Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: অভিমন্যুরা ভরসা

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যে মানসিক জোর লাগে, সাধারণ নাগরিকদের সহানুভূতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর পাশে থাকার আশ্বাস থেকে তা পাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২০ ০০:৫৩

কুরুক্ষেত্রের ত্রয়োদশ দিন। দ্রোণাচার্য তৈরি করেছেন চক্রব্যূহ। অভিমন্যু আশেপাশে তাকান। এই মুহূর্তে চক্রব্যূহ ভেদের রহস্য জানেন একা অভিমন্যু। ধর্মরাজ আদেশ দিলেন, ‘ভেদ করো চক্রব্যূহ, আমরা তোমার পিছন পিছন অগ্রসর হচ্ছি।’ আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত অভিমন্যুর। শুধু অভিমন্যুই নয়, পাণ্ডবদের দিক থেকেও অভিমন্যুর মতো বীর কিশোরকে হারানো একটা কূটনৈতিক পরাজয় তো বটেই।

যুদ্ধ শুরু হয়েছে। প্রত্যেক চিকিৎসক— বিশেষত যাঁরা সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত— অমূল্য সৈনিক। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যে মানসিক জোর লাগে, সাধারণ নাগরিকদের সহানুভূতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর পাশে থাকার আশ্বাস থেকে তা পাচ্ছেন চিকিৎসকরা। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজকে কোভিড-১৯ হাসপাতালে পরিবর্তন করা হয়েছে। খুব মূল্যবান, সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা পাকা করতে ব্যবস্থা হচ্ছে পিপিই কিটের। আনানো হচ্ছে এন-৯৫ মাস্ক।

নদিয়া জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। মোট ছ’জন আক্রান্ত, বিলেত-ফেরত সেই কিশোরটি সহ। কিন্তু গুজব বাড়ছে আগুনের মতো। ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপে, এ-বাড়ির জানালা থেকে ও-বাড়ির দরজায় সংখ্যাটা চারিয়ে যাচ্ছে, বেড়ে যাচ্ছে। করোনার থেকেও সাংঘাতিক ভাবে।

অথচ নদিয়া জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর খুবই সক্রিয়। শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের একটা অংশ শুধু সন্দেহজনক রোগীদের জন্য আলাদা করে রাখা হয়েছে। ট্রায়াজের জন্য ডাক্তারদের দিয়ে আলাদা ইমার্জেন্সি খোলা হচ্ছে। কোয়রান্টিন সেন্টার খোলা হয়েছে তেহট্ট, নবদ্বীপ, রানাঘাট, কল্যাণী, রুইপুকুরে। কোয়রান্টিনে থাকা মানুষদের খাওয়ানোর দায়িত্ব নিয়েছে প্রশাসন।

গুজব ছড়াবেন না। এই যুদ্ধে মানুষের পাশে আছে প্রশাসন, এবং একেবারে সামনের সারিতে চিকিৎসকরা। তাঁরা লড়তে রাজি। দাবি শুধু একটাই, বিজ্ঞানসম্মত সুরক্ষা। তাঁদেরও ঘরে স্ত্রী, সন্তান, বৃদ্ধ বাবা-মা আছেন যে! দশ হাজার টেস্ট কিট এসেছে রাজ্যের জন্য। ন’কোটি জনসংখ্যার জন্য মাত্র দশ হাজার? চমকে উঠতে হয়। বলা হচ্ছে, চিকিৎসকদের মধ্যে লক্ষণ দেখা গেলে অবশ্যই তাঁদের পরীক্ষা করানো উচিত। বলা হচ্ছে, এন-৯৫ মাস্কই সুরক্ষার উপায়। বলা হচ্ছে, পিপিই অত্যাবশ্যক। আশা করি, শুধু চিৎকৃত বা মিথ্যা আশ্বাস নয়। সত্যিই ধর্মরাজের কথা মেনে এগোবেন অভিমন্যুরা। চক্রব্যূহ থেকে বেরিয়ে আসার অস্ত্রও থাকবে তাঁদের হাতে। মহাভারতে অভিমন্যু ছাড়া কৃষ্ণ, প্রদ্যুম্ন আর অর্জুন জানতেন চক্রব্যূহ ভেদের মন্ত্র। এই যুদ্ধে অভিমন্যুরা ছাড়া আর কেউ সে মন্ত্র জানে না। ওঁদের বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব সবার।

অনির্বাণ জানা

কৃষ্ণনগর, নদিয়া

ভাঙা গড়া

বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে মানুষের জায়গা কোথায়, আরও এক বার চোখে আঙুল দিয়ে চিনিয়ে দিয়ে গেল এই ভাইরাস। ১৩.৭ বিলিয়ন বছর আগে ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি (বিগ ব্যাং তত্ত্ব অনুযায়ী), মানুষের পূর্বপুরুষ এসেছে মাত্র কয়েক মিলিয়ন বছর আগে। সুতরাং প্রায় ৯৯.৯% সময়, মানুষ ছাড়া কাটিয়েছে ব্রহ্মাণ্ড। মানুষ ছিল না, তাই ঈশ্বরও ছিল না, সীমানা ছিল না। আমাদের গোটা শরীর তৈরি মূলত কার্বন আর নাইট্রোজেন ও অন্যান্য বিভিন্ন মৌল দিয়ে এবং এ রকম সব মৌলের জন্ম কোনও না কোনও জ্বলন্ত নক্ষত্রের অভ্যন্তরে, কারণ ওই অকল্পনীয় তাপ, চাপ ছাড়া মৌলের জন্ম হয় না। এসেছি নক্ষত্র থেকে, আবার মিশে যাব নক্ষত্রে, থেকে যাবে শুধু এই ভাঙা-গড়ার খেলা, যেমন ছিল বরাবর। আমাদের না থাকাটাই চিরন্তন, আমাদের থাকাটা ক্ষণিকের প্রহেলিকা মাত্র। আমাদের হঠাৎ তৈরি হয়ে যাওয়াটাই ছিল আশ্চর্য সমাপতন।

অবকাশ দাশঘোষ
আমিনপুর, হুগলি

কী রকম হল

এই অতিমারির পরিস্থিতিতে সাংবাদিক বন্ধুরা যে ভাবে নিজেদের জীবনের পরোয়া না করে গোটা বিশ্বের করোনাভাইরাস-সংক্রান্ত খবর প্রতি মুহূর্তে আমাদের সামনে তুলে এনে মানুষকে সচেতন করার কাজ করছেন, তার জন্য কোনও ধন্যবাদই যথেষ্ট নয়।
শুধু কিছু নিউজ় চ্যানেলে দেখানো কয়েকটা খবরে দেখছি, একই ফ্রেমে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে, মাস্ক-পরিহিত সাংবাদিকের কাছে নিজেদের অসুবিধার কথা উগরে দিচ্ছেন অনেকে। তাঁদের মুখে মাস্ক নেই, কেউ নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায়ও রাখছেন না। অর্থাৎ করোনাভাইরাস সংক্রান্ত খবর তৈরি করার সময়েই, সাংবাদিক ছাড়া অন্য কেউ স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করছেন না। ব্যাপারটা কী রকম হল? সাংবাদিক বা ক্যামেরাম্যানের দায়িত্ব কি নয়, তখনই তাঁদের অমন করতে বারণ করে, সচেতন করে দেওয়া?

অনিশা ঘোষ

সোনারগ্রাম, হুগলি

নিজেরাই

একটি টিভি চ্যানেলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে বিশিষ্ট ডাক্তার, প্রশাসক, অভিনেতা, খেলোয়াড়দের আলোচনা শুনছিলাম। এক জন ডাক্তারবাবু, করোনাভাইরাসের ভয়াবহ সংক্রমণ ঠেকাতে, হাতে আংটি, হাতঘড়ি পরতে নিষেধ করলেন এবং তার কারণও ব্যাখ্যা করলেন। কিন্তু, লক্ষ করলাম, উপস্থিত বেশির ভাগ বক্তার হাতেই আংটি ও হাতঘড়ি। এক ডাক্তারবাবুর হাতে আবার একাধিক আংটি পরা দেখলাম। খুব অবাক হলাম। ওঁদের মূল্যবান প্রতিটি সুপরামর্শ যেমন কোটি কোটি মানুষ শুনছেন, পাশাপাশি ওঁদেরকেও তো দেখছেন।

অরুণ মালাকার

কলকাতা-১০৩

বড্ড সরল

‘সমাজের ভূমিকা’ (২৪-৩) শীর্ষক চিঠি সম্পর্কে কিছু কথা। এক জন মানুষের অপরাধী হয়ে ওঠার জন্য জিন দায়ী নয়, ‘আর্থ-সামাজিক পরিপ্রেক্ষিত’ দায়ী— তত্ত্বটি বহুশ্রুত। কিন্তু আমাদের সমাজে তো তা হলে অপরাধী থিকথিক করার কথা। কই, তেমন তো চোখে পড়ছে না?
এক জন কমবয়সি ব্যক্তি মোটামুটি যে আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতে (মানসিক-ভৌগোলিক ভাবে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা, আজন্ম অভাব অনটন ভোগ করা ইত্যাদি) অপরাধী হয়ে ওঠে, অনুরূপ বা তার চেয়েও ভয়ঙ্কর দুরবস্থায় থাকা বহু লোকই অপরাধী হয়ে ওঠে না। জঘন্য অপরাধ করাটা অপরাধীর মনোজগতের কোন অংশে জন্ম নেয়, সে বিষয়ে এত দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় কি না, ভেবে দেখা দরকার।
গরিব ঘরের দু’জন ছাত্রের (একই সঙ্গে পড়াশোনা করা এবং উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা) এক জন চাকরিবাকরি না পেয়ে লাউশাক, কুমড়ো শাক, বিচিকলা থোড় বেচত রাস্তার ধারে, অন্য জন চাকরিবাকরি না পেয়ে মদ বিক্রি করত রাস্তা থেকে দূরে আর ঝোপের আড়ালে— এমনটা কি দেখা যায়নি? একই অবস্থায় দু’জনের দু’রকম পথ বেছে নেওয়া কেন? কেন দু’জনেই মদ বা দু’জনেই শাকসব্জি বেচল না?
আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিটা প্রায় একই রকম, কিন্তু দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন, এমন বহু মানুষ আমরা দেখি। দুই ভাইয়ের মধ্যে এক জন টাকা রোজগার করছে সদুপায়ে, অন্য জন সুবিধামতো অসদুপায় অবলম্বন করছে, এমন উদাহরণ ভূরি ভূরি।
পরিস্থিতির চাপে অপরাধমূলক মানসিকতা গড়ে ওঠে— এটা হয়তো এক রকম অতিসরল ব্যাখ্যা। অপরাধী-মানসিকতার কারন অনুসন্ধানে আরও গভীর বিশ্লেষণ জরুরি।
ম্যাকবেথ রাজা হবে: এই ভবিষ্যৎবাণী করেছিল ডাইনিরা। তাই শুনে রাজা হতে গিয়ে ম্যাকবেথ রাজা ডানকানকে মেরে সিংহাসনে বসল। ডাইনিরা কিন্তু রাজাকে মেরে রাজা হতে বলেনি ম্যাকবেথকে। রাজা হওয়ার জন্য রাজাকে মারা তার ব্যক্তিগত ‘চয়েস’।

রঘুনাথ প্রামাণিক

কালীনগর, হাওড়া

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

Coronavirus Health
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy