Advertisement
১১ মে ২০২৪
Coronavirus

এই লকডাউন অবসর দিল আত্মসমীক্ষার, একাকিত্বকে অনুভব করার

এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা ম‌‌নোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি।এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা ম‌‌নোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি।

লকডাউনে সুনসান ভার্জিনিয়া।

লকডাউনে সুনসান ভার্জিনিয়া।

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০২০ ১৭:৪৭
Share: Save:

স্পষ্টত এখন আমি অন্তরীণ। আমরা সবাই অন্তরীণ।

পৃথিবীর ইতিহাসে এই প্রথম বিশ্বব্যাপী মহামারি। পালাবার পথ নেই। এমনকি অগ্রগামী দেশগুলিতেই যেন আপাতত প্রকোপ অনেক বেশি। কোনও ওষুধ নেই, কোনও চিকিৎসা নেই। একমাত্র প্রতিকার একলা থাকা, অন্য সবার সংসর্গ এড়িয়ে একক জীবনযাপন করা।

আমাদের অনেকেরই নিজের সঙ্গে এত সময় কাটাবার অভ্যাস নেই। প্রায় সকলেই প্রায় সর্বদা বন্ধুদের, আত্মীয়দের, সহকর্মীদের সঙ্গ খোঁজে। নিরুপায় হলে টেলিভিশন দেখে, গান শোনে কিংবা কখনও একটা পত্রিকা পড়ে। একলা তারাই, যাঁদের অন্য কিছু করার উপায় নেই। অর্থাৎ হাতে একটা সচল ফোন পর্যন্ত নেই।

কিছুকাল আগে আমি একবার দশ দিনের মৌনব্রত পালন করেছিলাম। কোনও বিশেষ কারণ ছিল না। দেখতে চেয়েছিলাম আমার প্রতিক্রিয়া কী হয়। যে ফলাফলটা সবচেয়ে ভালভাবে মনে আছে, সেটা অতি বিস্ময়কর। সেই প্রথম আমি আবিষ্কার করলাম কথা কী মূল্যবান। ছোটবেলা থেকে অনেক কথা শুনেছি ও বলেছি। কিন্তু এখন খেয়াল হল যে, অনেক কথাই অনর্থক, অতিরিক্ত, অপ্রয়োজনীয়। সেই সঙ্গে এও বুঝলাম যে, কোনকোন কথা কত মূল্যবান।

এই অনাকাঙ্ক্ষিত বন্দিদশার একটা লাভ এই যে, আমরা হয়ত আবিষ্কার করব, কয়েকটি অপ্রত্যাশিত সম্পর্ক আমাদের জীবনে কত মহামূল্য। যে-সম্পর্ক এতদিন মনে হয়েছে আমাদের অস্তিত্বের প্রান্তদেশে, নেহাতই পরিহার্য, আজ হয়ত দেখব, তা আমাদের সুখশান্তির একটা অপরিহার্য চাবিকাঠি। অন্যদিকে সম্ভবত এও দেখব যে, সব সম্পর্ক এত কাল মনে হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ, যাঁদের মনে হয়েছে আমার সবচেয়ে নিকটজন, সবেরই নতুন করে মূল্যায়ন করার প্রয়োজন আছে।

আরও পড়ুন: ১৭ মে-র পর কতটা লকডাউন? কাল মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে মোদীর বৈঠক

এর চেয়ে বড় কথা এই যে, আমাদের সকলেরই জীবনে একাকিত্বের একটা বিরাট প্রয়োজন আছে। আমি কী, হতে চাই,কী আমার স্বপ্ন, আগামী এক বা দশ বা বিশ বছরে আমি কী করতে চাই, কোথায় পৌঁছাতে চাই তা কোনও গুরু বা পণ্ডিত, এমনকি কোনও বিদগ্ধ বাবা বা মমতাময়ী মা— আমার হয়ে নির্ণয় করতে পারে না। সেটা আমার কর্তব্য, আমারই দায়িত্ব। সেটা পালন করতে হলে আমাকে হয়ত কিছু খোঁজখবর করতে হবে, কিছু তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি যেটা করতে হবে সেটা হল, নিজের প্রবণতা ও অভিলাষ সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া। এটা এক দিনের ব্যাপার নয়,ফোন বা খবরের কাগজের পাতা নাড়তেনাড়তে এটা এক নিঃশ্বাসে করার উপায় নেই। দরকার একাকিত্ব, মনোনিবেশ, একনিষ্ঠ মনন।

এই নির্দয় মহামারি আজ আমাদের সেই অবিশ্বাস্য সুযোগ এনে দিয়েছে। যেহেতু এই রোগের প্রতিষেধক দূরে থাক, নিরাময়ও কেউ জানে না, অনির্দিষ্টকালের জন্য একা থাকার সাবধানতাই আমাদের একমাত্র নির্বাণ। কিন্তু সেটা শুধু প্রয়োজন নয়, আমাদের বিবর্তনের একটা সুযোগও বটে। আমরা সবাই অতিব্যস্ত, আমাদের কাজ নিয়ে, সংসারের খুঁটিনাটি নিয়ে, সামাজিক দায়িত্ব নিয়ে। এত ব্যস্ত যে, এক মুহূর্ত সময় নেই ভাববার পৃথিবী থেকে কী আমার নেবার আছে, পৃথিবীকে কী আমার দেবার আছে। যা করছি, তাই করে চলেছি দিনের পর দিন, ঘানির বলদের মত। শুধু বলদের চেয়ে ভাল সেজে, শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে। তৃপ্তির বদলে আরাম বেছে নিয়েছি, আসল আনন্দের চেয়ে দৈনন্দিন সুখ। তাই অকস্মাৎ এসেছে এই অবসরের সুযোগ। ভাববার পরিসর হয়েছে যে, ঠিক এই রকমই কী আমরা চেয়েছিলাম, নাকি কোথাও কিছু পরিবর্তন করার সময় হয়ত এসেছে।

আরও পডু়ন: করোনায় আক্রান্ত এয়ার ইন্ডিয়ার ৫ বিমানচালক-সহ ৭

একা থাকাটা কেউ কেউ শাস্তি বলে মনে করেন। সেক্ষেত্রে তাঁদের ভাবা দরকার যে, নিজের সঙ্গে সময় কাটানো যদি তাঁদের নিগ্রহ বলে মনে হয়, তাহলে অন্যদের কাছে তাঁদের সংসর্গ কতটা আনন্দদায়ক। বন্ধুদের বা পরিজনদের অনুপস্থিতি মানেই নিঃসঙ্গতা নয়, রয়েছে আমাদের নিজেদের চিন্তা, নিজেদের মনন, নিজেদের সঙ্গ।

মহামারি এনেছে কিছু নিয়ন্ত্রণ। অনিয়ন্ত্রিত রয়েছে আমার দেহ ও মন,আমার উৎসাহ, আমার কৌতূহল, আমার অন্থহীন, তুঙ্গহীন চিন্তাশক্তি। তাই অন্তরীণ হলেও আমি অন্তরীণ নই।।

মণীশ নন্দী

ভার্জিনিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE