Advertisement
E-Paper

প্রীতিবাচক

গণমাধ্যম নেতিবাচক সংবাদ ও মন্তব্যের উপরে দাঁড়াইয়া ব্যবসায় সামলাইতেছে, এমন অভিযোগও এখন বহুশ্রুত। সমাজমাধ্যমেও সেই মন্তব্যের জনপ্রিয়তা বহু গুণ, যাহা কাহারও সম্পর্কে নেতিবাচক কথা বলিতেছে বা গালিগালাজ উস্কাইতেছে।

শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:২৯

বর্ষশেষে মোদী বার্তা দিয়াছেন, ইতিবাচক বিষয়কে ‘ভাইরাল’ করিতে হইবে সকলে মিলিয়া। কথাটি শুনিতে চমৎকার এবং অধিকাংশ সুশ্রাব্য কথার ন্যায়ই অবাস্তব। বাস্তব দুনিয়ায় মানুষ দুগ্ধের পরিবর্তে মদ্য সেবন করিতে অধিক উৎসুক, সেই সত্য বহুচর্চিত। গণমাধ্যম নেতিবাচক সংবাদ ও মন্তব্যের উপরে দাঁড়াইয়া ব্যবসায় সামলাইতেছে, এমন অভিযোগও এখন বহুশ্রুত। সমাজমাধ্যমেও সেই মন্তব্যের জনপ্রিয়তা বহু গুণ, যাহা কাহারও সম্পর্কে নেতিবাচক কথা বলিতেছে বা গালিগালাজ উস্কাইতেছে। মানুষে মুখে এই সকল ব্যাপারকে ‘ছি ছি’ বলিয়া আড্ডায় সরব হইতেছেন, কেবল নেতিবাচক সংবাদ আর পড়া যায় না দেখা যায় না শুনা যায় না বলিয়া গাঁধীজির বানরদের ন্যায় হস্ত দ্বারা ইন্দ্রিয়গুলি আবৃত করিতেছেন, তাহার পর অঙ্গুলির ফাঁক দিয়া জুলজুল করিয়া নিষিদ্ধ বস্তুর ন্যায় চাখিয়া লইতেছেন নেতিবাচক বার্তার উত্তেজক আবহ। নূতন বাঁধ উদ্বোধনের অপেক্ষা সেতু ভাঙিয়া পড়িবার বিবরণ এমনিই অধিক চমকপ্রদ, তাহা ব্যতীত ইহাতে নিন্দামন্দের দ্বারও উন্মুক্ত করিয়া দেওয়া যায়। এই সমাজে রাজনীতিও হইয়া দাঁড়াইয়াছে কেবল অন্যকে তীব্র দোষারোপ ও কদর্য অপমান করিবার লীলাস্থল, মঞ্চ বা ক্যামেরা বা টুইটে প্রতিদ্বন্দ্বীকে যথেচ্ছ অপদস্থ করিবার প্রবণতাই সপ্রতিভ নেতৃত্ব বলিয়া বিবেচিত হইতেছে। তাই ইতিবাচক প্রচার চালাইয়া অজনপ্রিয় ও অপাঙ্‌ক্তেয় হইয়া পড়িতে চাহিবে কোন নির্বোধ? অবশ্য কেহ কেহ নিজেকে এই অসৌজন্যের উৎসব হইতে দূরে রাখিয়াছেন অথচ তাঁহাদের প্রচারের তীক্ষ্ণতা কমে নাই। কিন্তু তাঁহাদের নাম শুনিলে মোদীজির ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া হইবে না।

কিন্তু ‘নেতিবাচক প্রচার’ কথাটির অন্য এক ব্যাখ্যাও করা যাইতে পারে। গণমাধ্যম যদি কেবল সুখবর প্রদান করে, সে তাহার কর্তব্য যথাযথ পালন করিল কি? পথে বহু গর্ত থাকা সত্ত্বেও যদি কেবল পথের মসৃণ অংশ লইয়া কথা বলা হয়, তাহা শুনিতে ভাল লাগিতে পারে, কিন্তু পথচারীর দুর্ভোগ একই থাকিয়া যায়। অভদ্রতা, ঔদ্ধত্য, বিকৃত মানসিকতার রোমহর্ষক কাহিনি বিক্রয় কখনওই সমর্থনযোগ্য নহে, কিন্তু ঢালাও ইতিবাচক প্রচারের মধ্যে যে ‘সকলই শান্তিকল্যাণ হইয়া আছে’ দ্যোতনা, তাহাও গণতন্ত্রের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। যাঁহারা প্রচার করেন, বা বিশ্লেষণ করেন, তাঁহারা অনেকেই চকিত চটুল নেতিবাচক কথা শানাইয়া তাৎক্ষণিক খ্যাতির পশ্চাতে ছুটিতেছেন, কিন্তু তাঁহাদের ছুড়িয়া ফেলিতে গিয়া, সমালোচনা বা কটু অথচ প্রয়োজনীয় নিন্দার পথ রুদ্ধ করিয়া দিলে, তাহা হইবে প্রগতিবিরোধিতার শামিল। ইতিবাচক প্রচার কথাটি শুনিতে চমৎকার, কিন্তু তাহার জন্য পূর্বে ইতিবাচক কার্য করা আবশ্যক। দেশ যদি অপদার্থ ও দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষে ভরিয়া যায়, বারংবার অমানবিক ও অনৈতিক ঘটনা ঘটে, তাহা হইলে যে ব্যক্তি সংবাদ পাঠ করিতেছেন, তিনি মহান কাণ্ডকারখানার কথা বিবৃত করিবেন কী করিয়া? প্রচার যদি সত্য ও শালীন হয়, তাহা হইলে তাহা আপনিই ইতিবাচক দ্যুতি বিকিরণ করিবে, সমস্যার সমাধান ত্বরান্বিত করিবে। তাই ইতিবাচক প্রচার লইয়া উপদেশ প্রদানের পূর্বে, ইতিবাচক কার্যাবলি সম্পাদনের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর থাকিয়া যায়। তাহা নহিলে, ইতিবাচক কথাটির অর্থ দাঁড়ায় মিথ্যা ও প্রীতিবাচক।

Campaign Media Social Media Viral Narendra Modi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy