শুধু স্মৃতিবেদনায় ঐতিহ্য বাঁচে না
বারাসত এখন কলকাতার কাছেই। মহানগরের গা ঘেঁষা জেলা সদর শহরটার পিন কোড কবেই সাত লক্ষ একশো চব্বিশ পঁচিশ ছাব্বিশ হয়ে গেছে। এখন আর জেলা উত্তর চব্বিশ পরগনা না লিখে শহরবাসী কলকাতা ১২৪ ১২৫ ১২৬ লিখতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। হয়তো অবচেতন মনে একটু শ্লাঘাও বোধ করেন। অবশ্য চাকুরিজীবী ব্যবসায়ী পড়ুয়ারা তো অধিকাংশই কলকাতার দৈনিকযাত্রী। আর কত বাস কলকাতা এবং এই শহরের মধ্যে যাতায়াত করে!
আমার বারাসত শহরের অবস্থিতিকাল কমবেশি একুশ বছর। এই শহরের প্রাণকেন্দ্র চাঁপাডালি মোড়। দু’কদম হাঁটলেই বিজয়া সিনেমা হল। প্রেক্ষাগৃহটির প্রাচীনত্ব বা ঐতিহ্য বিষয়ে প্রবীণতর বাসিন্দারা তথ্য সরবরাহ করতে পারবেন। লক্ষ করেছি, বিজয়াতে বাংলা ছবি বেশি চলে। হালে একাধিক ঝাঁ-চকচকে মাল্টিপ্লেক্সের দৌলতে একটা শ্রেণির দর্শক কেনই বা এই হলগুলোতে বই দেখতে যাবেন? এই ভাবনার টানে একটা ভিন্ন চিন্তা উঠে এল মনে, একটা সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতার সূত্রে। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ‘শঙ্খচিল’ ছবিটি দেখতে দ্বিতীয় সপ্তাহের চতুর্থ দিন চারটের শোতে বিজয়াতে গিয়েছিলাম। প্রথম পদার্পণ। তীব্র দাবদাহে তখন শহর জ্বলছে। প্রেক্ষাগৃহের সামনে দাঁড়িয়ে আছে, ছাড়ছে অজস্র বাস ট্রেকার। তিনটে বেজে চল্লিশ। ম্যাটিনি শো শেষ হয়ে গেছে। অথচ কিন্তু হলের সামনে জনমানবহীন শূন্য ময়দান। মনে হল, ছবিটা কি উঠে গেল। টিকিট ঘর কোথায়? হা ঈশ্বর, দু-তিনটে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ঘুলঘুলি। এগিয়ে গেলাম। ইভনিং শোয়ের টিকিট আছে কি না জানতে চাওয়ায় ভেতর থেকে উত্তর ভেসে এল: কত টাকার দেব— ত্রিশ না চল্লিশ? মাল্টিপ্লেক্সের, নন্দন প্রিয়ার নিয়মিত না হলেও অনিয়মিত দর্শক। টিকিটের হার চমকে দিল তাই।
বহু দিন বাদে শুনলাম সেই ছবি শুরুর আগে দর্শকের চেতনা জাগিয়ে জোরালো বেল। কিন্তু ওপরে বা নীচে দর্শক কোথায়? লাইটম্যানকে জিজ্ঞেস করতে হাহুতাশ করলেন। সাকুল্যে পঞ্চাশ জন দর্শকও যদি প্রতি শোতে আসতেন, কথা ছিল। বললেন, দেব জিৎ প্রমুখদের ছবি হলে তাও হয়তো কয়েকটা সপ্তাহ। নইলে... তাঁর আশঙ্কা, এ ভাবে চললে...