Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু

অপূর্ব ঘোষের (‘ওর মতো বাঁচতে দিন’, ১৯-৬) সঙ্গে সহমত হতে পারলাম না। সন্তানকে যদি বাবা মা আঁকড়েই না থাকল, তবে সম্পর্কের ভিত্তি নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়।

শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৬ ০০:২৬

সন্তান মানুষ করা মানে বিনিয়োগ?

অপূর্ব ঘোষের (‘ওর মতো বাঁচতে দিন’, ১৯-৬) সঙ্গে সহমত হতে পারলাম না। সন্তানকে যদি বাবা মা আঁকড়েই না থাকল, তবে সম্পর্কের ভিত্তি নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। সনাতন ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে পশ্চিমি সংস্কৃতির তফাত বিস্তর। চিন্তনে মননে আধুনিক হওয়ার অর্থ কি পাশ্চাত্য অনুসারী হওয়া? পূর্বসূরির আত্মত্যাগ অস্বীকার করে নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করা? পশ্চিমিরা এখনও আশ্চর্য হয় এ দেশে তিন বা চার প্রজন্মকে একসঙ্গে বাস করতে দেখে, আমাদের সম্পর্কের বাঁধন মূল্যবোধ, দায়িত্ব, কর্তব্য এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া যার বুনিয়াদ। প্রতিষ্ঠিত সন্তান যদি বাবা মাকে বোঝা মনে করে সেই দায়িত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ছটফট করে তবে তাকে কুসন্তান ছাড়া আর কিছু বলা যায় কি?

এক সময় পিতা মাতা সন্তানের অবলম্বন থাকে, সময়ের পরিবর্তনে সন্তানকে ভূমিকা বদল করতে হয়। বাবা-মায়ের সাহচর্য যে কতটা মূল্যবান, এটা যে সন্তান অনুভব করতে পারেনি সে অতি হতভাগ্য। সন্তানের ভবিষ্যৎ-চিন্তায় সব বাবা মা প্রাণপাত করেন নিজেদের শখ শৌখিনতা বিসর্জন দেয়। বোধহয় সন্তানকে তাঁদের ভবিষ্যতের ‘বিনিয়োগ’ না ভেবেই।

পরিবার বলতে কি শুধুই নিজের স্ত্রী আর সন্তান? বাবা মা অপাংক্তেয় সেখানে? বাবা-মায়ের প্রতি দায়িত্ব পালন যদি বোঝা হয়, তবে স্ত্রীর প্রতি, নিজ সন্তানের প্রতি, আত্মীয় প্রতিবেশী বন্ধুবান্ধবের প্রতি যে ন্যূনতম দায়িত্ব পালন করতে হয় সামাজিক জীব হিসাবে, তা-ও তো বোঝাসদৃশ! লেখকের মতে, নিঃসঙ্গ বা মানসিক যন্ত্রণাময় জীবনের সমাধান বৃদ্ধাশ্রম। কিন্তু বৃদ্ধাশ্রমে আর পাঁচ জন বয়স্ক মানুষের সঙ্গ চার বেলার খাদ্য সংস্থান ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা পেলেই কি বাবা মায়ের মন থেকে সন্তানের অবজ্ঞা অবহেলা ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবে?

সুদীপা বাগচী। কৃষ্ণনগর, নদিয়া

॥ ২ ॥

২০২৫ সালের মধ্যেই দেশের বরিষ্ঠ নাগরিকের সংখ্যা কুড়ি কোটি ছুঁয়ে ফেলবে। এঁদের এক বিশাল অংশই হবেন জরাগ্রস্ত বা কঠিন ব্যাধিতে আক্রান্ত। বহু মানুষের থাকবে না চিন্তার স্বচ্ছতা, অর্থাৎ তাঁরা অপরের সাহায্য ছাড়া বেঁচে থাকতে পারবেন না। অপূর্ববাবু ঠিকই বলেছেন, সন্তানদের আষ্টেপৃষ্ঠে আঁকড়ে থাকলে সন্তানদের জীবনই দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।

লেখক বৃদ্ধাশ্রমের কথা বলেছেন। বাংলায় বেশ কিছু বৃদ্ধাশ্রম গজিয়ে উঠে চুটিয়ে ব্যবসা করছে। বিশাল অঙ্কের টাকা (কোনও কোনও ক্ষেত্রে দশ লাখ বা তার বেশি) গুনে সেখানে প্রবেশাধিকার মেলে। জমা টাকা বহু ক্ষেত্রেই ফেরত হয় না। মাসে মাসে গুনতে হয় মোটা টাকা। যত্নআত্তির সঙ্গে অল্প শাসন, বিস্তর অবহেলাও সেখানে দস্তুর।

আগামী কয়েক দশকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শূন্যতে পৌঁছলেও কোনও জাদুবলেই বৃদ্ধবৃদ্ধাদের সংখ্যাবৃদ্ধির হার কমানো সম্ভব নয়। বৃদ্ধাশ্রম নয়, এঁদের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। তা যদি না হয়, আগামী দিনে সমাজের সামগ্রিক চেহারা এই বিশাল অসহায় মানুষগুলোর ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়বে। অবিলম্বে দরকার বরিষ্ঠ নাগরিকদের জন্য সুসংহত নীতি প্রণয়ন এবং রূপায়ণ। দরকার বার্ধক্যজনিত চিকিৎসার জন্য জেলায় জেলায় পৃথক হাসপাতাল। শুধুমাত্র এঁদের দেখভাল করার জন্যই প্রয়োজন হবে বহু দক্ষ স্বাস্থকর্মীর। কী ভাবে এঁদের তৈরি করতে হবে, তা এখন থেকেই ভাবতে হবে। আইন প্রণয়ন করে বৃদ্ধাশ্রমগুলোকে নিয়ন্ত্রিত করতে হবে। অপেক্ষাকৃত সক্ষম বরিষ্ঠ নাগরিকদের কাজে লাগাতে হবে অক্ষম নাগরিকদের জন্য। ভবিষ্যতের সুস্থ সমাজের জন্য এ সবই আবশ্যিক।

অনিরুদ্ধ বসু। কলকাতা-৮৪

॥ ৩ ॥

কোনও বাবা মা-ই সন্তানকে যোগ্য মানুষ করে তুলতে যৌবনে যে ভাবে কঠোর পরিশ্রম করেন সেটা শুধুমাত্র বার্ধক্যে নিজেদের সন্তানের কাছ থেকে কতটা পাবেন, সেই আশায় নিশ্চয়ই নয়। সন্তান বাবা-মায়ের স্নেহ ভালবাসা মায়া মমতা থেকে নিজেকে কখনওই মুক্ত করতে চায় না, তাঁদের জীবন-অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাবার জন্য তাঁদেরই আঁকড়ে ধরতে চায়।

অতীতে আমরা যৌথ পরিবারে বাবা-মা ছাড়া আরও পাঁচ জনের সাহচর্যে বড় হয়েছি। আজকের যুগে স্বামী স্ত্রী দু’জনে কর্মরত থাকেন এবং আয়ের অধিকাংশটা ব্যয় করেন সন্তানদের পড়াশোনার মাধ্যমে প্রকৃত মানুষ করে তুলতে। তাঁদের পরবর্তী প্রজন্মকে দেখভাল কে করবে? শিশুকে বাবা-মা শুধু অর্থ দিয়ে মানুষ করতে পারেন না। সবার আগে তার দরকার স্নেহ ভালবাসা মায়া মমতা। সেই সব সে পাবে কোথা থেকে? একমাত্র পাওয়ার স্থান ঠাকুরদা ঠাকুমা দাদু দিদিমা। তাঁরাই যদি নিজেদের বৃদ্ধ-বৃদ্ধা আশ্রমে রাখেন, শিশু তো প্রকৃত মানুষ হতে পারবে না।

সবাই চায় সংসারের মধ্যে সকলকে নিয়ে নানাবিধ সাংসারিক কাজকর্ম ও নাতিনাতনিদের দেখভালের মাধ্যমে শেষ বয়সটা কাটাতে। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা আবাসনে যাঁরা যান, বাধ্য হয়ে যান।

স্বপনকুমার দে। কলকাতা-৩৫

॥ ৪ ॥

আমি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। অপূর্ববাবুর সঙ্গে আমি একমত যে, সন্তানকে বড় করে তোলা ও তাকে প্রতিষ্ঠিত করাকে কখনও বিনিয়োগ মনে করা উচিত নয়। সে এক জন স্বতন্ত্র ব্যক্তি। তার নিজস্ব মতামত আছে। তার নিজস্ব ভাবনা, পছন্দ-অপছন্দ আছে। তার উপর নিজের পড়ন্ত বেলার সব ভার, দায়-দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়। সঙ্গে সঙ্গে সন্তানেরও চিন্তা করা উচিত বাবা-মা প্রবীণ নাগরিক হলেও তাঁদের একটা স্বতন্ত্র ইচ্ছা-অনিচ্ছা ভাবনাচিন্তা থাকতে পারে। সন্তান নিজের সুবিধার্থে প্রবীণ বাবা-মাকে তাদের ক্ষুদ্র সংসারে ব্যবহার করবে, এটাও আকাঙ্ক্ষিত নয়।

এখন অধিকাংশই ক্ষুদ্র পরিবার। কর্তা-গিন্নি ছোট পরিবার গঠনের পরেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক সুবিধা বা কর্মক্ষেত্রের সুবিধার্থে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে মূল পরিবার থেকে। মা-বাবা নিজেদের মতো করে বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করেন। কিছু দিন পর স্বামী-স্ত্রী উভয়েই কর্মরত হওয়ায় সংসােরর, বিশেষত নতুন আগন্তুকের জন্য ডাক পড়ে আপনজন সেই প্রবীণ বাবা-মার। বাধ্য হন তাঁরা স্নেহের সন্তানের ডাকে সাড়া দিয়ে তাদের ইচ্ছা পূরণ করতে। নিজেদের ইচ্ছা, চাহিদা পদদলিত হয়। কখনও কখনও সন্তানের ইচ্ছাপূরণে মা-বাবা একে অন্যের থেকে বিচ্ছিন্ন ভাবে শেষ জীবন কাটাতে বাধ্য হন। এই বিষয়গুলিও বিবেচনা করা দরকার।

গোপালচন্দ্র সাহা। চাঁদপাড়া বাজার, উত্তর চব্বিশ পরগনা

letter to editor
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy