Advertisement
E-Paper

একত্রে থাকার এই ছবি স্বতঃস্ফূর্ত

কাশ্মীরের আপাতদৃষ্টিতে একটা ছোট ঘটনা সেই উপলব্ধির সামনের দাঁড় করাল আমাদের। এক মুসলিম ও এক শিখ দুই সহপাঠী কন্যার কাহিনি এটা। সমরিন আখতারের কিডনি দরকার, সব কিছু ভুলে নিজের একটা কিডনি দান করতে এগিয়েছেন মনজ্যোত সিংহ কোহলি।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:০০
গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

চারিদিকে নানান খারাপ খবরের মধ্যে যখন কোথাও জীবনের উদ্‌যাপন দেখি, তখন আরও একবার নতশির হই। আরও এক বার সম্যক উপলব্ধি হয় যে ক্ষতচিহ্নগুলো দেখে ক্লান্ত ও হতাশ হই আমরা তার অতিরেকে জীবনের এক বিরাট অস্তিত্ব রয়েছে, যে অনন্ত প্রবাহে মন্দকে ছাপিয়ে শেষ পর্যন্ত থাকে ইতি-র জয়গান।

কাশ্মীরের আপাতদৃষ্টিতে একটা ছোট ঘটনা সেই উপলব্ধির সামনে দাঁড় করাল আমাদের। এক মুসলিম ও এক শিখ দুই সহপাঠী কন্যার কাহিনি এটা। সমরিন আখতারের কিডনি দরকার, সব কিছু ভুলে নিজের একটা কিডনি দান করতে এগিয়েছেন মনজ্যোত্ সিংহ কোহলি। বন্ধুর জন্য বন্ধুর পাশে দাঁড়ানোর এই কাহিনিতে হয়ত অভিনবত্ব নেই, কিন্তু অভিনবত্ব এর পরের লড়াইয়ের আখ্যানে। শিখ কন্যার পরিবার রাজি নয়, রাজি নয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। পারিবারিক স্নেহ ছাড়াও ধর্মগত কোনও কারণ এই বাধার পিছনে রয়েছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। মনজ্যোত্ স্থির করেছেন আদালতে যাবেন। পরিবার-পরিজন এবং এই বহির্বিশ্বের যাবতীয় প্রতিরোধকে দূর করে বন্ধুর জন্য কিডনি দান করবেনই তিনি।

দুই বন্ধুর এই কাহিনি কি একটা রূপকও না? দুই মানুষ পরস্পরের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিশ্বাসের হাত রেখে দাঁড়িয়ে রয়েছে— এই ছবিটাকে আরও একটু বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে ফেললে সেখানে আমাদেরই সমাজের প্রতিচ্ছবি দেখার কথা নয়? হিন্দু-মুসলিম-শিখ-খ্রিস্টান অথবা, বাঙালি-তেলুগু-মরাঠা-তামিল নানান ধর্ম নানান ভাষা নানান রুচি নানান আচারের অসংখ্য মানুষ আমরা একত্রে সৌহার্দ্যের বাতাবরণের থেকে আসিনি কি এ যাবত্? মাঝেমধ্যে বিভেদের স্ফূলিঙ্গ আগুন হয়ে দেখা দিয়েছে ঠিকই কিন্তু তার পরেও আবার আমরা এক হয়ে মিশে গিয়েছি ভারতীয়ত্বের মূল স্রোতে। সম্প্রতি আবার দেশেজুড়ে নানান ভঙ্গিমায় নানান রূপে বিভাজনের চেষ্টা চলছে ন্যক্কারজনকভাবেই। সেই চেষ্টার ঊর্ধ্বে উঠে মূল স্রোতে থাকাটা নিতান্ত জরুরি।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

মনজ্যোত্ ও সমরিনের এই আলোক উত্সারী কাহিনি মনে বল এনে দেয়। সমাজ যাঁদের নিয়ে তৈরি, নিতান্ত সাধারণ সেই মানুষ যে আসলে এই হাতে হাত ধরেই চলে, চলতে চায়, যেন সেই ছবিটাই ফুটে উঠল কাশ্মীরের প্রান্ত থেকে। বিভাজনের চেষ্টা হয়, একত্রে থাকার এই ছবি স্বতঃস্ফূর্ত। ভারতীয়ত্বের মূল ছন্দটা নিহিত রয়েছে এই দুই বন্ধুর গল্পের মধ্যেই। অসুরের পরাজয় যে অবশ্যম্ভাবী কারণে হয়ে থাকে, তার বীজটা আসলে মনজ্যোত্ ও সমরিনের প্রাণে।

জয়তু ভারত। জয়তু জীবন।

আরও পড়ুন: মুসলিম বন্ধুকে কিডনি দিচ্ছেন শিখ তরুণী, মানবতার উজ্জ্বল নজির কাশ্মীরে

Newsletter Kashmir Sikh Friendship Organ Donation Love Jammu & Kashmir Anjan Bandyopadhyay অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy