তূর্য বাইনের ‘হালকা বলপ্রয়োগের রসিকতা’ (২৬-৫) প্রবন্ধে ধরা পড়েছে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি হারানোর এক ইতিবৃত্ত। এমন পরিমণ্ডলে যে সমস্ত ঘটনা ঘটেছে প্রবন্ধটি তার ধারাবাহিক তথ্যপুঞ্জ। মনে রাখতে হবে, এমন বিপর্যয়ে এক দল শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর হাতে আইনজীবীরাও আক্রান্ত হন। কিন্তু কেন? আইনজীবী কোন মামলা গ্রহণ করবেন বা করবেন না, তা সম্পূর্ণ তাঁর ব্যক্তিগত অধিকার। তাঁকে বাধা দিয়ে বা ভয় দেখিয়ে তাঁর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করলে পরোক্ষে বিচারপ্রার্থীর সুবিচার লাভের অধিকারই লঙ্ঘিত হয়।
বস্তুত, আইনজীবীদের উপর সম্মিলিত আক্রমণের মূলে রাজনৈতিক অভিসন্ধির গন্ধ পাচ্ছে মানুষ। তাঁদের ‘চাকরিখেকো’ সম্বোধনে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। স্মরণীয়, মুখ্যমন্ত্রী-সহ শাসক দল নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে চাকরিহারাদের সমস্যা সমাধানের পথ দেখাতে গিয়ে আরও জটিলতায় জড়ান। তাতে চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের পথে নামা ব্যতীত কোনও পথ ছিল কি? এর পরে কসবা ডিআই অফিসের সামনে নজিরবিহীন পুলিশি নিপীড়নের শিকার হতে হল তাঁদের। এক দিকে চলল চাকরিহারাদের ধর্না, অন্য দিকে শাসকের লাগাতার নিন্দা-কুৎসা। নতুন করে শিক্ষা দফতর পরীক্ষা নিতে চাইলে চাকরিহারারা আর কোনও দিশা না পেয়েই বিকাশ ভবনের গেটে শান্তিপূর্ণ অবস্থানে শামিল হন। এমন পরিস্থিতিতে বিধাননগর পুলিশ যে ভাবে নির্বিচারে শিক্ষক এবং সাংবাদিকদের উপর চড়াও হন, তা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ থাকবে। মুখ্যমন্ত্রীও জানেন ভয়ঙ্কর দুর্নীতি হয়েছে। যিনি মাথা উঁচু করে সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে ক্ষমতায় এলেন, তাঁর মাথা আজ নত হয়েছে তাঁরই সহযোদ্ধাদের দুর্বুদ্ধিতে। তবে, আর নয়। বাম আমলে নেতা-মন্ত্রীর ঔদ্ধত্য আমজনতা মেনে নেয়নি। এ ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হবে না। তবে সর্বাগ্রে বাঁচাতে হবে শিক্ষাঙ্গনকে।
সূর্যকান্ত মণ্ডল, কলকাতা-৮৪
দ্বিচারিতা কেন
গত ১১ জুন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিদ্যুৎমন্ত্রী ‘স্মার্ট প্রিপেড মিটার লাগানো বন্ধ করা হল’ এই মর্মে বিধানসভায় একটি বিবৃতি দেন। যার ফলে রাজ্য জুড়ে লক্ষ লক্ষ সাধারণ গৃহস্থ কিংবা ছোট দোকানদাররা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়েন। অভিযোগ ছিল, কেন্দ্রীয় সরকারের রিভ্যাম্পড ডিস্ট্রিবিউশন সেক্টর স্কিম (আরডিএসএস)-এর অন্তর্গত এই স্মার্ট মিটার আদতে টাকা লুটের যন্ত্র। সারা দেশ জুড়েই এই মিটার লাগানো (বিদ্যুৎ আইন ২০২৩ অনুযায়ী) বাধ্যতামূলক নয় বলা হলেও বিহার, ওড়িশা, কেরল, কর্নাটক, অসম-সহ পশ্চিমবঙ্গে লক্ষ লক্ষ এই মিটার গ্রাহকের অনুমতি না নিয়ে ভয় দেখিয়ে, লাইন কাটার হুমকি দিয়ে বসানো হয়েছে। এ কথাও সত্যি যে, গত চার বছর ধরে এ রাজ্যে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের অরাজনৈতিক সংগঠন ‘অল বেঙ্গল ইলেকট্রিসিটি কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশন’ (অ্যাবেকা) জনবিরোধী বিদ্যুৎ আইন ২০২৩ বাতিল ও স্মার্ট মিটারের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের সংগঠিত করে আন্দোলন করে আসছে। এই সংগঠনটি গত দুই দশক পূর্বে পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকার কর্তৃক বিদ্যুৎ বেসরকারিকরণ ও সিইএসসি-র মতো লাভজনক সংস্থাকে বেসরকারি হাতে বিক্রি করে দেওয়ার প্রতিবাদে পুলিশি অত্যাচার সহ্য করে রক্তক্ষয়ী আন্দোলন সংগঠিত করেছিল। বামফ্রন্টের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আমলে দীর্ঘ অনশন আন্দোলনের ফলস্বরূপ কৃষি বিদ্যুতে এককালীন কুড়ি কোটি টাকা ভর্তুকিও আদায় করেছিল এরা।
তবে এখন আর জি কর কাণ্ড ও যোগ্য শিক্ষকদের আন্দোলনের পর ফের গৃহস্থ বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সংগঠিত জনরোষ যাতে ফেটে না পড়ে, সে দিকে লক্ষ রেখে অথবা আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে খানিকটা পিছু হটে আপাতত প্রিপেড মিটার লাগানোর পরিকল্পনাকে বাতিল করেছে রাজ্য সরকার। অথচ, এ রাজ্যে বিরোধী দলগুলিও স্মার্ট মিটার না বসানোর সিদ্ধান্তকে তাদের আন্দোলনের জয় বলে ঘোষণা করে জনমতকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। বিরোধী বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম— সবাই এক সঙ্গে তৃণমূল সরকারকে দোষারোপ করে তাদের পালে হাওয়া টানতে চাইছে। আসল সত্য এই যে, দলগুলি কেন্দ্রীয় সরকারের স্মার্ট মিটারের বিরোধিতা নীতিগত ভাবে করতে পারে না কারণ এরাও ক্ষমতাসীন রাজ্যে জনমতকে তোয়াক্কা না করে, অম্বানী-আদানিদের ব্যবসার স্বার্থে স্মার্ট মিটার চালু করছে। তা হলে, এ রাজ্যে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে আন্দোলনের নামে দ্বিচারিতা কেন?
স্বপন জানা, পূর্ব মেদিনীপুর
যাচাই কোথায়
কয়েক দিন যাবৎ সংবাদমাধ্যমে অবৈধ ভোটার তথা ভোটার তালিকা নিয়ে নানা অভিযোগ সামনে আসছে। এই সূত্রে ‘অনুদান-সুবিধায় কি ঢুকছে অবৈধ ভোটারও’ (২৩-৫) প্রতিবেদনটি পড়লাম। বেশ কয়েক বছর ধরেই রাজ্য সরকার নানা প্রকল্প তথা ভাতা বৃত্তি শুরু করেছে পুরোদমে। ভোটার, আধার কার্ড থাকলেই সরকারি কোনও সুবিধার আবেদন করতে পারেন নাগরিকেরা। ফলে কোনও রকম সুবিধা বা ভাতা পেতে ভোটার, আধার কার্ড বানানো বা সংশোধন করা চলছেই বছরভর। চলছে পদবি পরিবর্তন, জন্মতারিখ সংশোধনের বিষয়গুলো। বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদন করতে ফর্ম-৮ পূরণ করে ভোটার কার্ডে বয়স বাড়ানোর প্রবণতাও গ্রামেগঞ্জে কম নয়। নথি হিসাবে আধার কার্ড আপলোড করে জন্মতারিখ বা বয়স সংশোধনের আবেদন করা হচ্ছে অনলাইনে। এর আগে আধার কার্ড দেখিয়ে জন্মতারিখ বা বয়স সংশোধন করা হয়েছে, এমনকি নতুন ভোটারের নামও তোলা হয়েছে। যদিও ভোটার কার্ড জন্মতারিখের প্রামাণ্য নথি নয় বলেই এখন ডিজিটাল ভোটার কার্ডে উল্লেখ করা হচ্ছে। ২০১৯-২০২১ সালে ব্যাপক ভাবে ভোটার তালিকা সংশোধন করা হয়েছে। সেই সময় অনেকে পদবি এমনকি নামও পরিবর্তন করে নিয়েছেন। নথি যাচাই তথা শুনানি তেমন হয়নি বললেই চলে। অনলাইনে সংশোধনের আবেদন জমা পড়েছিল প্রচুর।
আধার কার্ড জন্মতারিখ ও নাগরিকত্বের প্রামাণ্য নথি নয়। তবু এখনও ভোটে নতুন নাম তোলার ক্ষেত্রেও অনলাইনে কেবলমাত্র আধার কার্ড ব্যবহার করা যাচ্ছে। সুতরাং, সঠিক নথি যাচাই করা আবশ্যক হয়ে উঠেছে। কারও ক্ষেত্রে কিছু নথিতে এক পদবি, আর কিছু নথিতে অন্য পদবিও দেখা যায় পাড়ায় একটু খোঁজখবর নিলেই। অনেকে ঠাকুরদার পদবি ছেড়ে অন্য পদবি ধরেছেন। তাই নথি যাচাই করা আবশ্যক হয়ে উঠছে। এমনও দেখেছি বিবাহিত মেয়েদের ক্ষেত্রে দুই জায়গায় ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে। যেখানে বিয়োজন করতে এখন আর এএসডি বা স্যুয়োমোটোর বিকল্প নেই বিএলও তথা নির্বাচন কমিশনের কাছে, সেখানে ফর্ম-৭ দিতেই হবে, যা সহজসাধ্য নয়।
বিবাহিত মহিলাদের বেলায় বাবার বাড়ির গ্রাম পঞ্চায়েতের লিঙ্কের শংসাপত্র না যাচাই করার কারণেই একাধিক জায়গায় নাম থাকার সম্ভাবনা বাড়ে। বিবাহিত মহিলাদের শ্বশুরবাড়িতে ভোটার তালিকায় নতুন নাম তোলা বা স্থানান্তরণের ক্ষেত্রে আবেদনের সঙ্গে বাপের বাড়ির পঞ্চায়েত থেকে পিতা-মাতার এপিক নম্বর-সহ বর্তমান ভোটার তালিকায় ওই মহিলার নাম আছে কি নেই, দেখতে হবে। সেই সঙ্গে বসবাসের তথ্য উল্লেখ করে কাউন্টার সাইন-সহ প্রধানের শংসাপত্র জমা করা হলে এবং সংশ্লিষ্ট শুনানির সময় তা যাচাই করলে এমন সমস্যা এড়ানো যাবে অনেকটাই। এ ছাড়া বিয়ের শংসাপত্রও দেখা প্রয়োজন। না হলে যাকে তাকে স্বামী বানিয়ে নাম তোলা যেতেই পারে। নতুন নাম তোলার জন্য বসবাসের প্রামাণ্য হিসাবে রেশন কার্ড বা বিকল্প কিছু না থাকলে অন্তত পঞ্চায়েতের শংসাপত্র নথি হিসাবে থাকা উচিত।
হামিম হোসেন মণ্ডল, ঝাউবনা, মুর্শিদাবাদ
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)