Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: শ্রমের মর্যাদা

এখানে শ্রমের মর্যাদা আমরাও ভাল ভাবে দিচ্ছি। স্থানীয় পুর প্রশাসনের অধীনে অনেক বাঙালি শিক্ষিত যুবককেও ঝাড়ুদার ও আবর্জনা নিষ্কাশনের কাজ করতে দেখছি

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৮ ০০:০০

সুগত মারজিৎ ‘কে বেকার, কে নয়’ (১-১১) নিবন্ধে আমেরিকায় এক বাঙালি ছাত্রের আংশিক চাকরি, মৃতদেহ মর্গে নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে সে দেশে শ্রমের মর্যাদার গুণগান করেছেন। বিষয়টি যথার্থ, দ্বিমত নেই। আমাদের এখন শিরে সংক্রান্তি, অসংখ্য বেকার। তাই এখানে শ্রমের মর্যাদা আমরাও ভাল ভাবে দিচ্ছি। স্থানীয় পুর প্রশাসনের অধীনে অনেক বাঙালি শিক্ষিত যুবককেও ঝাড়ুদার ও আবর্জনা নিষ্কাশনের কাজ করতে দেখছি। কিন্তু আর একটা উদাহরণ দিচ্ছি। মেয়েরাও পিছিয়ে নেই। বছর দশেক আগের কথা। ঔরঙ্গাবাদ মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের কাছ থেকে শহরের দাবিহীন মৃত মানুষের শবদেহ দাহ করা বা কবর দেওয়ার মতো কাজের বরাত পেয়েছিল মেয়েদের একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী। গা ঘিন‌ঘিন করার মতো কাজ, তবু মেয়েরা ভয় পায়নি। ডাক পাওয়া মাত্রই জাফরানি রঙের পোশাক পরা মেয়ের দল গিয়ে পচা-গলা, ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ দখলে নিতে। সাময়িক শবাগারে মৃতদেহটি স্নান করিয়ে সাদা কাপড়ে ঢেকে দেওয়া হত। তার পর, যেমন যেমন প্রয়োজন, ধর্মাচরণ করে মৃতদেহ দাহ বা কবর দেওয়া হত।

রঞ্জিতকুমার দাস
বালি, হাওড়া

কাজের মূল্য


সুগত মারজিতের লেখা ‘কে বেকার কে নয়’ (২-১১) খুবই যুক্তিগ্রাহ্য। তবে শ্রমের মর্যাদা সম্পর্কে কিছু কথা ভাবা দরকার। আমাদের দেশে ঘরের কাজের লোক পাওয়া যায় না সত্যি। কিন্তু আমরা যদি দেখি সারা দিন বাড়ি বাড়ি কাজ করা ব্যক্তিটি কী ভাবে জীবন যাপন করছেন, সেটা ভাবার আছে। আমরা ওঁদের ঠিকমতো পয়সা দিতে নারাজ, অথচ তাঁদের শ্রমে আমাদের জীবন অনেক আরামদায়ক হয়। ধরা যাক বাড়ি বসে হোম ডেলিভারি পাচ্ছি, আরামে আছি। কথা বলে দেখেছি এই হোম ডেলিভারি বয়রা মাসে পেট্রল খরচ সমেত ১৫০০০ টাকার মতো পায় পুণের মতো শহরে। আজকের দিনে, পুণের মতো শহরে এটা কতটা যুক্তিযুক্ত ভাবা দরকার। লোকে বলতে পারেন খেতে তো পাচ্ছে! আমার মতে এটা কুযুক্তি। আমার সীমিত ইউরোপ ও আমেরিকা ভ্রমণের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, আমাদের মতে তথাকথিত নিম্নমানের কাজ করা লোকের একটা ঠিক ভাবে বাঁচার মতো রোজগার আছে। এমএসএমই (মাইক্রো, স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজেস)-কে আমরা খুবই গুরুত্ব দিই। কিন্তু তারা কী ভাবে সস্তায় জিনিস তৈরি করে সেটা কি খেয়াল করেছি? অনেকটা কম মজুরি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থেকে। তাই, কাজের প্রতি মর্যাদা বাড়াতে গেলে প্রতিটি কাজের প্রকৃত মূল্য দিতে হবে, বাজার অর্থনীতির ওপর ছেড়ে দিলে হবে না, অন্তত আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে।


প্রবীর বন্দ্যোপাধ্যায়
গোল্ড ফিঙ্গার অ্যাভিনিউ, পুণে

উপায় বাতলান


সুগত মারজিৎ লিখেছেন “অনেকে সরকারি চাকরি খোঁজেন নিশ্চয়তার টানে, ফাঁকি দিতেও”। কী অসম্ভব বাস্তবতা বর্জিত কথা! এ রকম কথা এক জন শিক্ষিত বেকার যুবকের পক্ষে খুবই অসম্মানের, গর্হিত! আর একটা খুব সাধারণ প্রশ্ন: শুধু শুধু, যদি উপায় থাকে, কেন কেউ অনিশ্চয়তার চাকরি খুঁজবে? কী উৎসাহে? আর নিশ্চয়তার চাকরি খোঁজাটা অর্থনীতির কোন যুক্তিতে পরিত্যাজ্য হল? এই সস্তা শ্রম আর চির-বেকারত্বের দেশে বেকারদের কোনও ‘পছন্দ’ নেই! কেন এক জন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট, ইঞ্জিনিয়ার ছেলে পিয়নের চাকরির পরীক্ষায় বসে? কেন এক জন ইংরেজিতে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট উপযুক্ত চাকরির অভাবে আত্মহত্যা করে? আশ্চর্যের ব্যাপার গোটা লেখাটায় কোথাও এখনকার এই কর্মহীনতা, গণ-ছাঁটাই, চাকরির সুযোগ মারাত্মক ভাবে কমে যাওয়া (সরকারি বা বেসরকারি), যা নিয়ে গুণীজনরা আজ চিন্তিত, সে নিয়ে অর্থনীতি দৃষ্টিভঙ্গি প্রসূত কোনও আলোচনা পেলাম না। পেলাম না, আমাদের মতো জটিল অর্থনীতির দেশে বেকারত্ব, ছদ্ম-বেকারত্ব, আধা-বেকারত্ব ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কোনও মূল্যবান আলোকপাত। যেন এ রকম কোনও সমস্যাই এ দেশে আজ নেই! শুধু আছে ‘কাজে ফাঁকি দিতে কিছু শিক্ষিত বেকার’!
আসলে কর্মহীনতার সঙ্গে অসাম্যের যে একটা ওতপ্রোত সম্পর্ক আছে সেটা মারজিৎবাবু মানতেই চান না, তাই তার উল্লেখও নেই। উনি উল্লেখ করেন কী ভাবে এক জন ছাত্র আমেরিকায় পড়তে গিয়ে বাড়ি আসার খরচ জোগাড় করার জন্য মর্গে মৃতদেহ বওয়ার চাকরি করত। যে কোনও কাজের প্রতি এই সম্মানের জন্য তিনি পশ্চিম দেশকে কুর্নিশ করেন। আমরাও করি। শুধু কাজকে নয়, তার পারিশ্রমিকের জন্যেও। এ অভাগা সস্তা শ্রমের দেশের বেকাররা কল্পনাও করতে পারবে না সেই পারিশ্রমিক। একটা উদাহরণ দিই: সুইডেন নামক দেশটিতে ২০১৫ সালের একটি হিসেবে এক জন বাসচালকের পারিশ্রমিক আমাদের বাসচালকদের থেকে ৫০ গুণ (না, ছাপার ভুল নয়) বেশি! আমাদের বাসচালকদের সঙ্গে পার্থক্যটা মোটামুটি হিসাবে গুণীজন একটু হিসেব করে নেবেন! হ্যাঁ, কোনও কাজই পরিত্যাজ্য নয়— উহ্য থাকে, যদি মাইনেটা উপযুক্ত হয়।
তাই বলছিলাম, কাজ দিন। উপায় বাতলান। সরকারকে সুপরামর্শ দিন। উপযুক্ত পারিশ্রমিকে উপযুক্ত কাজ। এ দেশে শিক্ষিত কর্মক্ষম জনসংখ্যা অনেক দেশের থেকেই ঈর্ষাযোগ্য।


আনিন্দ্য ঘোষ
কলকাতা-৩৩

সরকারি সুরক্ষা


সুগতবাবু তাঁর দেখা এক কোম্পানিতে ভাল কাজ করা, ভাল মাইনে পাওয়া এক যুবকের কথা বলেছেন, যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্টের চাকরির পরীক্ষায় বসেছে। সুগতবাবুর উল্লেখ মতো সরকারি চাকরিতে বসার বিভিন্ন যুক্তিকে উপেক্ষা করেই বলছি, অযোগ্য পরিচালন ব্যবস্থা, দৃষ্টিভঙ্গির অভাব, বাজারের চাহিদা বুঝতে না পারা, মূলধন অন্যত্র সরিয়ে ফেলা, এ ছাড়াও মালিকপক্ষের অনীহা এবং শ্রমিক অসন্তোষের ফলে ডানলপ, হিন্দমোটর, ইনক্যাব, সোমানি, নিকো কেবলস্-এর মতো খ্যাত অখ্যাত অসংখ্য কোম্পানি আমাদের দেশে বন্ধ হচ্ছে। যদি যুবকটির কোম্পানিরও এই দশা হয়, তখন তাঁর কী হবে?
আমাদের এখানে এমনিতেই সুযোগ সীমিত। অনেক ধনতান্ত্রিক দেশের নাগরিকরা যে অজস্র সুযোগ সুবিধা এবং আর্থিক সুরক্ষা পায় তার ছিটেফোঁটাও আমাদের রাষ্ট্র তার নাগরিকদের দেয় না। এই প্রসঙ্গে একটা ঘটনার কথা উল্লেখ করি। গত বছর উত্তরাখণ্ডের হর-কি-দুন ট্রেকিংয়ে যাওয়ার সময়, জার্মানির হামবুর্গের বাসিন্দা এক যুবক তার বান্ধবীর সঙ্গে আমাদের সঙ্গী হয়। আলাপচারিতায় জানতে পারি ওই যুবক তার কর্মস্থল থেকে পাঁচ মাসের ছুটি নিয়ে বান্ধবীর সঙ্গে ভারতীয় উপমহাদেশ ভ্রমণে বেরিয়েছে। প্রসঙ্গটা এই কারণেই উল্লেখ করলাম, আমাদের যুবকেরা কি এই সুযোগটা পাবে? সে ক্ষেত্রে সুগতবাবুর জানা যুবকটি যদি শুধুমাত্র আর্থিক সুরক্ষার জন্য সরকারি চাকরির আবেদন করে, সেটা কি খুব একটা দোষের?
যদি সরকারের অধীনে কিছু লোক অন্তত কিছুটা আর্থিক সুরক্ষা পায়, তাতে ক্ষতি কী? বরং চেষ্টা করা উচিত কী ভাবে তার পরিধি বাড়ানো যায়। আচ্ছা, ধরেই নিলাম, এতে কর্মদক্ষতার অভাবে সরকারের প্রচুর আর্থিক ক্ষতি হবে। কিন্তু আমরা কী দেখছি? সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির দেনা বছর বছর বেড়েই চলেছে, অথচ মুষ্টিমেয় ব্যক্তির সম্পদ লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েই চলেছে। এটাই কী উচ্ছন্নে যাওয়ার সাম্যবাদী ধারণা!


দেবাশীষ ভট্টাচার্য
ভাটপাড়া, উত্তর ২৪ পরগনা

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

Economy Employment USA
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy