প্রণয় শর্মা “হারিয়ে যাচ্ছে ‘কমরেড’” (২-৯) শীর্ষক উত্তর-সম্পাদকীয়টি চিনের প্রেক্ষিতে আলোচনা করেছেন ঠিকই, কিন্তু গোটা বিশ্বের বামপন্থী তথা কমিউনিস্ট শিবিরেই বিষয়টি ভীষণ তাৎপর্যপূর্ণ। শতবর্ষ আগে তৈরি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি বহু ভাঙা-গড়ার মধ্যে দিয়ে আজ চলেছে। তবে ‘কমরেড’ সম্বোধনটি সেই দলগুলির মধ্যে আজও চালু আছে। প্রায় প্রত্যেকেই সাম্যবাদের কথা বলেন, লাল শালুতে কাস্তে হাতুড়ি প্রতীক আঁকেন। কিন্তু এক গোষ্ঠী অন্য গোষ্ঠীর সদস্যদের অনেক সময় কমরেড বলতে নারাজ।
পুঁজিপতি শ্রেণি নিয়ন্ত্রিত বিশ্বে প্রথম আঘাত হেনেছিল লেনিনের যে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েট ইউনিয়ন, তা-ও আজ আর নেই, দীর্ঘপথ পেরিয়ে তৈরি হয়েছে রুশ প্রজাতন্ত্র। আবার জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে চিনা কমিউনিস্ট পার্টির তৈরি গণপ্রজাতন্ত্রী চিনও আজ ‘সমাজতান্ত্রিক’ বাজার অর্থনীতি চালুর মধ্যে দিয়ে সমাজতন্ত্রের বহিরঙ্গের কোনও পরিবর্তন না করেই, অন্তর্বস্তুকে ধূলিসাৎ করার চেষ্টা কার্যকর করেছে, যা বর্তমানে ফুলে ফলে বিকশিত হয়ে বিশ্বজোড়া পুঁজিবাদকেই সমৃদ্ধ করেছে। কাজেই ‘কমরেড’ বলা চালু করার বাসনা যে চিনের জনসাধারণের কাছে অর্থহীন, তা শাসকও বোঝেন।
চিন ও রাশিয়ার মধ্যে ঐতিহাসিক মহাবিতর্ক এবং কমিউনিস্ট তৃতীয় আন্তর্জাতিকের অবসানের পর থেকে গোটা বিশ্বের কমিউনিস্টরা প্রধানত দু’টি শিবিরে বিভক্ত হয়ে যায়। ভারতে সিপিআই, সিপিআই(এম) তো ছিলই, আরও পরে যুক্তফ্রন্ট সরকারের আমলে সিপিআই(এম)-এর দার্জিলিং জেলা কমিটির কানু সান্যাল, জঙ্গল সাঁওতাল প্রমুখের নেতৃত্বে নকশালবাড়ি অঞ্চলে ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে জমি বণ্টনের মধ্যে দিয়ে কমিউনিস্ট পার্টি আর এক বার বিভাজিত হয়ে সিপিআই(এমএল) তৈরি হয়। এই বিভাজন ‘কমরেড’ কথাটির গভীরতা বাড়িয়ে দেয়। ভারতে প্রথমে সিপিআই ভেঙে সিপিআই(এম) হওয়ায় শেষের দলটি পূর্বের দলটির সদস্যদের ‘কমরেড’ বলতে দ্বিধান্বিত।
আজ ভারত তথা বঙ্গের কমিউনিস্ট শিবির বা বামপন্থীদের এতটাই বিচ্ছিন্নতা এবং তার পাশাপাশি পুঁজিবাদের হাত ধরে চরম ডানপন্থীদের উত্থান যে, সাধারণ মানুষের মধ্যে ‘কমরেড’ কথাটি ব্যঙ্গার্থেও ব্যবহৃত হতে দেখি। তাই এটির গুরুত্ব শুধু চিনে হারিয়ে গিয়েছে তা নয়, একদা বাম আন্দোলনের ভিত্তিভূমি এ বঙ্গের মানুষের কাছেও ক্রমশ ফিকে হচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে।
তাপস কুমার, কলকাতা-৫৪
স্বপ্নহারা
প্রণয় শর্মার প্রবন্ধ “হারিয়ে যাচ্ছে ‘কমরেড’” প্রসঙ্গে কিছু কথা। সম্ভবত এই শব্দটির হারিয়ে যাওয়ার সঙ্গে একটি সমাজ দর্শন ও এক দল তরুণের সমাজ বদলের স্বপ্ন হারিয়ে যাওয়ারও একটা নিবিড় সম্পর্ক এবং পর্যবেক্ষণ রয়েছে। সম্পর্কের গভীরতা বোঝাতে সম্বোধনের গুরুত্ব অপরিসীম। সময়ের ব্যবধানে সম্বোধনেরও নানা পরিবর্তন যে হয়নি, তাও নয়। পরিবর্তনকে স্বাভাবিক ভাবেই মেনে নিতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তবে ‘কমরেড’ সম্বোধনের পরিবর্তন বা হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টির সঙ্গে সমাজ দর্শনের এমন একটি ভাবনা জড়িত রয়েছে, যার প্রভাব অস্বীকার করার উপায় নেই।
এই শব্দটি যদি শুধুমাত্র সাধারণ বন্ধু-বান্ধবী বা স্কুলের বন্ধু-বান্ধবীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত, তা হলে এর হারিয়ে যাওয়া বা গুরুত্ব কমে যাওয়া নিয়ে এত উৎকণ্ঠা প্রকাশের কিছু ছিল না। বামপন্থী ভাবনার মানুষের বসবাস পৃথিবীর যে সমস্ত দেশে রয়েছে, সেখানে তাঁরা একে অপরকে সম্বোধন করতে শব্দটি আন্তরিকতার সঙ্গে ব্যবহার করে থাকেন। এ কথা বলাই যায়, শব্দটি বিশ্বব্যাপী বামপন্থী মানুষের মধ্যে নৈকট্যের বন্ধন দৃঢ় করতে সমর্থ হয়েছে। সম্বোধনের ক্ষেত্রে এই শব্দটি যেমন বয়সের ব্যবধান ঘুচিয়ে দেয়, অন্য দিকে নারী পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই নির্দ্বিধায় ব্যবহার করা চলে। যার গভীরে রয়েছে সহযোদ্ধাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পথ চলার গভীর অনুভূতি ও সহমর্মিতা। দেশ বা ভাষা আলাদা হলেও শব্দটির গ্রহণযোগ্যতা এতটুকুও হ্রাস পায় না। অর্থাৎ এই শব্দটি এখন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়ে গিয়েছে। ভিয়েতনাম, কিউবা-সহ সারা বিশ্বের মানুষের লড়াইয়ের সঙ্গে আমাদের অনেকেরই যে একাত্মতাবোধ গড়ে উঠেছে, তা ‘কমরেড’-সুলভ সহযোদ্ধার মানসিকতা থেকেই।
চিনের অর্থনীতি যখন পুঁজির ক্ষমতার কাছে আত্মসমর্পণ করে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়ে ধনতান্ত্রিক দুনিয়ার স্বঘোষিত অধীশ্বর আমেরিকাকে জোর টক্কর দিচ্ছে, তখনও তারা শব্দটির অন্তর্নিহিত ভাব ও শক্তিকে অস্বীকার করতে পারছে না। পারছে না সমাজতন্ত্রের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে অস্বীকার করতে। আর তা পারছে না বলেই হয়তো শব্দটির হারিয়ে যাওয়া ঠেকানোর জন্য এমন মরিয়া প্রচেষ্টা।
মুনাফা কেন্দ্রিক উৎপাদন ব্যবস্থা সমাজে ‘সম্পদ বণ্টনের নকশা’ পাল্টে দেয়। চিনে এখন সেটাই হচ্ছে। ‘সম্পদ বণ্টন’-এ বৈষম্য বাড়ছে। যা সমাজতান্ত্রিক ভাবনার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। চিনের অর্থনীতি এখন মুনাফার দৈত্যের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। ফলে ধনতান্ত্রিক দেশ আমেরিকা কয়েকশো বছরের চেষ্টায় যেখানে পৌঁছে গোটা বিশ্বকে চোখ রাঙায়, বিপ্লব সংগঠিত করার পরে একটি সমাজতান্ত্রিক দেশ প্রশাসনিক দক্ষতা ও পুঁজিবাজারকে কাজে লাগিয়ে মুনাফা অর্জনের পথে মাত্র কয়েক দশকের চেষ্টাতেই সেই উচ্চতা স্পর্শ করে ফেলেছে। গোটা বিশ্বে যা নজিরবিহীন। এর জন্য চিনকে আমেরিকার মতো অবিরাম মেধাশক্তি আমদানির পথে হাঁটতে হয়নি। দেখিয়ে দিতে পেরেছে কী ভাবে নিজের দেশের মেধা ও শ্রমশক্তিকে কাজে লাগিয়ে সেই উচ্চতায় পৌঁছে যাওয়া সম্ভব। কিন্তু দুর্ভাগ্যের হলেও সত্য যে, চিন সমাজতন্ত্রের আদর্শের পথ অনুসরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই যখন সমাজে শ্রেণিভেদ কম ছিল, তখন ‘কমরেড’ সম্বোধন যতটা মানানসই ছিল, আজ আর ততটা না থাকাই স্বাভাবিক। এখন যদি ছেলেমেয়েরা শব্দটিকে ঠাট্টার ছলে ব্যবহার করে, তা হলে দোষের কিছু থাকে কি? এঁদের পূর্বপুরুষরাই সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন দেখে ও দেশে বিপ্লব সংঘটিত করেছিলেন। তার পরিণতি যদি এমন হয়, তা হলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তো হবেই। কমিউনিস্ট পার্টি নির্দেশ দিয়ে ‘কমরেড’ সম্বোধন হয়তো আরও কিছু দিন টিকিয়ে রাখতে পারবে। কিন্তু মানুষ মন থেকে মেনে নেবে?
রতন রায়চৌধুরী, পানিহাটি, উত্তর ২৪ পরগনা
রেলের বর্জ্য
লোকাল ট্রেনে প্রচুর ফেরিওয়ালা, তাঁদের প্রচুর গ্রাহক। খাওয়ার পরে প্লাস্টিকের প্যাকেট, কাগজের বাটি, চায়ের কাপ, ফলের খোসা সবই কামরায় ফেলে দেন, কামরা প্রায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে ওঠে। প্রতিটি ট্রেন আর প্রত্যেক স্টেশন তো পরিষ্কার করা সম্ভব নয়। তাই রেল কর্তৃপক্ষ যদি প্রতি কামরায় নির্দিষ্ট স্থানে একটি করে ডাস্টবিন রাখেন, এবং সেই ডাস্টবিনের নোংরা কয়েক ঘণ্টা অন্তর ফেলার ব্যবস্থা করেন, তা হলে কিছুটা পরিষ্কার থাকতে পারে কামরাগুলি।
তবে এই ব্যবস্থা যে লোকজন মেনে চলবেন তা জোর দিয়ে বলা যায় না। জরিমানার ব্যবস্থা করে কড়া থাকতে হবে। এক জন সাধারণ নাগরিক হিসাবে আমার এই প্রস্তাব যদি রেল কর্তৃপক্ষ বিবেচনার সঙ্গে দেখেন তবে আনন্দিত হব।
ঋতুপর্ণা ভট্টাচার্য, চুঁচুড়া, হুগলি
বন্ধ এটিএম
কল্যাণীর মুখ্য ডাকঘরের এটিএম কাউন্টারটি সুদীর্ঘ ছয় মাস বন্ধ। অথচ বছরে এটিএম-এর বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ টাকা কেটে নেওয়া হল। ডাকঘরে জানিয়ে ফল হয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
সুরজিৎ বিশ্বাস, কল্যাণী, নদিয়া
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)