Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: অপরিচিত আপনজন

এই অতিমারির সময়ে কোথাও রাস্তায়, বা হাসপাতাল চত্বরে নিঃসঙ্গ রোগীদের শ্বাসকষ্টে কষ্ট পেতে দেখা যাচ্ছে, কোথাও হাসপাতালে বেড খালি থাকা সত্ত্বেও মুমূর্ষু রোগীদের ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না— এমন নানা অভিযোগ উঠছে।

শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২০ ০০:৪১

সালটা ঠিক মনে পড়ছে না, বোধ হয় ১৯৭৫। এক ইংরেজি দৈনিকের পাতায় একটা ঘটনার কথা পড়েছিলাম। সকালবেলা অফিসের সময় এক ভদ্রলোক ভিড় দোতলা বাসের পাদানিতে দাঁড়িয়ে আছেন পার্ক স্ট্রিটে নামবেন বলে। হাতের ব্রিফকেসটা বেশ ভারী। তাই নীচে পায়ের কাছে, দুটো পায়ের মাঝখানে সেটা রাখা। কিন্তু, গন্তব্যে পৌঁছনোর সময় পিছনের ভিড়ের প্রচণ্ড চাপে ব্রিফকেস আর নেওয়া গেল না। পার্ক স্ট্রিটে নেমে তিনি দেখলেন হাতে ব্রিফকেস নেই। বাস তত ক্ষণে ছেড়ে দিয়েছে। কী করবেন বুঝতে না পেরে ভদ্রলোক হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। এ দিকে, বাসও কিছুটা এগিয়ে হঠাৎ থেমে গেল। ভদ্রলোক দেখলেন, একটা রোগামতো ছেলে ওঁর বাসে ফেলে আসা ব্রিফকেস হাতে নিয়ে দৌড়তে দৌড়তে ওঁরই দিকে আসছে। কাছে এসে দুম করে ব্রিফকেসটা তাঁর পায়ের কাছে নামিয়ে দিয়েই আবার ছেলেটা দৌড়ে বাসে উঠে পড়ল। বাসও সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে দিল। ভদ্রলোক অবাক। একটা ধন্যবাদ জানানোর সুযোগও দিল না ছেলেটা।

আজকে, যখন বনগাঁ হাসপাতালে ৬৫ বছরের বৃদ্ধ স্বামীকে ধরে অ্যাম্বুল্যান্সে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাতর অনুনয় শুনি এক ভদ্রমহিলার গলায় (‘একটু ধরুন দাদা! মিলল না সাড়া হাসপাতালেই’, ২৭-৭), তখন মনে হয় কী এক সময়ই না কাটিয়ে এসেছি আমরা!

প্রতীক ঘোষাল

চন্দননগর, হুগলি

মানবিক

বনগাঁ থেকে বেহালা— করোনা নিয়ে অমানবিক আচরণ ঘটেই চলেছে। কোথাও, অসুস্থ বৃদ্ধকে অ্যাম্বুল্যান্সে তোলার জন্য এক জনও এগিয়ে এলেন না বলে রাস্তায় পড়ে তিনি মারা গেলেন। আবার কোথাও ছ’ঘণ্টা এক বৃদ্ধা অজ্ঞান হয়ে পড়ে রইলেন, তাঁকে এক জনও ছুঁয়ে দেখল না। অবশেষে তাঁর মৃত্যুও হল। তবে কিছু ব্যতিক্রমও হচ্ছে। উত্তর ২৪ পরগনায় বাদুড়িয়া থানার মছলন্দপুরে, সুভাষপল্লির বছর চুয়াল্লিশের তরুণ হালদার আক্রান্ত হন করোনায়। উদ্বিগ্ন পরিবার, বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা ও বাচ্চারা আছেন। সেই সঙ্গে প্রধান চিন্তা, পর দিন সকালে প্রতিবেশীদের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে! সব সময় প্রতিবেশীদের আপদে, বিপদে পাশে থাকা পরিবারটির সঙ্গে কি প্রতিবেশীরা এমন অমানবিক ব্যবহার করবেন?

পর দিন সকালে প্রতিবেশীরা শুনে সবাই এলেন। দূর থেকে দাঁড়িয়ে বললেন, তাঁরা সব সময় পাশে আছেন। তার পর থেকে ফোন করে খবর নিয়েছেন, পালা করে ফল, দুধ, মাছ, সবজি— সব গেটের বাইরে রেখে গিয়েছেন তাঁরা প্রতি দিন। বন্ধু, আত্মীয় সবাই খাবার দিয়ে যাচ্ছেন, এমনকি বাচ্চার জন্য চিপসও।

রমা রায় হালদার

হাবরা, উত্তর ২৪ পরগনা

অমানবিক

বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের ঘটনায় আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সকলেই ছিলেন। কিন্তু সঙ্কটকালে কেউই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেননি। অসহায় স্ত্রী একা পারেননি মাটিতে বসে পড়া স্বামীকে সামনেই দাঁড়িয়ে থাকা অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে দিতে। ‘‘গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারও দোষ প্রমাণিত হলে পদক্ষেপ করা হবে’’— হাসপাতাল সুপারের এই ছকে বাঁধা ও দায়সারা গোছের বক্তব্য যে রাজ্যের সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার চূড়ান্ত উদাসীনতার পরিচায়ক, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।

এই মৃত্যু অবশ্য বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এই অতিমারির সময়ে কোথাও রাস্তায়, বা হাসপাতাল চত্বরে নিঃসঙ্গ রোগীদের শ্বাসকষ্টে কষ্ট পেতে দেখা যাচ্ছে, কোথাও হাসপাতালে বেড খালি থাকা সত্ত্বেও মুমূর্ষু রোগীদের ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না— এমন নানা অভিযোগ উঠছে। কোভিড ছোঁয়াচে রোগ। যথেষ্ট সাবধানতা ছাড়া কোভিড-আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসা উচিত নয়, বার বারই এই কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তা সত্ত্বেও, কোভিড পরিস্থিতিতে, সত্য-মিথ্যা, গুজব ও অতিরঞ্জনের আবহে আমরা মনে হয় একটু বেশি সর্তক, নিষ্ঠুর ও অমানবিক হয়ে উঠছি।

হারান চন্দ্র মণ্ডল

কলকাতা-১২৩

পরীক্ষা কেন

গত ২৩ জুলাই রাত দেড়টা নাগাদ আমার স্ত্রী পেটের গন্ডগোলে হঠাৎ খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েন। শুরু হয় লাগাতার টয়লেট যাওয়া এবং বমি। কাছাকাছি দু’জন ডাক্তারবাবুকে (যাঁদের মধ্যে এক জন আমাদের গৃহ চিকিৎসক) ফোনে কয়েক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করে বিফল হলাম। এক জনের ফোন বন্ধ আর অন্য জন ফোন ধরলেনই না।

অগত্যা চব্বিশ ঘণ্টা সেবা প্রদানকারী দু’টি (অন্তত বিজ্ঞাপন অনুযায়ী) অসরকারি হাসপাতালে ফোন করলাম। একটি হাসপাতাল জানিয়ে দিল, ওঁকে এক্ষুনি হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। কিন্তু সেই হাসপাতালে কোনও ফাঁকা বেড নেই। অপর হাসপাতাল জানাল যে, রোগীকে ভর্তি নেওয়া হবে। কিন্তু তার আগে ৩০,০০০ টাকা জমা দিতে হবে এবং রোগীকে আইসোলেশন-এ থাকতে হবে। প্রতি দিনের শুধু বেড চার্জই লাগবে ১২,০০০ টাকা। এর পর রয়েছে কোভিড টেস্ট-সহ নানা আনুষঙ্গিক খরচ। ওঁর শরীরে কোভিডের কোনও লক্ষণই নেই এবং শুধুমাত্র একটু তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রয়োজন, এ কথা বার বার জানানো সত্ত্বেও আমার অনুরোধে কর্ণপাত করা হল না। জানিয়ে দেওয়া হল, প্রথমে কোভিড পরীক্ষা, তার পর অন্য বিষয়।

আমার প্রশ্ন, চিকিৎসার প্রয়োজনে আগত রোগীদের প্রথমেই থার্মাল স্ক্রিনিং করে নেওয়া হচ্ছে‌। এতে উত্তীর্ণ হওয়ার পরও কেন প্রধান উপসর্গটিকে প্রাথমিক গুরুত্ব দিয়ে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে না? না কি এটি ঘোলা জলে মাছ ধরার একটি কৌশল?

সত্যব্রত দত্ত

কলকাতা-৮৪

পাশে থাকুন

করোনা রোগীদের নাম প্রকাশ্যে পোস্ট করে ওঁদের বেঁচে থাকাকে বিষিয়ে তুলবেন না। কোথাও করোনা সংক্রমণের খবর থাকলে প্রশাসনের লোকজনই নির্দিষ্ট এলাকায় গিয়ে সবাইকে সচেতন করে আসবেন। নির্দিষ্ট এলাকা ঘিরে দেবেন। এটা করাও হচ্ছে।

করোনা রোগীরা এমনিতেই খুব দুশ্চিন্তায় থাকেন। এই রোগের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য যেটা আগে প্রয়োজন, তা হল মনোবল। তার পর চিকিৎসা। ওঁদের নাম সমাজমাধ্যমে উল্লেখ করে কিছু উস্কানিমূলক বক্তব্য লিখে পোস্ট করলে, অনেকে নানা ধরনের মন্তব্য করছেন। এই মন্তব্য পড়ে ওঁরা মানসিক ভাবে ভেঙে পড়তে পারেন। শারীরিক অবস্থারও ক্ষতি হতে পারে।

তার চেয়ে সবাই সবাইকে সচেতন করুন। নিজে সচেতন ও সতর্ক থাকুন। ফোন নম্বর থাকলে আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে, তাঁর বাড়ির লোকেদের সঙ্গে কথা বলে সাহস জোগান। মানসিক ভাবে তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দিন। একটু সহানুভূতি অনেক করোনা রোগী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটাতে পারবে।

সঞ্জয় কুমার মল্লিক

কেশপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

শতায়ু

কিংবদন্তি নৃত্যশিল্পী অমলাশঙ্করের প্রয়াণ প্রসঙ্গে ঋজু বসু ‘‘অতিমারিতে অনুপ্রেরণা শতায়ু, নব্বই পেরোনোরা’’ (২৫-৭) শতায়ু ব্যক্তিদের কথা বলেছেন। এঁদের সঙ্গে এক কিংবদন্তি চিকিৎসকের কথা সংযোজন করতে চাই। তিনি, পদ্মশ্রী মণি কুমার ছেত্রী। নিয়মানুবর্তিতা কাকে বলে, এখনও তাঁর কাছে শিক্ষণীয়। এ বছর একশো বছর পূর্ণ করার পরও এই স্বনামধন্য চিকিৎসক নিয়ম করে রোগী দেখেন। অতিমারির সময়ে এমন এক জন চিকিৎসকের উল্লেখ আশা করা যেতেই পারে।

ফটিক চৌধুরী

কলকাতা-৮

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,

কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

Coronavirus Health Covid-19
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy