চাকরি নিয়ে পরিবার-সমেত শিফ্ট করেছি ইন্ডিয়া থেকে। অনেক দিন ধরেই এই দেশের সংস্থাদের সঙ্গে কাজ করার জন্য এদের সম্বন্ধে মোটমুটি একটা ধারণা ছিলই। ৫৫ লক্ষ লোকের দেশ ফিনল্যান্ড। পর পর দু’বার দুনিয়ার সুখীতম দেশের শিরোপা পেয়েছে। দুর্নীতি প্রায় শূন্য। শিক্ষ্যাব্যবস্থা দুনিয়ার সেরা। তাই কোভিড ছড়িয়ে পড়ার পর আতঙ্কের চেয়েও অনুসন্ধিৎসা বেশি ছিল যে এ রকম একটা দুনিয়া কাঁপানো অতিমারি এরা কী ভাবে সামলায়!
প্রতি বছর এখানে ল্যাপ্ল্যান্ডে শীত কালে অরোরা দেখতে প্রচুর পর্যটক আসেন। তাই জানুয়ারি মাসের শেষে খবর পেলাম, উহান থেকে অরোরা দেখতে আসা এক পর্যটক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। প্রথম এক মাসের জন্য সংখ্যাটা একই ছিল। তাই পর্যটনশিল্প বা অন্য কোথাও তেমন কোনও পরিবর্তন চোখে পড়েনি। তার পর হঠাৎ খবর এল, মিলান ফেরত এক জনের মধ্যে করোনা ধরা পড়েছে। তার পর ধীরে ধীরে সংখ্যা বাড়তে লাগল। সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকার নানা বিধিনিষেধ চালু করল।
১৬ মার্চ থেকে সব স্কুল বেশ কিছু পরিষেবা— যেমন, লাইব্রেরি, থিয়েটার, মিউজিয়াম বন্ধ করে দিল (যদিও আর্লি এডুকেশন চালু আছে)। দশ জনের বেশি জমায়েত নিষিদ্ধ হল। তাতেই সংক্রমণের হার অনেকটাই কমেছে। ২৭ মার্চ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত হেলসিঙ্কি সীমান্ত বন্ধ করা হয়েছিল, যাতে করোনা অন্য জায়গায় না ছড়াতে পারে।
আরও পড়ুন: ২০২০-তে মানুষের নতুন মন্ত্র সামাজিক দূরত্ব
সীমান্ত বন্ধ করার পর থেকে মাল্টিস্টোরে জিনিস এর চাহিদা দ্বিগুণের বেশি বেড়ে গিয়েছিল, কিন্তু মাল্টিস্টোরগুলো পরিষেবা ঠিক রাখার চেষ্টা করছে, যাতে জিনিস শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবার সে সব জিনিস পাওয়া যায়। মাস্ক পরে সাবধানতার সঙ্গে সপ্তাহে এক বার মাল্টিস্টোরে গিয়ে জিনিস কিনে আনি। পাবলিক ট্রান্সপোর্টে কোনও পরিবর্তন না হলেও যাত্রী অনেকই কম। ২০ মার্চ এ দেশের সরকার ১৫ বিলিয়ন ইউরোর করোনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে ব্যবসা বা ব্যক্তিগত ক্ষতিপূরণ করার জন্য। যদিও এখনও কেউ জানে না কতটা আর্থিক ক্ষতি হবে। গরমে এখানে প্রচুর পর্যটক আসেন এখানকার মনোরম প্রকৃতি আর হ্রদ দেখতে, এ বার যা হবেই না।
আমার পরিবারে সব থেকে বেশি অসুবিধা বোধহয় আমার ৫ বছরের ছেলের! কারণ এখানে আর্লি এডুকেশন মুলত খেলাধুলার মাধ্যমে শেখানো হয়। এর সঙ্গে প্রচুর আউটডোর বা লাইব্রেরিতে ছবি আঁকা বা গল্প শোনারও চল আছে। কিন্তু এখন লকডাউনের জন্য সব কোর্সই অনলাইনে। আউটডোর বা লাইব্রেরিও বন্ধ। তাই সে বুঝে পায় না সারা দিন কী কী করবে। তবে ওর আনন্দের জন্য কিছু ব্যবস্থা নিতেই হয়। আসলে এখানে প্রচুর ন্যাচারাল পার্ক বা বনাঞ্চল থাকায় কিছুটা হলেও আউটিং বা হাইকিং করা যায়। আমরাও তা করি, যাতে মানসিক চাপ কম থাকে। জনসংখ্যা কম হওয়ার জন্য কারও সঙ্গে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা কমই।
আরও পড়ুন: আটকে পড়েছি, খাওয়ার টাকাও নেই, আমাদের ফেরান
এখনও পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার হাজার লোক এ দেশে আক্রান্ত ও মৃত প্রায় ২০০ জন। নতুন করে কোনও সংক্রমণের খবর সে ভাবে নেই। তবে ভাল খবর, এখন হাসপাতালে করোনা রোগী কমছে, দেশের গবেষকরা বলছেন, খারাপ সময় হয়তো বা পেরনো গিয়েছে। ফিনল্যান্ডের বাঙালি সঙ্ঘের তরফে চেষ্টা চলছে যতটা পারা যায় ভারতের ত্রান তহবিলে সাহায্য করা যায়। দেশের খবর পেতে অনলাইনে চোখ রাখছি আনন্দবাজারে। আশা করি খুব শিগগির এ সব ঠিক হয়ে যাবে। আবার একটা ব্যস্ত ও প্রাণচঞ্চল পৃথিবী দেখতে পাব আমরা।
শঙ্কর দত্ত
ফিনল্যান্ড
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)