অশোক কুমার লাহিড়ী ‘এক অসহনীয় অপচয়’ (৪-৮) শীর্ষক প্রবন্ধে অতি ফলনের আড়ালে প্রান্তিক মানুষের জীবনের এক করুণ কাহিনি তুলে ধরেছেন। প্রবন্ধকার যথার্থই বলেছেন যে, ফসলের অতি উৎপাদন হলে তা সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। কিন্তু সেই সংরক্ষণের ব্যবস্থা কে করবে? ব্যক্তি চাষির পক্ষে তা সম্ভব হয় না। তা হলে রাষ্ট্র সে উদ্যোগ কেন করবে না? এ সব প্রশ্নের সহজ উত্তরও দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় দেখেছেন সরকার ব্যবস্থা করেনি। অতএব তিনি বেসরকারি উদ্যোগকেই স্বাগত জানিয়েছেন। এ বিষয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কিছু কথা বলতে চাই। আম, ধান, আলুর অতি ফলন এবং প্রতি বছর তা অপচয়ের বাস্তব চিত্রটি উঠে এসেছে প্রবন্ধে। কখনও এগুলি বস্তা বস্তা পচে যায়। কখনও আবার আকাশছোঁয়া দামে এগুলি কিনতে গিয়ে মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। গরিব চাষিদের অবস্থা ফেরে না। অথচ, বাড়তি মুনাফা লোটেন আড়তদাররা।
এ সবের পাশাপাশি বাঁধাকপি, টমেটো-র মতো বিভিন্ন আনাজ আর টগর, দোপাটি, গাঁদা, পদ্ম, গোলাপ, নীলকণ্ঠ, আকন্দ, জবা-সহ হাজার রকম ফুলের চাষ ও তার অপচয়কেও এর সঙ্গে যুক্ত করা দরকার। ঠাকুরনগর-সহ উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ, গোবরডাঙা থেকে পাঁচপোতা, রানাঘাট পর্যন্ত একটি বৃহৎ অঞ্চলের অর্থনীতির ভরকেন্দ্রে রয়েছেন ফুলচাষিরা। শুধুমাত্র সংরক্ষণের অভাবে নিম্নবিত্ত এই চাষিরা প্রতি বছর আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। এর পর সংসার চালাতে গিয়ে তাঁরা ক্রমশ ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েন। অতি ফলনে দাম এতটাই কমে যায় যে, বাজার পর্যন্ত আনার ভাড়াটুকুও চাষিরা পান না। এ ছাড়া বর্ষার অতিরিক্ত জলে নিচু জমির ফুল বা ফসল পচে যাওয়ার সমস্যা তো আছেই। সোজা কথায়, সংরক্ষণ করা গেলে অসময়ে অল্প ফলনেও বাজার চাঙ্গা রাখা সম্ভব হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। হিমঘর এবং প্রক্রিয়াকরণ পরিকাঠামোর কাজটি সরকারি সংস্থা দিয়ে হবে না বলেই মত প্রবন্ধকারের। প্রশ্ন, কেন্দ্রে ও রাজ্যে যে সরকার প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধি অথবা কৃষক বন্ধু প্রভৃতি প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকের উন্নতি চাইছে, তারা কৃষকের স্বার্থ দেখতে অপারগ হচ্ছে কেন? উক্ত প্রকল্পের মাধ্যমে চাষিরা কি সত্যিই লাভবান হচ্ছেন, না জমির মালিক লাভবান হচ্ছেন, সে বিষয়ে সরকার অবগত আছে কি? মনে রাখতে হবে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভাগচাষিরাই চাষের কাজে যুক্ত থাকেন। জমির মালিক চাষ করেন না। কেবল চাষি হওয়ার সরকারি সুবিধাগুলি ভোগ করেন। কবি নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন, “মাটিতে যাঁদের ঠেকে না চরণ/ মাটির মালিক তাঁহারাই হন।” স্বাধীনতার এত বছর পরেও আমাদের কি সেই আক্ষেপ ঘুচেছে?
দীপায়ন প্রামাণিক, গোবরডাঙা, উত্তর ২৪ পরগনা
খাদ্যান্বেষী
এই সংবাদপত্রের প্রথম পৃষ্ঠার ছবি ‘এক টুকরো খাবারই স্বপ্ন’ (৭-৮) আর্থসামাজিক বৈষম্যের এক বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছে আমাদের সামনে। এই দৃশ্য আজন্ম দেখেছি, শুধু এই শহরেই নয়, এ দেশের বাণিজ্যিক রাজধানীর ফুটপাতেও। কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর ‘ফুটপাথের কবিতা’-য় লিখেছিলেন, “ন্যাংটো ছেলে আকাশে হাত বাড়ায়/ যদিও তার খিদেয় পুড়ছে গা/ ফুটপাতে আজ লেগেছে জোছনা।...” তবে এই ছবিটি দেখে স্বল্প সান্ত্বনা জাগে— দুই শিশুর অঙ্গে পরিধেয় আছে, গলায় মালা আছে, ছোট্ট হাতে বালা আছে, এক জনের পায়ে মল আছে। মাঝে মাঝে মনে হয় এই শৈশব যদি হঠাৎই বলে ওঠে “খাবার চাই না, হাতে একটা আধলা ইট দাও, সামনের খাবারের দোকানের কাচটাকে ভেঙে ফেলি, নিজের খাবার নিজেই জোগাড় করি।” চার্লি চ্যাপলিনের দ্য কিড ছবিটা কি ওরা ক্ষুধার্ত চোখে দেখেছে? তা হলে, সেই শৈশবকে কী বলব— হিংস্র, সমাজবিরোধী? কবি সুকান্ত স্বল্পায়ু ছিলেন। ‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে’ যাওয়ার অঙ্গীকার ছিল তাঁর। আমরা সেই কথার মর্যাদা দিতে পারিনি আজও।
এ দিকে আমরা, যাদের দু’বেলা অন্নসংস্থানের সমস্যা নেই, একটু সতর্ক হতে পারি যাতে আমাদের ঘরে খাদ্যের কখনও অপচয় না হয়। কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার তুষার তালুকদারের একটি লেখায় জেনেছিলাম, মাদার টেরিজ়া বিমানযাত্রায় পাওয়া খাবারের প্যাকেট সযত্নে রেখে দিতেন ‘নির্মল হৃদয়’-এর শিশুদের জন্য। সহযাত্রী তালুকদার সাহেবকেও অনুরোধ করেছিলেন, যদি উনি পুরোটা না গ্রহণ করে বাকিটা মাদারকে দিয়ে দেন। প্রসঙ্গত, যে দেশে এখনও বহু মানুষ দু’বেলা ভরপেট খেতে পায় কি না সন্দেহ, সেখানে খাদ্যমেলা বা ওই জাতীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা কতখানি যুক্তিসঙ্গত, জানি না। যদি এই রকম অনুষ্ঠান করতেই হয়, তা হলে দিনের শেষে যে খাবারগুলি অতিরিক্ত রয়ে গেল, সেগুলি এই ক্ষুধার্ত মানুষদের মধ্যে বিতরণ করে দেওয়া যায়। কিংবা এই অনুষ্ঠানে যাঁরা অংশগ্রহণ করেন, তাঁরা সকলেই সামান্য কিছু টাকা দিয়ে এক দিন ওই অনুষ্ঠানেই দরিদ্র শিশুদের মধ্যে খাবার বিতরণ করলেন নাহয়। তাতে হয়তো বিশাল কিছুই হবে না, তবে তখন কিছুটা ‘অন্য রকম’ হলেও হতে পারে প্রবল বৈষম্যের ছবিটা।
অপরূপ রায়, কলকাতা-১০৭
কঠিন কাজ
অরবিন্দ সামন্তের ‘সন্তান বড় হয়ে কেমন হবে’ (৬-৮) শীর্ষক প্রবন্ধের সঙ্গে একমত হওয়া গেল না। প্রবন্ধকার উল্লেখ করেছেন প্রখ্যাত মনোবিদ জুডিথ হ্যারিসের মত। সেই মতানুযায়ী, পিতামাতা নয়, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ শিশুরা শেখে সমবয়সিদের থেকে। দীর্ঘ দিনের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা কিন্তু এর উল্টো কথা বলে। দেখা গিয়েছে, একটি শ্রেণিকক্ষে ন্যূনতম সত্তর জন কিশোর-কিশোরী নিত্যদিন এক সঙ্গে ওঠা-বসা, মেলামেশা করলেও, তাদের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ এক হয়ে যায় না। বিনয়ী, ভদ্র ছাত্রীটিকে দেখেও দুর্বিনীত ছাত্রটির স্বভাবের ন্যূনতম পরিবর্তন হয় না। ‘গ্রন্থকীট’, স্বভাবশান্ত ছাত্রটি বাকিদের শত হুল্লোড়েও নিবিষ্ট থাকে আপন পাঠে। খতিয়ে দেখা গেছে, ছাত্রছাত্রীদের এ-হেন স্বভাব তৈরি হয়েছে তাদের বাড়িতেই, বাবা-মায়ের কাছে। প্রচলিত কথায় যথার্থই বলা হয়ে থাকে ‘চ্যারিটি বিগিনস অ্যাট হোম’। উচ্চশিক্ষিত হওয়ার প্রয়োজন নেই, বাবা-মা শুধুমাত্র প্রজ্ঞাবান হলেই সন্তানরা চরিত্রবান হতে বাধ্য।
সাধারণত ছোটরা বড়দের, বিশেষত বাবা-মাকে দেখে শেখে। তাই সন্তানকে আগামী দিনে ‘বড় মনের মানুষ’ করতে হলে অভিভাবকদেরই সবার আগে বড় মনের মানুষ হতে হবে। নিজেদের আচরণকে সন্তানদের সামনে উদাহরণ হিসাবে মেলে ধরতে হবে, বাস্তব জীবনে যা নিঃসন্দেহে এক বিরাট কঠিন কাজ।
পার্থ পাল, মৌবেশিয়া, হুগলি
অস্বাস্থ্যকর
বিরিয়ানি বর্তমানে সাত থেকে সত্তর, বাঙালির প্রিয় খাদ্যের মধ্যে অন্যতম। প্রতিটি উৎসব-অনুষ্ঠানে বেড়ে যায় এর বিক্রি। তবে উৎসবের দিন শুরু হওয়ার আগে প্রয়োজন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার। রাস্তার ধারের বিরিয়ানির দোকানে ভিড়ের চাপে সব সময় মেনে চলা হচ্ছে না সেই পরিচ্ছন্নতা। দোকানের সামনে অপরিষ্কার জায়গায় আঢাকা পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে মাংস, কিংবা বিরিয়ানির ভাত। তাই প্রয়োজন নজরদারির। স্বাস্থ্যই সম্পদ, এ-কথা মাথায় রেখে চলুক ব্যবসা।
রাজ ঘোষ, কামালপুর, পূর্ব বর্ধমান
রাস্তা বন্ধ
পুজো আর ক’দিন পরেই। প্রতি বারের মতো এ বারও অনেক জায়গায় রাস্তা বন্ধ করে প্যান্ডেল তৈরি হচ্ছে। এ ভাবে নিত্য দিনের যাতায়াতের পথ বন্ধ করে প্যান্ডেল করা যায়?
সূর্য দাস, কলকাতা-৩০
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)