা গেল মুখ্যমন্ত্রীকে। রোগ-বালাইয়ের মরসুমী আনাগোনা সম্পর্কে সতর্ক করার চেষ্টা করলেন মুখ্যমন্ত্রী।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৩৫
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শীতের পিছন পিছন বসন্ত আসে, এ কথা ঠিক। কিন্তু শীতের পায়ে পায়ে সর্দি-কাশি-জ্বর বা বর্ষার পায়ে পায়ে কলেরা-উদরাময় আসে এবং স্বাভাবিক নিয়মেই আসে, এ কথা কি ঠিক? মুখ্যমন্ত্রী অন্তত তেমনটাই মনে করেন।

প্রশাসনিক সভা থেকে রোগ-বালাই সম্পর্কে বেশ কিছু কথা বলতে শোনা গেল মুখ্যমন্ত্রীকে। রোগ-বালাইয়ের মরসুমি আনাগোনা সম্পর্কে সতর্ক করার চেষ্টা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু শীত বা গ্রীষ্ম বা বর্ষার যাওয়া-আসার সঙ্গে তাল মিলিয়ে জ্বর বা সর্দি-কাশি বা ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া বা কলেরা-ডায়েরিয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক ভাবে যাতায়াত করে, এমনটা বলা কিয়ৎ অতিসরলীকরণ হয়ে গেল সম্ভবত। সাধারণ জ্বর বা ঠান্ডা লাগার সঙ্গে একই বন্ধনীতে ডেঙ্গি বা কলেরার মতো রোগকে রাখা যায়? কোন রোগ কতখানি বিপজ্জনক, কোন রোগের প্রাদুর্ভাবের তাৎপর্যটা ঠিক কী, সে সব হিসেব একটু গুলিয়ে গেল না কি?

ঠিক যেমন হিসেব গুলিয়ে ফেলছেন কলকাতার মেয়র। পুরসভার জলের চেহারা দেখে শহরবাসী আঁতকে উঠছেন। খাওয়া তো দূরের কথা, পুরসভার পাঠানো জলে কাপড় কাচা বা বাসন ধোয়া কতটা নিরাপদ, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন দক্ষিণ কলকাতার কোনও কোনও মহল্লার বাসিন্দারা। কিন্তু নাগরিক যা-ই বলুন, মহানাগরিক জল সম্পর্কে যাবতীয় অভিযোগ নস্যাৎ করে চলেছেন। ঘরে ঘরে হানা দিচ্ছে আন্ত্রিক, চিকিৎসক বলছেন এ রোগ জলবাহিত, পরীক্ষাগার বলছে পুরসভার জলে কলিফর্ম ব্যাক্টিরিয়া মিলেছে। কিন্তু মেয়র অবস্থানে অনড়। পুরসভার জলে কোনও সমস্যা নেই, পুরসভার জল শহরের কোনও প্রান্তে কোনও ভাবেই দূষিত হয়ে পড়েনি, আন্ত্রিক-ডায়েরিয়া-কলেরা ইত্যাদি ভয়ঙ্কর শব্দের আতঙ্কে না থেকে শহরবাসী নিশ্চিন্তে পুরসভার জল ব্যবহার করুন— মেয়র বার বারই এ কথা বলে চলেছেন।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ুক, এমনটা কাম্য নয়। সঙ্কটকালে স্থিতধী হওয়াই বাঞ্ছনীয়। কিন্তু আতঙ্ক ছড়ানো রুখতে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ যদি ভুল তথা বিপজ্জনক তথ্য ও পরামর্শ দেন, তা হলে বিপর্যয় আরও ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। পুরসভার সরবরাহ করা জল থেকে সমস্যা হচ্ছে— নাগরিক থেকে পরীক্ষাগার, সবাই যখন এ কথা বার বার বলছেন তখন কীসের ভিত্তিতে মেয়র শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরসভার জলকে নিরাপদ বলে চলেছেন, তা বোঝা অত্যন্ত দুরূহ।

পুরসভার জল দূষিত হয়েছে, এ কথা মেনে নিলে দায় মেয়রের উপরে বর্তায় বেশ খানিকটা। সে দায় মেয়র যে নিতে চাইবেন না, তা অত্যন্ত স্বাভাবিক। ডেঙ্গির প্রকোপ যখন ছড়িয়েছিল রাজ্যে, তখনও কর্তৃপক্ষ দায় নিতে চাননি। ডেঙ্গি হচ্ছে ঘরে ঘরে, এমন কথা মানতেই চাওয়া হয়নি। অতএব কলকাতা পৌরসংস্থার সরবরাহ করা জল দূষিত হয়ে থাকতে পারে, এই মুহূর্তে অন্তত এ কথা স্বীকার করা মেয়রের পক্ষে অত্যন্ত কঠিন।

আরও পড়ুন: কী জল খাব, ভেবেই অথৈ জলে গড়িয়া

আরও পড়ুন: আন্ত্রিকে সন্তান হারিয়ে জীবন বদল

কোথায় আটকাচ্ছে মেয়রের, তা না হয় বোঝা গেল। কিন্তু মেয়রকেও তো বুঝতে হবে, কোথায় থামা দরকার তাঁর। জলবাহিত রোগে যখন কাহিল দশা দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকার, যখন জল কিনে খেতে শুরু করেছেন হাজার হাজার মানুষ, তখন জল দূষিত হওয়ার যাবতীয় অভিযোগকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে মেয়র কী প্রমাণ করতে চাইছেন? কলকাতা পৌরসংস্থা স্বাস্থ্যকর পানীয় জল সরবরাহে কতখানি পারদর্শী এবং সে পারদর্শিতায় কোনও ভাবেই কোনও ত্রুটি আসতে পারে না, এ কথা প্রমাণ করার দায়বদ্ধতা মেয়রের রয়েছে। কিন্তু সে দায়বদ্ধতার প্রতি সুবিচার করতে গিয়ে নাগরিকের প্রতি চূড়ান্ত অবিচার করে ফেলছেন না কি? দায়িত্বজ্ঞানহীনতা সীমা ছাড়াচ্ছে না কি?

Diarrhoea ডায়েরিয়া Drinking water Newsletter Sovan Chatterjee শোভন চট্টোপাধ্যায় KMC Anjan Bandyopadhyay অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় Coliform Bacteria
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy