প্রতীকী ছবি
অতিমারির মোকাবিলায় বিশ্বে সর্বাধিক অনুভূত হইতেছে সামগ্রিক ব্যবস্থা (সিস্টেম) ও নেতৃত্বের অভাব— বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহিত যুক্ত এক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের এই বক্তব্যের সারবত্তা ভারতের নানা রাজ্যে উপলব্ধ হইতেছে। পশ্চিমবঙ্গেও রাজ্যবাসী দেখিতেছেন, রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসার বিধিব্যবস্থার ফাঁকগুলি কত মারাত্মক হইয়া উঠিতে পারে। এই রাজ্যে গোড়া হইতেই পরীক্ষার স্বল্পতা বিষয়ে প্রশ্ন উঠিয়াছে। জুলাইয়েও প্রতি এক লক্ষ জনসংখ্যায় সাত হাজারের কিছু অধিক পরীক্ষা হইয়াছে এই রাজ্যে, যেখানে দিল্লি করিয়াছে এক লক্ষে ৪৩ হাজার, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ু ২৫ হাজার। বস্তুত ঝাড়খণ্ড, বিহার ও উত্তরপ্রদেশ, এই তিনটি রাজ্যেই পরীক্ষার হার পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় কম। পরীক্ষা কম হইবার ফলে জনসংখ্যায় সংক্রমণের আন্দাজ পাইতে বিলম্ব হইয়াছে। তিন মাস পার করিয়া কলিকাতার কাছাকাছি জেলাগুলি সংক্রমণের ‘হটস্পট’ হইয়া উঠিয়াছে। কোথায় জনগোষ্ঠীতে সংক্রমণ ছড়াইতেছে, তাহার আগাম পূর্বাভাস থাকিলে হয়তো নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব হইত না।
পরীক্ষার যথেষ্ট ব্যবস্থা যেমন নাই, তেমনই পরীক্ষার ফল সরকারি নথিভুক্তির জন্য অপেক্ষা করিবার বিধি তৈরি হইয়াছে। পজ়িটিভ হইলে তাহা রোগীকে জানাইবার পূর্বে স্বাস্থ্যভবনের অনুমতি লইতে হইবে— কিন্তু সম্ভবত কর্মীর অভাবেই সেই প্রক্রিয়াটি দীর্ঘসূত্র। সঙ্কটজনক রোগীর চিকিৎসা শুরু করা যায় নাই, অস্ত্রোপচারের ঘর হইতে রোগীকে ফিরাইতে হইয়াছে, এমনকি মৃতদেহও শেষযাত্রার জন্য পরীক্ষার রিপোর্টের অপেক্ষারত। সংবাদে প্রকাশিত এই ঘটনাগুলি হইতে আন্দাজ হয়, আরও বহু রোগী পজ়িটিভ সন্দেহে হাসপাতাল হইতে প্রত্যাখ্যাত হইয়াছেন, বহু মানুষ অকারণেই পাড়ায় হেনস্থা হইয়াছেন। আতঙ্ক ও হতাশার এই বাতাবরণ হাসপাতালে যাইতে নিরুৎসাহ করিবার ফলে বহু রোগীর চিকিৎসা-বঞ্চনার কারণও হইয়াছে, সন্দেহ নাই। তাহার একটি ইঙ্গিত— পশ্চিমবঙ্গে অনূর্ধ্ব-৬০ বৎসর বয়সিদের অধিক মৃত্যু ঘটিয়াছে। এই বিষয়গুলি রাজ্য বা কেন্দ্র, কাহারও অজ্ঞাত নাই। কিন্তু নেতৃত্বের সঙ্কট এইখানেই যে, সেই সকল পরিসংখ্যান রাজনৈতিক চাপান-উতোরের উপাদান হইয়াছে, আরও কার্যকর বিধি তৈরি করিবার সূত্র হইয়া উঠে নাই। কেন্দ্রের তদারকি ও পরামর্শকে রাজ্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে করিয়াছে। আবার কেরল বা পশ্চিমবঙ্গ গোষ্ঠীসংক্রমণের সাক্ষ্য দিলে কেন্দ্র তাহা উপেক্ষা করিয়াছে।
চার মাস পার করিয়া অবশেষে করোনাভাইরাসের দ্রুত পরীক্ষা রাজ্যে শুরু করিতেছে কলিকাতা পুরসভা। তাহা প্রয়োজন ছিল সন্দেহ নাই, কিন্তু ‘না হইবার চাইতে বিলম্বে হইলে ভাল’, এই কথাটি এই ক্ষেত্রে বলা সহজ নহে। এই ব্যবস্থা পূর্বে করিতে বাধা ছিল না। যাহা সাধ্যায়ত্ত, তাহার অভাবে যদি একটিও প্রাণ চলিয়া যায়, তবে তাহা অতি-বিলম্ব, বঞ্চনারই শামিল। আর্তের অবহেলা দৈনন্দিন প্রত্যক্ষ করিলে নাগরিকের আস্থায় ঘাটতি পড়ে, যাহা অতিমারির সঙ্কটকে গভীর করে। করোনা-পরীক্ষা হইতে হাসপাতালে চিকিৎসা, বিধি-ব্যবস্থার ত্রুটিগুলি প্রতি দিনই স্পষ্ট হইতেছে। সেগুলি হইতে শিক্ষাগ্রহণ করিতে পারিলে পরবর্তী রোগীদের হয়রানি হয়তো খানিক কমিবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy