Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: আর্তি ফুটে উঠুক

একই ধরনের আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে প্রতিবেদনের শিরোনামে: ‘সীমান্ত টপকে’। প্রায় দশ লক্ষ মায়ানমারবাসী রোহিঙ্গা দেশছাড়া হয়েছেন এক দীর্ঘ সময় জুড়ে।

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৮ ০০:১৮
Share: Save:

‘বাংলাদেশ থেকে জলপথে সন্দেশখালি হয়ে রোহিঙ্গাদের এ রাজ্যে প্রবেশ করানো হচ্ছে’ (‘সীমান্ত টপকে রোহিঙ্গার ঢল’, ১৪-৩)— এই তথ্যটি নানান দিক থেকে খুবই অ-নির্ভরযোগ্য এবং আপত্তিকর।

আমি নিজে দু’বার হাড়দহের রোহিঙ্গা শিবিরে গিয়েছি, এক বার দিল্লির জামিয়ানগরের শাহিনবাগ শিবিরে গিয়েছি। দেখেছি, আশ্রিত শরণার্থীদের ‘রাষ্ট্রসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা’ ইউএনএইচসিআর-এর কার্ড রয়েছে। এই কার্ড দিল্লির ইউএনএইচসিআর এবং এফআরআরও দফতর থেকে সরাসরি পেতে হয়। শরণার্থী রোহিঙ্গারা দরখাস্ত করলে ওটা পেতে প্রায় ছ’মাস সময় লাগে। হাড়দহে যাঁদের সঙ্গে দেখা হয়েছে, প্রত্যেকের সেই কার্ড রয়েছে। দিল্লিতে উপস্থিত থেকেই সেই কার্ড পেতে হয়। তা হলে বাংলাদেশ থেকে জলপথে ‘প্রবেশ করানো’ হয়েছে, তথ্যটা টেকে কী করে?

একই ধরনের আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে প্রতিবেদনের শিরোনামে: ‘সীমান্ত টপকে’। প্রায় দশ লক্ষ মায়ানমারবাসী রোহিঙ্গা দেশছাড়া হয়েছেন এক দীর্ঘ সময় জুড়ে। যে প্রক্রিয়ায় সেই ঘটনা ঘটেছে তাকে রাষ্ট্রসংঘ ‘জেনোসাইড’-তুল্য বলেছে এবং এটাও বলেছে যে রোহিঙ্গারা এই মুহূর্তে ‘বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত সংখ্যালঘু’। তাঁদের মধ্যে অনেকের প্রাণ চলে গিয়েছে। বাকিরা দেশ ছেড়ে যে যেখানে পারছেন আশ্রয় নিচ্ছেন। এখানে ‘সীমান্ত টপকে’ বিশেষণটা খুবই অমানবিক। রোহিঙ্গারা আজ যে-ভাবে আসছেন, সে-ভাবেই তো এ-দেশে এসেছিলেন শ্রীলঙ্কার তামিল শরণার্থীরা, পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা-হাজংরা, বাংলাদেশের (পূর্বতন পূর্ব পাকিস্তানের) বাঙালিরা; তিব্বতি, আফগান, নেপালি, শান, শিন শরণার্থীরা... আরও কত ভিন্ন ভিন্ন দেশ থেকে উৎখাত হওয়া মানুষ। ‘সীমান্ত টপকে’; ‘প্রবেশ করানো হচ্ছে’ বিশেষণগুলো যেন অনুপ্রবেশের ব্যঞ্জনা তৈরি করছে বলে মনে হচ্ছে।

লেখা হয়েছে, ‘প্রশাসন রোহিঙ্গাদের পরিচয়পত্র আসল কি না তা খতিয়ে’ দেখছে। প্রশাসনের কাজই তো হল সব খতিয়ে দেখা। এ ভাবে কি নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে একটা অহেতুক সন্দেহের বাতাবরণ তৈরি করা হচ্ছে না?

রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরানো নিয়ে একটা প্রক্রিয়া শুরু হতে চলেছে। ১৭ জানুয়ারি ২০১৮, নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রসংঘ সদর দফতরে মহাপরিচালক বলেছেন, ‘এ কাজ হতে হবে স্বেচ্ছায়।’ এর সঙ্গে ‘পুশব্যাক’ বিষয়টা মোটেই মানানসই নয়। তার মধ্যে একটা জবরদস্তি রয়েছে। ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্টে এ বিষয়ে একটা মামলাও চলছে। আর পুশব্যাক করা হচ্ছে/হবে কোথায়? ভারত সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে, সেটা তো রোহিঙ্গাদের নিজের দেশ নয়। তাঁদের ফিরতে হবে নিজের দেশে, নিজের গ্রামে, নিজের ভিটেয়। সেটা যে-দিন স্বস্তিজনক ভাবে হবে, সে-দিনই তাঁদের আর অন্য দেশে আশ্রয়ের প্রয়োজন হবে না।

সন্দেশখালি হয়ে জলপথেও যদি বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে রোহিঙ্গারা এ-দেশে আশ্রয়ের খোঁজে এসে থাকেন, তা হলেও আমাদের ভাবা দরকার, কতখানি অসহায়, আর্ত সেই মানুষেরা। প্রতিবেদনে কেন সেই আর্তি ফুটে ওঠে না? প্রতিবেদক কি ১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান (অধুনা বাংলাদেশ) থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থী মানুষের কথা ভুলে গিয়েছেন? সে-দিন কি আমরা বাঙালিরা ‘ঘাঁটি গেড়েছেন’ ধরনের শব্দগুলো ব্যবহার করতে পেরেছিলাম? আজ করি কোন মানবিকতার বিচারে?

জিতেন নন্দী কলকাতা-১৮

পচা চাল

‘পচা চাল নিয়ে দ্বন্দ্বে সরকার, ব্যবসায়ীরা’ (২৩-২) খবরে লেখা, খাদ্য নিয়ামক বলেন, ‘ডিস্ট্রিবিউটরেরা সরকারের বদনাম করার চেষ্টা করছেন। প্রতি তিন-চার মাস অন্তর পুরনো চাল পালটানো হয়। তা রেশনে পাঠানোর জন্য নয়।’ এই মন্তব্য ঘিরে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়— পুরনো চাল পালটানো হয়— এই পুরনো চাল কোথায় যায়? এই পুরনো চাল ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে রেশনভোগী মানুষদেরই দেওয়া হয় না তো? ক’দিন আগে নদিয়ার রেশন-গ্রাহকরা বিধায়ক মহুয়া মৈত্রের উপর রেশনের পচা চাল ছুড়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। খাদ্য নিয়ামকের কথায় যদি ধরে নেওয়া যায় যে ‘ডিস্ট্রিবিউটরেরা সরকারের বদনাম করার চেষ্টা করছেন’— তা হলে ১) গ্রামবাসীরা ডিস্ট্রিবিউটরদের উপর চড়াও না হয়ে বিধায়কের উপর চড়াও হবেন কেন? ২) ডিস্ট্রিবিউটরদের হাতেই বা পুরনো চাল ঘুরে আসছে কার তত্ত্বাবধানে?

খাদ্য নিয়ামকের কথা যদি মেনে নিইও, তবে প্রশ্ন ওঠে— ডিস্ট্রিবিউটররা যাতে অসাধুতা না করে, সেই দেখভালের দায়িত্ব যাঁদের, তাঁরা নজরদারিতে চূড়ান্ত ব্যর্থ হলেন, সেই দায় কি খাদ্য নিয়ামক এড়াতে পারেন? তিনি তো সরকারি কর্মচারী, তিনি কী করে রাজনৈতিক নেতাদের মতো কথা বলেন?

তাঁর কথার প্রেক্ষিতে আরও আশ্চর্য হয়ে বলতে হয়— এত দিন কোথায় ছিলেন তিনি? নির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়ে (ক’দিন আগে মিড-ডে মিলের চাল দেখিয়েও কিছু মানুষ মুখ্যমন্ত্রীর নজরে সমস্যাটা এনেছিলেন) যখন ‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রেশন ডিলার-ডিস্ট্রিবিউটরদের গুদামে শুরু হয়েছে টানা তল্লাশি’ এবং খাদ্য দফতর পোষিত সেই সব ডিলার-ডিস্ট্রিবিউটরদের গুদাম থেকে সত্যি সত্যিই কালসাপ (পড়ুন পচা চাল) বেরিয়ে পড়েেছ, তখন খাদ্য নিয়ামকের নিয়মতান্ত্রিক কথাবার্তা শুরু হয়ে গেল। এই ঘটনা কি এটাই প্রমাণ করে না যে, মুখ্যমন্ত্রীকেই সব দিকে নজর রাখতে হবে? তাঁকেই যদি নজরদারি করতে হয়, তা হলে খাদ্য দফতরের কর্মী-অফিসারেরা কেবল বসে বসে মাইনেটাই নেবেন?

মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করব: অসাধু ডিলার-ডিস্ট্রিবিউটররা দোষী সাব্যস্ত হলে, খাদ্য দফতরের যে-সব কর্মী-অফিসাররা সরকারের জনসেবা কর্মসূচি রূপায়ণে (২২ টাকা ভরতুকি দিয়ে দু’টাকা কেজি দরে গরিব মানুষদের দেওয়া) প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে, তারাও যেন রেহাই না পায়।

তপন ভদ্র হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা

বামপন্থা জরুরি

অশোক মিত্রের লেখাটি সম্পর্কে দুটি চিঠি প্রকাশিত হয়েছে (১৫-৩)। ঠিকই, ইংরাজি উঠিয়ে দেওয়া হিমালয়প্রমাণ ভুল। কিন্তু বাংলায় বাম রাজনীতি সম্পর্কে বইয়ের সংখ্যা কম নয়। অনেক দিন থেকেই কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় রাজনীতি-বিজ্ঞান পড়ানো হচ্ছে এবং তাতে বাম রাজনীতির জন্যে মোটা নম্বর বরাদ্দ আছে। সুতরাং ইংরাজি উঠিয়ে দেওয়ার সঙ্গে বাম রাজনীতি পঠনপাঠনের সম্পর্ক নেই। আসলে বেশ পরিকল্পনা করেই যুবসমাজকে আত্ম-সর্বস্ব দর্শনে দীক্ষিত করে বিপথগামী করা হয়েছে, কারণ ঠিক মতবাদে বিশ্বাসী ছাত্র-আন্দোলন ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় খুবই ভয়ের কারণ। বামপন্থা না থাকলে কী হবে, এ-বিষয়ে উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ আছে। বহু আন্দোলনে সমাজ কিন্তু পরিবর্তিত হয়নি। আজও সমাজের বিভাগগুলি একই রকম, অতি ধনী, ধনী, উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, দরিদ্র ও হতদরিদ্র। আজও সমাজে জোর যার মুলুক তার নীতিই প্রচলিত। আজও ‘বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে।’ ঠিক বামপন্থাই পারে আদর্শ সামাজিক পরিবর্তন আনতে, কারণ বামপন্থা মানেই তো প্রচলিত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ। বামপন্থীরা সাময়িক ভাবে সংসদীয় ব্যবস্থায় থাকতে পারেন তাঁদের নীতি ও আদর্শের প্রচার ও প্রসারের জন্য। ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত কোনও সাফল্যের মাপকাঠি নয়। এ কেবল শহরকেন্দ্রিক দুর্নীতির বিকেন্দ্রীকরণ। গ্রামে মোটরবাইক বাহিনীর আবির্ভাব। এ বিষয়ে কুমার রাণার ‘ওঁদের কাছে শিক্ষা নিন’ (১৪-৩) লেখাটি প্রণিধানযোগ্য, যেখানে তিনি বলেছেন, ‘বামপন্থা নিজেকে সবচেয়ে ভাল ভাবে মেলে ধরতে পারে রাস্তায়’, নিপীড়িত শ্রেণির গণআন্দোলন সংঘটিত করে।

বৈদ্যনাথ মুখোপাধ্যায় কলকাতা–১০

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rohingyas infiltration suspicion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE