‘বিহারের শিক্ষা’ (২৭-১১) সম্পাদকীয় প্রবন্ধ প্রসঙ্গে আমার চিঠি। প্রবন্ধে বলা হয়েছে যে, এই নির্বাচনের আগে মহিলাদের ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে যে দশ হাজার টাকা জমা করা হয়েছে, তার ফলে মহিলারা উজাড় করে ভোট দিয়েছেন এনডিএ জোটকে। তবে বাংলার ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর সঙ্গে এই অনুদানের একটা প্রকৃতিগত পার্থক্য আছে— এই রাজ্যে মহিলাদের যে অনুদান দেওয়া হয়, সেটি পরিমাণে এতটাই কম, তা অনেকেই হাতখরচ হিসাবে মনে করেন। বিহারে কিন্তু এক কোটি মহিলার অ্যাকাউন্টে দশ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে তাঁদের স্বনির্ভরতার জন্য। হতে পারে যে অনেক গরিব মহিলাই এই অর্থ সংসার চালাতে ব্যয় করবেন বা করছেন। কিন্তু একটু সচ্ছল পরিবারের মহিলারা ওই অর্থের সহায়তায় কো-অপারেটিভের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহার্য বস্তু তৈরি করে বাজারে বিক্রিও করছেন। এতে অর্থনৈতিক ভাবে পরিবার এবং রাজ্যের উন্নয়ন হতে পারে।
এ বার আসি অন্য প্রসঙ্গে, পশ্চিমবঙ্গের ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ চালু হয়েছিল ২০২১ সালে এবং প্রশাসন নির্বাচনে তার ভরপুর সাফল্য পেয়েছে। ২০২৬ সালের নির্বাচনে প্রকল্পটি পাঁচ বছর পুরনো হয়ে যাবে। প্রথম দিকে মহিলাদের মধ্যে যে উদ্দীপনা ছিল, তা অনেক স্তিমিত হয়ে গিয়েছে, তাঁরা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন, আর কোনও নতুনত্ব নেই। এ রাজ্যের ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ শাসক দলের ভোটব্যাঙ্কে খুবই সহায়ক, কিন্তু বৃহত্তর কোনও উপকারে এসেছে কি? অন্য দিকে, বিহারের মহিলাপিছু দশ হাজার টাকার অনুদান নীতীশ কুমারের ভোটব্যাঙ্ক স্ফীত করেছে ঠিকই, তবে একই সঙ্গে তা স্ব-উদ্যোগী মহিলাদের নতুন কিছু করার উৎসাহও দিয়েছে। মহিলারা বুঝে গিয়েছেন, রাজ্যে যে সরকার থাকুক সেই সরকার মহিলাদের এই ধরনের প্রকল্প বন্ধ তো করবেই না, উল্টে বাজারদর বৃদ্ধির সঙ্গে উত্তরোত্তর তা বাড়বে। ফলে, তা হয়তো পরোক্ষে তাঁদের নিজের মতো করে বাঁচার, নিজের রাস্তা বেছে নেওয়ার ভাবনাকে উৎসাহ জোগাবে। অন্য দিকে, ২০২৬ সালের নির্বাচনের জন্য ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর উপহারটি যেন কিছু ধুলোময়লায় ঢাকা, জৌলুসহীন হয়ে গিয়েছে। অতএব, অনুমান করা চলে তাতে চাকচিক্য আনতে অনুদানের পরিমাণ বাড়বে।
তারক সাহা, হিন্দমোটর, হুগলি
অনুকূল হবে?
‘বিহারের শিক্ষা’ সম্পাদকীয় প্রবন্ধে কিছু বিষয় তুলে ধরা হয়েছে, যা পশ্চিমবঙ্গের আগামী নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখতে হবে, বিহারের ভোটে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে জাতের রাজনীতি, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে বড় হয়ে ওঠে ধর্মীয় বিভাজন ও মেরুকরণ। এনডিএ জোটের সাফল্যের অন্যতম কারণ অবশ্যই মহিলাদের ব্যাপক ভোটদান। ভোটের মুখে দশ হাজার টাকা অ্যাকাউন্টে পাঠানোর নীতি মহিলাদের প্রচণ্ড উৎসাহিত করেছে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে ‘কন্যাশ্রী’, ‘স্বাস্থ্যসাথী’, ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পগুলিও অবশ্যই তৃণমূলের পালে হাওয়া জোগাবে।
নীতীশ কুমার সরকারের বেশ কিছু পরিকল্পনাও রাজ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল, যা নির্বাচনে প্রভাব ফেলেছে। তৃণমূলের বিগত দিনের সাফল্যে মূলত ভাতা-অনুদান, ধর্মীয় মন্দির তৈরি এবং এ রকম প্রকল্পের কথা ঘোষণার বড় ভূমিকা ছিল। কিন্তু ভুললে চলবে না, এ রাজ্যে শিল্প নেই, চাকরি নেই, নিরাপত্তা নেই। অপরাধ, আইন শৃঙ্খলার অবনতি আর ব্যাপক আকারে দুর্নীতিই শুধু বেড়ে চলেছে। ফলে সরকার-বিরোধী মনোভাব নির্বাচনে কতটা প্রভাব ফেলে, তার উপর ভবিষ্যতে অনেক কিছুই নির্ভর করবে।
সারনাথ হাজরা, হাওড়া
পরাজয়ের পরে
ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্তের লেখা ‘ফের টেস্টে ভরাডুবি ভারতের, ইতিহাস দক্ষিণ আফ্রিকার’ (২৭-১১) প্রতিবেদনে সাহিত্যগুণের আভাস মেলে। তবে এ সত্যিই এক চূড়ান্ত লজ্জাজনক সিরিজ় পরাজয়। নিজের তৈরি ওষুধেই মৃত্যু। অধিনায়ক টেম্বা বাভুমার অধীনে ১২ টেস্টে অপরাজিত আখ্যাধারী এক দলের বিরুদ্ধে দাম্ভিক মানসিকতা নিয়ে খেলাও কিন্তু সম্পূর্ণ বিপর্যয় ডেকে আনল। অবাক করার মতো বিষয় হল, ইডেন টেস্ট পরাজয় এমন একটি পিচে এল, যা টিম ম্যানেজমেন্ট ঠিক যেমনটি দাবি করেছিল তেমনটি তৈরি হয়েছিল বলেই জানা গিয়েছিল। ঘরের মাঠে ভারতের এই ‘মনের মতো পিচ’-এর চাহিদা কয়েক দশক আগে থেকে শুরু হলেও, রবি শাস্ত্রী ও এম এস ধোনির আমলে তা চরমে ওঠে।
চমৎকার টেস্ট সিরিজ় উপহার দেওয়ার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকাকেও ধন্যবাদ। কিন্তু কাঁটার মতো বিঁধছে এই তথ্য যে, ড্রেসিংরুমের আবহ-নির্মাতা ও নির্বাচনের অন্যতম কান্ডারি হিসাবে কোচ গৌতম গম্ভীর দল নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাঁর ব্যর্থতা স্বীকার করেননি এবং হয়তো, কখনও করবেন না। বিরাট, রোহিত এবং অশ্বিনকে কেন এত তাড়াতাড়ি এবং প্রায় একই সময়ে এত নীরবে তাঁদের কিটব্যাগ তুলে দিতে হয়েছিল তা নিয়ে একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ আত্মসমালোচনার দাবি রয়ে গিয়েছে। কিন্তু কেউ কি তাতে কর্ণপাত করেছেন? একটি টেস্ট ম্যাচ দলে সব সময়ই অভিজ্ঞতা এবং প্রতিভাবান তরুণদের মিশ্রণ থাকা উচিত। এ দলে কি তা রয়েছে?
বলতে বাধ্য হচ্ছি ভারতীয় খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষা দেখে মনে হয়েছে যে কোনও অদৃশ্য চাপের কারণে কেউই যেন সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে আগ্রহী ছিলেন না। টিম ম্যানেজমেন্ট কি টেস্ট ম্যাচ এবং টি-টোয়েন্টি খেলার মধ্যে পার্থক্য করবে না? টেস্ট ম্যাচ ক্রিকেট কি প্রতিটি বলে বাউন্ডারি আর ওভার বাউন্ডারির খেলা নাকি? এখানে তো বল ছেড়ে দেওয়াও দক্ষতার একটি পরিচয়, আর সেই পরিচয় যিনি দিতে জানেন, তাঁকেই সাদা পোশাকে দেশের প্রতিনিধিত্বের সুযোগ দেওয়া উচিত। শুধু স্ট্রাইক রেট বাড়াতে চান যে খেলোয়াড়রা, ধৈর্য-স্থৈর্যর দিকে মনোযোগী নন যাঁরা, তাঁরা কি ভারতবাসীর প্রত্যাশার চাপ নিতে পারবেন? ভাববেন কি এক বারও, ওয়াশিংটন সুন্দর, সাই সুদর্শন সচিন, দ্রাবিড়, সৌরভ বা পুজারার মতো নিখুঁত টেকনিকের পরিচয় দিয়ে উইকেট রক্ষা ও স্কোরবোর্ড সচল রাখার দায়িত্ব নিতে পারছেন কি না? নির্বাচকরা বলেছেন, তাঁরা নাকি তারুণ্যে ভরপুর দল গড়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তার জন্য ঘরের মাঠে এমন দুরমুশ হতে হবে?
সোমনাথ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-৫৭
কঠিন পিচে
টেস্ট ক্রিকেট, ক্রিকেটের সবচেয়ে কঠিন আঙিনা যেখানে দক্ষতা, প্রতিভা ছাড়াও প্রয়োজন হয় ‘ধৈর্য’। টেস্ট সিরিজ়ে ভারতীয় দলের খেলোয়াড়দের দেখে মনে হয়নি তাঁরা এই গুণ আয়ত্ত করতে চান বলে। আসলে বছরভর টি২০, এক দিনের ম্যাচেরই তো রাজত্ব চলছে, অর্থও সেখানে, তাই কে আর ধ্রুপদী ক্রিকেট নিয়ে মাথা ঘামায়?
আগেও আয়োজক দেশ মনের মতো ও শক্তি মতো পিচ তৈরির সুবিধা নিত। যেমন ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ঘূর্ণি পিচ তৈরি করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়, অস্ট্রেলিয়া, নিউ জ়িল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দলকে নাকানিচোবানি খাইয়ে সিরিজ় দখল করেছে। প্রশ্ন উঠছে এ বার তা হলে বলেকয়ে যেমন পিচ তৈরি করা হল, সেই পিচের ‘বিশেষজ্ঞ’ খেলোয়াড় নিয়ে দল তৈরি করা হল না কেন?
স্বপন চক্রবর্তী, জগৎবল্লভপুর, হাওড়া
কবিতার শক্তি
রিমি মুৎসুদ্দির ‘ধৈর্যের আগুন জ্বালাত কবিতা’ (২৮-১১) প্রবন্ধে আমাদের মতো অনিয়মিত কবিতানুরাগীদের অনুসন্ধিৎসা আবার জাগরূক হল, কবিতার প্রতি, পাবলো নেরুদার প্রতি। কবিতার মধ্য দিয়েই তো ভালবাসা সংক্রমিত হয়ে যায়। তাই নির্বাসিত কবির সংগ্রাম, জ্বলন্ত ধৈর্যের আখ্যান আমাদের প্রাণকেও স্পর্শ করে।
শিবপ্রসাদ দাস, আন্দুল মৌরি, হাওড়া
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)