Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে সবচেয়ে বড় সঙ্কটের মুখে জার্মানি

এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা মনোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি।জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল ঘোষণা করেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, সবচেয়ে বড় সঙ্কটের সম্মুখীন জার্মানি।

নির্জন স্টুটগার্টের রাস্তা।

নির্জন স্টুটগার্টের রাস্তা।

রজত আচার্য
স্টুটগার্ট শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২০ ১৭:২১
Share: Save:

কর্মসূত্রে গত চার বছর ধরে জার্মানির স্টুটগার্ট শহরের বাসিন্দা। চিকিৎসক হিসেবে ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, জার্মান হেল্থ কেয়ার সিস্টেম যথেষ্ট উন্নত মানের। চিনে যখন করোনা ভাইরাস ভয়াল রূপ ধারণ করেছে তখন জার্মানদের মধ্যে কোনও হেলদোল দেখতে পাইনি। তার পর জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে দু’চারটে রোগী শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে আসতে শুরু করে। তখনও ভাবা যায়নি মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই কি ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করতে চলেছে করোনা। সরকার, মেডিক্যাল কাউন্সিল কেউই প্রস্তুত ছিল না।

ইউরোপে প্রত্যেক বছর প্রায় এক লাখ লোক মারা যায় সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জাতে। তাই ভাইরাল ফিভার নিয়ে জার্মানদের মধ্যে ভয় কম। ইয়ং জেনারেশনের মধ্যে অনেকদিন পর্যন্ত একটা বেপরোয়া ভাব দেখা গেছে। আর সম্ভবত তারই মাশুল এখন দিচ্ছে জার্মানি। আমাদের হাসপাতালে করোনা রুগী উপচে পড়ছে। প্রতি দিন অসংখ্য নতুন আক্রান্তের চাপে অন্যান্য ওয়ার্ডকে করোনা ওয়ার্ডে পরিণত করা হচ্ছে। আক্রান্ত প্রায় এক লাখ ইতিমধ্যেই। ইটালি থেকে প্রচুর রোগী আসছে। বেশিরভাগ ষাটোর্ধের মৃত্যু হচ্ছে, যাদের ক্রনিক রোগের চিকিৎসা চলছিল। সেই তুলনায় কম বয়সিদের মৃত্যুর হার অনেকটাই কম।

জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল ঘোষণা করেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, সবচেয়ে বড় সঙ্কটের সম্মুখীন জার্মানি। ইতিমধ্যেই প্রত্যেক সপ্তাহে সাড়ে চার লাখ টেস্ট এবং বিপুল আইসোলেশনের লক্ষ নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। রাস্তাঘাট পুরোপুরি নির্জন না হলেও, লোকজন যথেষ্ট কম। ডেলিভারি বয় ডেলিভারি দিতে এসে অনেক দূর থেকে দিয়ে চলে যাচ্ছে। একটা অজানা মৃত্যুভয় পুরো জার্মানিকে গ্রাস করেছে। হাসপাতালগুলোতে সাধারণ রোগীরা আসতে ভয় পাচ্ছেন। সরকার থেকে হাসপাতালগুলোতে প্রচুর অর্থ সাহায্য এবং অবসরপ্রাপ্ত ডাক্তারদের পুনরায় কাজে যোগদান করিয়ে এই বিপুল সঙ্কট সামলানোর প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। মানুষ যথেষ্ট সচেতন। সুপারমার্কেটগুলো তে ১.৫ মিটার দূরত্ব বজায় রাখা আবশ্যক। একসঙ্গে দু’জনের বেশি পাবলিক প্লেসে যাওয়া বারণ।

জনমানবহীন স্টুটগার্টের রাস্তা।

মৃত্যুহার অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের তুলনায় অনেক কম হলেও, আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছেই। সেই তুলনায় ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা যথেষ্ট কম। এই মুহূর্তে যদি মানুষ সচেতন না হন, সামনে খুব খুবই কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। চিকিৎসক হিসেবে কাজের সুবাদে অনেক কঠিন অসুখের চিকিৎসা করতে হয়েছে। রোগীর যন্ত্রণা দেখতে হয়েছে। কিন্তু ভাইরাসের এমন পৃথিবীব্যাপী তাণ্ডব এবং তাকে ঘিরে মৃত্যুভয় দেখতে হবে ভাবিনি।

করোনার মৃত্যুভয় কোথাও না কোথাও ধনী, দরিদ্র, সেলিব্রিটি, সাধারণ মানুষ সবাইকে এক সারিতে এনে দাঁড় করিয়েছে। যেখানে কেউ জানে না কোথায় এর শেষ।

রজত আচার্য

চিকিৎসক, স্টুটগার্ট ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Germany Stuttgart
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE