সম্পাদকীয় ‘অধিকার নহে’ (২২-১১) পড়ে, বাজারের প্রতি আপনাদের অতিরিক্ত বিশ্বাসের কথা আবার মনে হল। শিক্ষা একটি বাজারের সামগ্রী নয়, শিক্ষা অত্যাবশ্যকীয় এবং শিক্ষা অধিকার। শিক্ষা রাষ্ট্রের দায়িত্ব, দেশের প্রতি দেশবাসীর দায়িত্ব। একটা লাইনে যদিও উল্লেখ হয়েছে, যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার ব্যবস্থা রাষ্ট্রের দায়িত্ব হতে পারে, উচ্চশিক্ষা নয়। তবে সর্বজনীন এবং সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাও যে ইতিমধ্যেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে, সে বিষয়ে একটা কথাও নেই। সরকারি স্কুলগুলো যে এখন মিড-ডে মিল, সাইকেল পাওয়া, বা ক’টা বাড়িতে পাকা শৌচালয় আছে তার হিসেব রাখার জায়গা হতে পারে, সে বিষয়ে আপনারা নিরুত্তাপ।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে আসি। ৮০-৯০ শতাংশ ছেলেমেয়েদেরই তো সামর্থ্য আছে বর্ধিত ফি দেওয়ার, বাকিদের ভর্তুকি দিলেই হয়— এই কথাটা আমাদের স্বাভাবিক লাগছে কেন জানেন? কারণ নিম্নবিত্তদের শিক্ষার প্রয়াসটাকে এর আগের ধাপেই সফল ভাবে আটকে দেওয়া গিয়েছে। যে ১০০ জন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে, তাদের ৭০-৮০ জনই নিম্ন বা নিম্নমধ্যবিত্ত হত, যদি সব শ্রেণির মধ্যে সমান ভাবে প্রাথমিক মাধ্যমিক শিক্ষা ছড়িয়ে পড়তে পারত। তবু যদি বর্তমান পরিস্থিতিকে বাস্তব ধরে নিয়ে, অন্তত এখনকার জন্য সবার ফি বাড়িয়ে, ৫-১০ শতাংশের জন্য ‘জলপানি’র ব্যবস্থা করি, তা হলে ক্ষতিটা কোথায়?
এর দুটো সমস্যা। এক, সরকারি খরচে কাটছাঁট বা ভর্তুকি কমানোর অভিমুখটা সাধারণত একমুখী, এক বার ভর্তুকি কমতে শুরু করলে তা আর বাড়ে না। ফলে ভবিষ্যতে যদি ১০ জনের জায়গায় ৮০ জন শিক্ষার্থীই অর্থনৈতিক অনগ্রসর পরিবার থেকে আসে, তখন তত জনের জন্য ভর্তুকির ব্যবস্থা থাকবে না, ফলত তাদের পরিবার শিক্ষায় উৎসাহই হারিয়ে ফেলবে। দুই, আমাদের দেশের ভর্তুকি বণ্টন ব্যবস্থার বাস্তবতাটাও ভাবতে হবে। দু’টাকার চাল থেকে শুরু করে মাননীয় সাংসদদের জন্য বরাদ্দ সুবিধাদি পর্যন্ত, কতটুকু ভর্তুকিযোগ্য লোকের হাতে পৌঁছয়, তা সবাই জানেন। অতএব, কার্যত, সমুদ্রে পৌঁছতে যে নদীনালাগুলোর প্রয়োজন তার জল তো আমরা গত ১৫-২০ বছরে শুষেই নিয়েছি। তবু যদি কেউ দূর গ্রাম থেকে পায়ে হেঁটেও সমুদ্রের তীরে পৌঁছে যায়, তার জাহাজে ওঠার বড় দরজাটা যেন আমরা ভেঙে না দিই।