Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: আজব কিস্সা

হঠাৎ একটা গুজব ছড়িয়েছে, থানকুনি পাতা খেলে এই ভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। এ সব দেখে পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর, আনন্দপুর, শালবনি, চন্দ্রকোনা, দাসপুর এলাকায় থানকুনি পাতার খোঁজে হুড়োহুড়ি পড়ে গেছে।

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২০ ০০:৪৬

করোনাভাইরাসের বিপদে, বিজ্ঞানসম্মত ভাবে প্রতিরোধ করব, না অবাস্তবের ল্যাজ ধরে অবিজ্ঞানের চাষ করব— সেটাই ভারতের সামনে এখন বড় সমস্যা। হাজারো টোটকার ছড়াছড়ি। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপের আজব স্যরের পাঠাশালা তো আছেই। আছে ইউটিউব-নির্ভর সবজান্তাদের বিশ্ববিদ্যালয়। কেউ বলছেন, মানুষই বানিয়েছে এই মারণ ভাইরাস। যদিও গোটা পৃথিবীর লোককে মেরে ফেলে কে কী ভাবে বিশ্বময় দৌড়োদৌড়ি করবে, তার কোনও উত্তর নেই। কোথাও আবার হাজির শেষের সে দিনের গল্প। সুনামি বা নেপালের ভূমিকম্পের পর যে সব গল্পগাছা ভাইরাল হয়ে পাক খাচ্ছিল, এ বার সে সব হাজির একটু অন্য রূপে। আর প্রতি বারই যা হয়, ফিরে ফিরে আসে সেই মহা ভবিষ্যৎবক্তা নস্ত্রাদামুসের নাম। তিনি নাকি সব বলে গিয়েছেন। কেউ বলছে অমুক ধর্মগ্রন্থ পড়লে এ অসুখ হবে না। আর ভাইরাস রুখতে ‘গোমূত্র’ পান তো হেডলাইনে জায়গা করে নিয়েছে। হঠাৎ একটা গুজব ছড়িয়েছে, থানকুনি পাতা খেলে এই ভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। এ সব দেখে পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর, আনন্দপুর, শালবনি, চন্দ্রকোনা, দাসপুর এলাকায় থানকুনি পাতার খোঁজে হুড়োহুড়ি পড়ে গেছে। অনেকে আবার তুলসী পাতার সঙ্গে ভিটের এক চিমটে মাটি খাচ্ছেন রক্ষা পেতে। এ সব দেখে শুনে, ‘গুজবে কান দেবেন না’ বলে প্রচারে নামতে হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের সিএমওএইচকে। অনেকে পরামর্শ দিচ্ছেন নুন-লেবু-গরম জল মিশিয়ে খেতে, কেউ মিনিট কুড়ি কড়া রোদে দাঁড়ানোর পরামর্শও দিচ্ছেন।

কাজেই শুধু বিজ্ঞানসম্মত ভাবে ভাইরাসটিকে প্রতিহত করাই নয়, লড়াইটা হল কুসংস্কারের বিরুদ্ধেও। মানুষে মানুষে দূরত্বের পাশাপাশি, দূরত্ব বজায় রাখুন সোশ্যাল মিডিয়ার আজব কিস্সা থেকেও।

সমীর ঘোষ

শ্রীরামপুর, হুগলি

লেখাপড়া

সন্দীপন নন্দীর ‘লেখাপড়া শিখে কী লাভ হল?’ (২৩-৩) শীর্ষক প্রবন্ধে বর্তমান চাকরির বাজারের নির্মম ছবিটা যথার্থ প্রতিফলিত। নতুন চাকরির বাজার তৈরি করা যাচ্ছে না, যা অাছে সেখানেও কর্মী ছাঁটাই। সরকারি বেসরকারি সব ক্ষেত্রেই ‘আউটসোর্সিং’ করে কাজ চালাবার প্রবণতা কর্মপ্রার্থীদের আরও বিপাকে ফেলেছে। এর ফলে কোনও সংস্থাকেই আর কর্মীদের পূর্ণ দায় নিতে হয় না। বাড়িভাড়া, চিকিৎসার বিল ইত্যাদির দায় তো নিতে হয়ই না, অবসরের পরে পেনশন, গ্র্যাচুইটিরও প্রশ্ন থাকে না।
আজ যখন পিএইচ ডি করা ছাত্র ডোমের কাজ করতে স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসেন, তখন অবস্থাটা ভয়াবহ বলে মনে হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু এমন সঙ্কট তো এক দিনে তৈরি হয়নি। সরকারি শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে যে ভুল ছিল, এটা তো তারই প্রতিফলন। এখনও শিক্ষানীতি সংশোধন না করলে হয়তো আরও ভয়াবহ দিন অপেক্ষা করছে।
উচ্চশিক্ষায় মেধার জোরের থেকে পয়সার দাপটই বেশি। চার-পাঁচ বছর একটা নির্দিষ্ট পরিবেশে কাটিয়ে দিলে, অত্যন্ত অনিচ্ছুক এবং উপযুক্ত মেধাহীন ছেলেমেয়েরাও কিছু না কিছু শিখে আসবেই। অবশ্য সে কী শিখল সেটা বিবেচ্য না, ‘ডিগ্রি’ নামের যে কাগজটা সে কয়েক লক্ষ টাকার বিনিময়ে কিনে নিয়ে এল, সেটাই বিবেচ্য। এটা হল পরোক্ষে ডিগ্রি কেনা। প্রায়ই খবরে প্রকাশ পায়, প্রত্যক্ষ ভাবেও, অর্থাৎ স্কুল-কলেজে না গিয়েও শুধু পয়সা দিয়েই ডিগ্রি কেনা যায়।
শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বাহুল্য বোধে নীতিশিক্ষা তো কবেই বাতিল হয়ে গেছে। তাই বোধহয় আজ সমাজের সব স্তরেই দুর্নীতির বাসা।


মানস বিশ্বাস

রাউরকেলা, ওডিশা

ভরসাপূর্তি

ভয়ের থেকেই ভূত এবং ভগবানের জন্ম। করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় আর এক বার সেই প্রমাণ মিলল। প্রায় উপবাসে থেকে ব্রত উদ্‌যাপনের সিরিয়াসনেস নিয়ে ‘জনতা কার্ফু’ পালন করলেন দেশবাসী। রোগের সঙ্গে লড়াইয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাঁরা পরিষেবা দিয়ে চলেছেন, তাঁদের ধন্যবাদ জানানোর জন্য বিকেল পাঁচটায় যার যার বাড়ির দরজা, জানলা বা বারান্দায় দাঁড়িয়ে হাততালি, ঘন্টা, নিদেন পক্ষে ভাত খাওয়ার থালা বাজাতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। সেই পর্বটি একটু ঘুরেফিরে কিন্তু ধর্মীয় আচার পালনের শামিল হয়ে দাঁড়াল। পাঁচটা বাজতেই বাড়ি বাড়ি থেকে শঙ্খরব, উলুধ্বনি। এই পর্যন্ত তবু ছিল ভয় আর উদ্বেগ থেকে মুক্তিপর্ব, প্রবল ঝড় বা ভূমিকম্পের সময় এর প্রচলন আছে। কিন্তু তার পরেই শুরু হল পটকা ফাটানো। চৈত্র মাস। কাছে-দূরের কুহুরব থেমে গেল। বলা হয়েছিল, পাঁচ মিনিট চলবে ধন্যবাদ জ্ঞাপন। উৎসাহের প্রাবল্যে সময়সীমা মানা গেল না। ফেটেই চলল বোম-পটকা।
ঢাক, মাইক আর পটকার সমবেত আওয়াজে মনে একটা সাহস আসে। এ দিনও মন থেকে দুশ্চিন্তার মেঘ তখনকার মত ফিকে হতে বালবাচ্চা সমেত থালা-হাতা-ঘন্টা হাতে পথে নেমে পড়লেন অনেকে। আজকের নাগরিক সভ্যতায় উৎসব পালনের সঙ্গে আওয়াজের অসভ্যতার নিবিড় সম্পর্ক। একশো তিরিশ কোটির সমবেত আবেগ প্রদর্শন! সৃষ্ট আওয়াজ অন্যের শ্রবণযন্ত্রকে পীড়া দিলেই গোষ্ঠীশক্তির ভরসাপূর্তি। করোনা-আপদের নিধন ও ঈশ্বরের উদ্ভব-স্মরণে হয়ত সামনের বছরগুলোতে এই দিনে একই সময়ে নিনাদিত হবে কাঁসর-ঘন্টা। সঙ্গে উল্লাসের হাততালি। কোকিলেরা আর চমকাবে না।

বিশ্বনাথ পাকড়াশি

শ্রীরামপুর, হুগলি

রুপোলি রেখা

করোনাভাইরাস নিয়ে চতুর্দিকে ‘গেল গেল’ রবের ভিড়ে কিছু এল-এল বার্তাও নীরবে রয়ে যাচ্ছে। ‘তবু আশার কথা’ (২১-৩) শীর্ষক চিঠিতে পরিবেশ দূষণ কমার কথা এমনই একটি বার্তা।
আমাদের মতো দেশে, যেখানে ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধিও লোকেরা জানেন না, অবিরাম ভীতিজনক প্রচারের ফলে সেইগুলি সাধারণ লোকে জানতে বাধ্য হচ্ছেন, এটিও একটি আশার কথা। আমাদের দেশের মূল সমস্যা করোনাভাইরাস নয়— অশিক্ষা এবং অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস। করোনাভাইরাস সংক্রান্ত যে নির্দেশগুলি অনবরত প্রচার হচ্ছে এবং মানাও হচ্ছে, সেগুলি কোভিড-১৯ কেন, যে কোনও মারণ রোগ বা সাধারণ অসুখের বিরুদ্ধেও প্রযোজ্য।
মানুষের মনে ‘করোনা-ভীতি’ যত দিন থাকবে, তত দিন স্বাস্থ্যবিধিগুলি পালনের প্রবণতাও থাকবে। ফলে করোনাভাইরাস সংক্রমণেও যেমন রাশ থাকবে, অন্য সংক্রমণও অনেক কম থাকবে। ইতিমধ্যেই টিভি থেকে জানলাম, একটি শিশু হাসপাতালে কিছু অসুখের সংক্রমণ কমার ইঙ্গিত দেখা গিয়েছে। এমনও হতে পারে, করোনাভাইরাস মহামারি শেষ হওয়ার পর দেখা গেল, দেশে মৃত্যুহার অনেক কমে গিয়েছে, করোনাভাইরাস সংক্রান্ত মৃত্যুকে হিসেবে রেখেও।

অতনু ভট্টাচার্য

কলকাতা-২

মজার গল্প

২২-৩ তারিখে বিকেল পাঁচটায় বহরমপুর শহরে এক দল লোককে কাঁসর ঘন্টা সহ উলুধ্বনি দিতে দিতে মন্দিরের দিকে যেতে দেখা গেল। তাঁদের ব্যাখ্যায়, এ ভাবেই তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পালন করছেন। সংখ্যায় কম করেও এঁরা ছিলেন ৫০০ জন এবং পরস্পরের গা ঘেঁষেই হাঁটছিলেন।
আমার একটা মজার গল্প মনে পড়ল। রুগি ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘অনেক দিন তো ওষুধ খেলাম। এ বার সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করব?’’ ডাক্তার বললেন, ‘‘করবেন, তবে বেশি নয়।’’ রুগি বললেন, ‘‘বাঁচালেন! সেই যে দু’মাস আগে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা নিষেধ করলেন, সেই থেকে পাইপ বেয়ে ওঠানামা করতে করতে হাঁপিয়ে গেছি!’’

প্রদীপনারায়ণ রায়

শক্তিপুর, মুর্শিদাবাদ

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

Coronavirus Health
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy