Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: দিন হল অবসান

কলকাতার এক-পর্দার ছবিঘরগুলোর মধ্যে ‘মিত্রা’ ব্যতিক্রম ছিল না। কিন্তু, সাম্প্রতিক অতীতে আধুনিকতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেশ সেজে উঠেছিল।

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০১

স্বল্প দূরত্বের ব্যবধানে তিনটি স্টপ। ফড়িয়াপুকুর, টাউন স্কুল, হাতিবাগান। পাশাপাশি ছিল তাদের অবস্থান— রাধা, শ্রী, উত্তরা, মিনার এবং মিত্রা, দর্পণা। ফড়িয়াপুকুর থেকে শিবদাস ভাদুড়ি স্ট্রিট ধরে একটু এগোলে, টকি শোহাউজ়। অবশেষে, ইতিহাসকে সাক্ষী রেখে, ‘পর্দা নামল মিত্রার’ (৪-৪)।

কলকাতার এক-পর্দার ছবিঘরগুলোর মধ্যে ‘মিত্রা’ ব্যতিক্রম ছিল না। কিন্তু, সাম্প্রতিক অতীতে আধুনিকতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেশ সেজে উঠেছিল। অথচ, তারও ‘দিন অবসান হল’। পেশাদারি রঙ্গমঞ্চের দিন আগেই স্তিমিত হয়েছিল। মিত্রার পর্দা নামার সঙ্গে সঙ্গে হাতিবাগানের সিনেমাপাড়ার সুনাম অবলুপ্তির পথে আরও এক ধাপ এগোল।

ইতিহাস বলছে, ১৯৩১ সালে এই প্রেক্ষাগৃহের উদ্বোধনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নাম। কলকাতা উত্তর আরও একটু দীন হল। রাধা, শ্রী, উত্তরা এখন ইতিহাস। কোনওটা জামাকাপড়ের ঠান্ডা চবুতরা। কোনওটা বিপণি।

একটা সময়, যখন বিনোদনের হাজারও কিসিম উপস্থিত হয়নি, মাসের প্রথম রবিবার দুপুরে জম্পেশ করে মাংস-ভাত খেয়ে একটু দিবানিদ্রা এবং সন্ধেবেলায় রীতিমতো বাঙালি সাজে সপরিবার সিনেমা দেখতে যাওয়ার রেওয়াজ ছিল। কলকাতা উত্তরে সিনেমা-থিয়েটারে মেতে থাকার একটা জগৎ ছিল। মানের বিচারে সেই অতীত সংস্কৃতিকে পরখ না করাটাই শ্রেয়। কিন্তু, সেই স্বর্ণালি-সুদূর-অতীতকে হারিয়েও বাঙালি খুব একটা বিমর্ষ নয়। তাই মিত্রার পর্দা নেমে-যাওয়া, একটু ‘আহা’-‘উহু’ ব্যতিরেকে খাস উত্তর কলকাত্তাইয়া বাঙালিকেও সম্ভবত খুব একটা অখুশি করবে না।

‘রঙমহল’ এখন শপিং মল। ‘স্টার’ সিনেমা হল। সারকারিনা, বিজন, রঙ্গনা— শুধু নাম। বাসের স্টপে ‘রঙ্গনা’ বা ‘খান্না’ উচ্চারিত হলে স্মৃতিকাতর ঝিমুনি আসে বারেক। নব্য প্রজন্ম হয়তো জানতেও আগ্রহী নয় ইতিহাসকে। আরাম এবং ঘনিষ্ঠতার সুযোগ বেশি হওয়ায় এক শ্রেণির অল্পবয়সির কাছে মাল্টিপ্লেক্স স্বর্গরাজ্য। তাই মাল্টিপ্লেক্সে সকাল থেকে গভীর রাতের শো-ও একেবারে খালি যায় না। স্বাচ্ছন্দ্য-অভিলাষী দর্শক খরচের প্রশ্নেও খুব একটা জেরবার নন। কলকাতা ছাড়িয়ে দূর মফস্‌সলেও সিনেমা হলগুলোর ঝাঁপ বন্ধ হয়ে গেলেও তাই রমরমিয়ে চলছে মাল্টিপ্লেক্স কালচার। উপরন্তু, কেনাকাটা-বাইরে খাওয়া-ছবি দেখার সুবর্ণ সুযোগ একসঙ্গে দিচ্ছে মাল্টিপ্লেক্স। এটাও সিঙ্গল স্ক্রিন বন্ধ হয়ে যাওয়ার একটা কারণ।

তবুও মনের মধ্যে স্মৃতির যাওয়া-আসা। একের পর এক সিনেমা হল, পেশাদারি রঙ্গমঞ্চ অস্তাচলে গেলেও, উত্তর কলকাতার বনেদিয়ানায় তা বিন্দুমাত্র হেলদোল ঘটায় না, এ কথা ভেবে দুঃখও হয়। পরিবর্তন, বিশ্বায়নের নামে সব মেনে নিলে, নিজেদের অস্তিত্ব-সঙ্কটও যে প্রকট হয়, এ সত্য বাঙালিকে খুব একটা তাড়িত বা বিব্রত করে না।

ধ্রুবজ্যোতি বাগচী

কলকাতা-১২৫

আরও কিছু

‘মিত্রা’ (আগে ‘চিত্রা’) সিনেমা হল সম্পর্কে কিছু তথ্য জানাবার জন্য এই চিঠি। চিত্রার মালিকানা ছিল নিউ থিয়েটার্সের হাতে। ৩০ ডিসেম্বর ১৯৩০ সালে চিত্রার উদ্বোধন হয় নির্বাক ছবি ‘শ্রাীকান্ত’ দিয়ে। এর পর মার্চ ১৯৩১ সালে এটি সবাক প্রেক্ষাগৃহে রূপান্তরিত হয়।

নিউ থিয়েটার্সের যাবতীয় বিখ্যাত চলচ্চিত্র চিত্রায় মুক্তি পায়। রবীন্দ্রনাথ অভিনীত ‘নটীর পূজা’ চিত্রায় মুক্তি পেয়েছিল ২২ মার্চ, ১৯৩২। ‘চণ্ডীদাস’, ‘রূপলেখা’, ‘দেবদাস’, ‘ভাগ্যচক্র’, ‘গৃহদাহ’, ‘মুক্তি’ ছবিগুলি ১৯৩০-এর দশক জুড়ে মুক্তি পায়।

‘দেবদাস’ ছবিটি শরৎচন্দ্র চিত্রায় গিয়ে দেখেছিলেন। ছবিটি দেখে তিনি এত খুশি হন যে নিজের পয়সায় সকলকে মিষ্টিমুখ করিয়েছিলেন চিত্রা প্রেক্ষাগৃহের কার্যালয়ের ঘরে।

যখন নিউ থিয়েটার্সের ছবি থাকত না, তখন চিত্রায় অন্য প্রযোজক সংস্থার ছবি দেখানো হত। ১৯৫০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে নিউ থিয়েটার্সের আর্থিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। তাই মালিক বীরেন্দ্রনাথ সরকার চিত্রা বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। অবশেষে ১ বৈশাখ, ১৯৬৩ সালে চিত্রার নতুন মালিক হন হেমন্তকুমার মিত্র। তাঁর পদবি অনুসারে চিত্রার নাম হয় ‘মিত্রা’। উদ্বোধন করেন তৎকালীন বিখ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব অতুল্য ঘোষ। উদ্বোধনে এক মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান হয় ও হেমন্তকুমার মিত্র জাতীয় প্রতিরক্ষা তহবিলে এক হাজার টাকা দান করেন। অনুষ্ঠানে প্রাক্তন মালিক বীরেন্দ্র সরকারও উপস্থিত ছিলেন।

নিউ থিয়েটার্সের হাতে তিনটি প্রেক্ষাগৃহ ছিল: চিত্রা, নিউ সিনেমা ও রূপালি। বাকি দু’টি প্রেক্ষাগৃহ আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বীরেন সরকার ও নিউ থিয়েটার্সের স্মৃতিবিজড়িত এই প্রেক্ষাগৃহটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে, তা অত্যন্ত বেদনার হবে।

শ্রীশঙ্কর ভট্টাচার্য

কলকাতা-৩৯

ইতিহাস

‘কেমন করে লেখা হবে ইতিহাস’ (২৮-৩) পড়ে কয়েকটি কথা মনে এল। ইতিহাস যদি প্রাথমিক ভাবে পুরনো দিনের ঘটনার বিবরণ হয়, তা হলে যিনি বিবরণ দিচ্ছেন তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি, অভিজ্ঞতা এবং আবেগের টানাপড়েন, সমস্ত কিছুই ছাঁকনি হিসাবে কাজ করবে, যখন উনি ইতিহাসটা লিখবেন। যেমন সিপাহি বিদ্রোহের ইতিহাস কোনও ভারতীয় যে ভাবে লিখবেন এবং ভারতবর্ষের জাতীয় জীবনে তার প্রভাব ব্যাখ্যা করবেন, কোনও নিরপেক্ষ অন্য দেশের ব্যক্তি ঠিক সে ভাবে লিখবেন না। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভারতবর্ষের স্কুলছাত্রদের কাছে যে বিজয়বার্তা বহন করবে, পাকিস্তানের ইতিহাস বইতে সেই প্রতিফলন থাকবে না, আবার বাংলাদেশের স্কুলপাঠ্য ইতিহাস বইতে তো এটা জাতীয় জীবনের স্বর্ণ অধ্যায় হিসাবে চিহ্নিত হবে।

বঙ্কিমচন্দ্র আক্ষেপ করে লিখেছেন, সমস্ত জাতির ইতিহাস আছে কিন্তু বাঙালির নেই। বিদ্রুপ করে বলেছেন, ইংরেজরা শিকার করতে গেলে তার ইতিহাস লেখা হয়, কিন্তু বাঙালির ইতিহাস লেখা হয় না। প্রশ্ন করেছেন, বাঙালির ইতিহাস কে লিখিবে? উত্তর দিয়েছেন, আমি লিখিব তুমি লিখিবে। অর্থাৎ সাধারণ মানুষই ইতিহাসের বিবরণ লিখবেন। তখন সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা ও আবেগ ইতিহাসের উপাদান হবে।

সুদীপ বসু

বহরমপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার, মুর্শিদাবাদ

কেন ঝুঁকি?

প্রতি বছরের মতো এ বারও এই সময়ে একাদশ শ্রেণির খাতা দেখা, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকের (বোর্ডের) খাতা দেখা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খাতা জমা না দিলে রেজ়াল্ট বার করা যাবে না। তার উপর এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ফার্স্ট সামেটিভ ইভ্যালুয়েশন শেষ করে ১৬ তারিখের মধ্যে রেজ়াল্টের রিপোর্ট পাঠাতে হবে। এত কিছুর পরেও ভোটের ট্রেনিংয়ের যন্ত্রণা। যন্ত্রণা এ জন্য নয় যে, কোনও শিক্ষক ভোটে যেতে আগ্রহী নন। এই জন্য যে, ভোটকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত নয়। ট্রেনিং নিতে নিতে শুধু রাজকুমার রায়ের কথা মনে পড়ে। যদি এমন হত, কোনও ভোটকর্মীর বা রাজকুমারের মৃত্যুর পর জিনিসের দাম আর বাড়েনি, চাষি আত্মহত্যা করেননি, কোনও মহিলা সম্ভ্রম হারাননি, কারখানা বন্ধ হয়নি, কেউ বিনা চিকিৎসায় মরেননি, শ্রমিক ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন না, অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের জীবন সচ্ছল হয়েছে, তা হলে ব্যাপারটা আলাদা। কিন্তু আমাদের অভিজ্ঞতা ভিন্ন। কিছু মানুষের লুটেপুটে খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিতে মন চায় না।

নিখিল কবিরাজ

কল্যাণী, নদিয়া

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

ভ্রম সংশোধন

‘প্রয়োজন বম্বে গ্রুপ, ভুল রক্ত চাইল এনআরএস’ শীর্ষক সংবাদ প্রতিবেদনে (কলকাতা পৃ ১৪, ১২-৪) মহম্মদ আসলামকে শিশুটির বাবা লেখা হয়েছে। তিনি তার দাদু। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।

Mitra Cinema Hall
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy