বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ-এ সূচক সেনসেক্স, বা ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ-এর নিফটির দৌড় দেখিয়া বিস্ময় জাগে— অর্থব্যবস্থার সার্বিক অধোগতির কোনও প্রভাবই কি তবে শেয়ার বাজারে পড়ে না? বিশ্বের প্রধান অর্থব্যবস্থাগুলির মধ্যে ভারতই সর্বাধিক কাহিল হইয়াছে— সমগ্র অর্থবর্ষে আর্থিক সঙ্কোচনের হার বেশ চড়া হইবারই আশঙ্কা। ঠিক সেই অর্থবর্ষেই শেয়ার বাজারের সূচক কার্যত দ্বিগুণ হইয়া যায় কোন মন্ত্রে? এই প্রশ্নের প্রথম উত্তর হইল, সত্যই ভারতীয় অর্থব্যবস্থার বাস্তব পরিস্থিতির সহিত শেয়ার বাজারের এই দৌড়ের বিশেষ সংযোগ নাই। সেনসেক্স বা নিফটির ন্যায় সূচক গঠিত হয় বাজারের সেরা কিছু শেয়ারের গড় লইয়া— সেনসেক্সের ক্ষেত্রে সেরা ত্রিশটি সূচক, নিফটির ক্ষেত্রে পঞ্চাশটি। সেই সংস্থাগুলির আর্থিক পরিচালনা উচ্চমানের, তাহারা ঝুঁকি সামলাইতে জানে। ফলে, অর্থব্যবস্থার বেহাল অবস্থা সেই শেয়ারগুলিকে কাবু করে নাই। অতি সম্প্রতি সেক্টরাল সূচকগুলি ঘুরিয়া দাঁড়াইতেছে বটে, কিন্তু গত এক বৎসরে সেই সূচকগুলির সহিত বৃহত্তর সূচকের চলনের খুব মিল ছিল না। অর্থব্যবস্থার ব্যাধি যেমন বিভিন্ন ক্ষেত্রকে বিভিন্ন ভাবে আক্রমণ করিয়াছে, শেয়ার বাজারে তাহার প্রতিফলনও ঘটিয়াছে।
দ্বিতীয়ত, সেনসেক্স বা নিফটির বর্তমান দৌড়ের পিছনে বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক লগ্নির বড় ভূমিকা রহিয়াছে। গত বৎসর ভারতের বাজারে এক লক্ষ সত্তর হাজার কোটি টাকার প্রাতিষ্ঠানিক বিদেশি লগ্নি ঢুকিয়াছিল। এই জানুয়ারিতে ইতিমধ্যেই সেই অঙ্ক ২০,০০০ কোটি টাকা ছাড়াইয়াছে। ফলে, বাজারের ঊর্ধ্বগতিও অব্যাহত। এই লগ্নির একটি বড় বিপদ হইল, টাকা যেমন বানের জলের মতো ঢোকে, তেমনই বাহিরও হইয়া যায়। ফলে, আন্তর্জাতিক বাজারে তুলনায় ছোট কোনও পরিবর্তনেও ভারতীয় শেয়ার বাজারে ধস নামিত পারে, সেই আশঙ্কা তীব্র। ফলে, বাজার বিশেষজ্ঞরা বারে বারেই স্মরণ করাইয়া দিতেছেন, সাধারণ মানুষ যেন এই বিপদের কথাটি মাথায় রাখিয়াই লগ্নি করিবার সিদ্ধান্ত করেন। অন্য দিকে, আগামী কিছু মাসে ভারতীয় অর্থব্যবস্থা ঘুরিয়া দাঁড়াইবে, এই প্রত্যাশাও বাজারকে চালিত করিতেছে। বিশেষত, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন যে ভঙ্গিতে আসন্ন বাজেট সম্বন্ধে প্রত্যাশা তৈরি করিয়াছেন, তাহা বাজারকে প্রভাবিত করিতেছে বলিয়াই অনুমান। এবং, সেই কারণেই আশঙ্কাও থাকিতেছে— আশাভঙ্গ করিতে এই সরকারের জুড়ি নাই।
বাজার ও অর্থব্যবস্থার এই বিপরীতমুখী চলন হইতে একটি শিক্ষা গ্রহণ করা জরুরি— শেয়ার বাজারের চলন দেখিয়া অর্থব্যবস্থার নাড়ির গতি মাপিতে নাই। এই ভুলটি অনেকেই করিয়া থাকেন— শেয়ার বাজারের ঊর্ধ্বগতিকেই অর্থব্যবস্থার সুস্বাস্থ্যের পরিচায়ক ধরিয়া লন। অর্থব্যবস্থা স্বাস্থ্যবান হইলে বাজারও উন্নতি করিবে, কিন্তু বাজারের উন্নতি ঘটিলেই অর্থব্যবস্থার স্বাস্থ্য সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া চলে না। বর্তমান অবস্থাটি বিশেষ ভাবে ব্যতিক্রমী, সেই কথাটি স্বীকার করিয়াও বলা জরুরি, বাণিজ্যিক সংস্থার আর্থিক লাভের সহিত সাধারণ মানুষের উন্নয়নের যোগসূত্রটি স্বতঃসিদ্ধ নহে, তাহার জন্য পৃথক ভাবে উদ্যোগ করিতে হয়। সমগ্র অর্থব্যবস্থা আশা করিতেছে যে, এই বাজেটে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন তেমন উদ্যোগের পরিচয় দিবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy