Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

সম্পাদক সমীপেষু: রাজদ্বারে, শ্মশানে

এই ১৪ দিনের ঘটনার অভিজ্ঞতা কয়েদি জীবনের থেকেও ভয়ঙ্কর।

শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২০ ০০:৫৩
Share: Save:

গত মাসের মাঝামাঝি আমার স্বামী গুরুতর অসুস্থ হয়ে এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হলেন। জানতাম না, এটাই ছিল আমাদের সঙ্গে তাঁর শেষ দেখা। ১২ দিন ভেন্টিলেশনে থেকে যুদ্ধ করে পরাজয় স্বীকার করলেন তিনি। হাসপাতালে ভর্তির তৃতীয় দিনে স্বাস্থ্য দফতর থেকে খবর এল, তাঁর কোভিড হয়েছে। সুতরাং আমাদের ১৪ দিন কোয়রান্টিনে থাকতে হবে।

এই ১৪ দিনের ঘটনার অভিজ্ঞতা কয়েদি জীবনের থেকেও ভয়ঙ্কর। আমাদের অ্যাপার্টমেন্টের সেক্রেটারির নিষেধাজ্ঞায় এবং কিছু বাসিন্দাদের অসহযোগিতায় আমরা একঘরে। আমাদের দরজার সামনে দেখলে লোকজন পালিয়ে যাচ্ছেন। এই ১৪ দিন আমাদের একমাত্র ভরসা ছিলেন জনাকয়েক বন্ধু। যে দিন আমার স্বামীকে সৎকারের জন্য নিয়ে যাওয়া হল, এই বন্ধুরাই সে দিন বাইপাসের ধারে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তাঁকে শেষ প্রণাম জানানোর জন্য।

বিপদের দিনে বুঝলাম, আত্মার আত্মীয় কাকে বলে।

জয়া ভাদুড়ি কর

কলকাতা-১৯

প্রাণভিক্ষা নয়

‘ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা’ (১৯-৬) নিবন্ধটিতে অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় যথার্থই দেখিয়েছেন, শ্রমজীবী মানুষের জীবিকা লুটের জন্য দায়ী এই সমাজব্যবস্থা। মুনাফা, আরও মুনাফা যার একমাত্র লক্ষ্য। লেখক নতুন চেতনা, নতুন বোধসম্পন্ন রাজনীতির কথা বলেছেন। বলেছেন, এই রাজনীতি ক্ষমতাবানদের বাধ্য করবে ক্ষমতাহীনের জীবিকা ও জীবনের দায়িত্বকে স্বীকার করতে। সেই রাজনীতিকে সংগঠিত করার কথাও বলেছেন তিনি। শুধু সে রাজনীতি যে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিপূরক বিপ্লবী রাজনীতি, সেটাই পরিষ্কার করে বলেননি। বিপরীতে যে রাজনীতির ইঙ্গিত তিনি দিয়েছেন, সেটা হবে সিংহের কাছে মূষিকের প্রাণভিক্ষার মতো— ক্ষমতাসীনদের কাছে নিরীহের অনুনয় জানানো। ক্ষমতাসীনদের অনুকম্পা ভিক্ষার উপর নির্ভর করলে প্রাণহানি অনিবার্য। তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করা তো দূরের কথা, শ্রমজীবী মানুষের ঘাড়ে তাঁরা আরও চেপে বসবেন। বিশ্ব জুড়ে ৯৯ শতাংশ শ্রমজীবী মানুষের উপর এক শতাংশ ধনকুবেরের মহালুণ্ঠনে দিনের আলোর মতো তা পরিষ্কার।

সোমা নন্দী

কলকাতা-৯

অন্য ভাবনা

অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়ের লেখার প্রেক্ষিতে জানাই, সমাজতন্ত্রই শুধু প্রশ্নের মুখোমুখি হয় না। পুঁজিবাদও আজ সমাজের প্রেক্ষিতে বড় প্রশ্নের মুখোমুখি। উৎপাদন পদ্ধতি ও উৎপাদিকা শক্তি আর সেই সাবেকি চেহারায় নেই। ফলে, একই ভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে না। তাই প্রচলিত ধ্যানধারণা ও ভাবনার জগতে পরিবর্তন আনার দরকার বৃহত্তর মানুষের স্বার্থে। আমেরিকায় কাজ হারানোর দায়িত্ব রাষ্ট্র নেয় না। আমাদের মতো দেশগুলো তো নেয়ই না। কিন্তু জার্মানিতে? ফ্রান্সে? ডেনমার্কে? সুইডেনে? ফিনল্যান্ডে? নেদারল্যান্ডসে? এরা তো সমাজতান্ত্রিক দেশ নয়। বিপদের দিনে পত্রপাঠ বিদেয় করার ব্যবস্থা এদের সমাজ ও রাজনীতি সত্যিই তো খুব সহজে মেনে নেয় না। তাই কিছু ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে অন্য দিশা খুুঁজতেই হয়, পাল্টাতেই হয়। তার মানে, পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থা খালি এক অবস্থাকেই চিহ্নিত করে না। এগুলোর ভাবনাচিন্তা কে করবে? বামেরা? এই নতুন চিন্তাভাবনা করার প্রসঙ্গ কার্ল মার্ক্সের পর তেমন ভাবে আর ওঠেনি। বিশেষত অর্থনৈতিক দর্শনের কথা। আমরা ক্লিশে হয়ে গিয়েছি। তাই নতুন অবস্থা পরীক্ষণ করার ক্ষেত্রে অপারগ।

উত্তান বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা-৭৪

বাঁচার লড়াই

গানপাগল নিমাই দুর্লভ এমএ পাশ করেও পাননি কোনও চাকরি। এক রেশনের দোকানে কাজ করে দিন গুজরান করছিলেন। কিন্তু বাদ সাধল স্ত্রীর স্বাস্থ্য। কিডনির সমস্যার জন্য তাঁর স্ত্রীর ডায়ালিসিস করাতে হয় সপ্তাহে তিন বার। এর জন্য যেতে হয় কল্যাণী। লকডাউনে ট্রেন বন্ধ। বাধ্য হয়ে তাই তাঁকে হাসপাতালেই থাকতে হল অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে। বেড পাননি তাঁর স্ত্রীও। শুধু ডায়ালিসিস করার সময় ছাড়া বাকি সময় দু’জনকেই থাকতে হয় হাসপাতালের বারান্দায়। টাকার অভাবে দু’বেলা খাওয়া হয় না বেশির ভাগ দিন। রানাঘাটের যে দোকানে কাজ করতেন, সেটাও হারিয়েছেন।

ওঁর মুখেই শুনেছি, কল্যাণীর হাসপাতালে কার্যত প্রতি দিন ভর্তি হচ্ছেন আত্মহত্যার চেষ্টা করা মানুষ। লকডাউনে অভাবের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে তাঁরা গলায় দড়ি দিয়েছেন বা বিষ খেয়েছেন। তাঁরা সেলিব্রিটি নন। তাই তাঁদের মৃত্যু নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই।

সুদীপ্ত বিশ্বাস

রানাঘাট, নদিয়া

নীরব কেন

বাংলা প্রকাশনা ক্ষয় রোগে ভুগছিলই; করোনা আর আমপান তাকে দুরারোগ্য রোগাক্রান্ত করে তুলল। গত ২৩ মার্চ থেকেই বিক্রি বন্ধ ছিল। ২০ মে ঝড়ের ফলে গোডাউন ও বাইন্ডিংখানায় জল ঢুকে নষ্ট করে দিল বহু ফর্মা। এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হাজার হাজার মানুষ কর্মহীন হয়ে গেলেন। এই ব্যাপারে বাঙালি লেখক ও বুদ্ধিজীবীদের নীরবতা বিস্ময়কর। প্রকাশকদের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁরা সঙ্কট সমাধানের পথ অনুসন্ধান করবেন, এটা প্রত্যাশিত ছিল। লেখক ও প্রকাশকের যুক্ত কমিটি হলে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় গুরুত্ব বাড়ত। লেখক-বুদ্ধিজীবীদের নিজেদের স্বার্থেই তা দরকার ছিল। মানবাধিকার লঙ্ঘন বা সরকারের সমালোচনায় যাঁরা মুখর হয়ে ওঠেন, তাঁরা তাঁদের ধাত্রীভূমিকে ভুলে গেলেন কী করে?

দিলীপ মজুমদার

কলকাতা-৬০

বই ও থিয়েটার

করোনা পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অধীন গ্রামীণ গ্রন্থাগারগুলি দীর্ঘ দিন বন্ধ। মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ার-সহ উপযুক্ত দূরত্ব বজায় রেখে সপ্তাহে অন্তত দুই-তিন দিন গ্রন্থাগারগুলি খোলার ব্যবস্থা হলে পাঠকরা উপকৃত হই। পত্রপত্রিকা, বই এই দুঃসময়ে মানসিক অবসাদ দূর করতে সাহায্য করে বলেই তো মত দিয়েছেন মনোবিদরা।

মফস্সলের থিয়েটার দলগুলিও বিপদে পড়েছে। দলগুলি যদি ভ্রাম্যমাণ পথনাটক করে, তা হলে শিল্পী ও দর্শক, উভয়ের উপকার হয়।

কৌশিক চিনা

মুন্সিরহাট, হাওড়া

ভুল উচ্চারণ

লকডাউনের সৌজন্যে টেলিভিশনে কিছু বাংলা ধারাবাহিক দেখার সৌভাগ্য হল। দেখলাম, প্রায় সব অভিনেতাই সংলাপে ‘ওনাকে’, ‘এনাকে’, ‘ওনার’ প্রভৃতি ভুল শব্দ উচ্চারণ করছেন! বাংলা খবরের চ্যানেলগুলোতে যে অতিথিরা আলোচনায় অংশ নেন, তাঁদের অনেকেও নির্দ্বিধায় এই শব্দগুলি ব্যবহার করেন। কয়েক জন সঞ্চালককে ‘সম্মানীয়’ বলতেও শুনলাম। ‘ওঁকে’, ‘ওঁর’, বা ‘সম্মাননীয়’— গণমাধ্যমে যদি ঠিক শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়, তবে ছাত্রদের শেখাতে একটু সুবিধা হবে।

দেবজ্যোতি কর্মকার

করিমপুর, নদিয়া

এটা সিরিয়াল?

১৫ জুন থেকে সিরিয়ালের নামে তঞ্চকতা হচ্ছে। একটি জনপ্রিয় সিরিয়ালে দেখলাম, রামকৃষ্ণ একাই ভেবে যাচ্ছেন, আর ফ্ল্যাশব্যাকে পুরনো ছবি অগোছালো ভাবে দেখিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এর চেয়ে তো পুরনো এপিসোড দেখা ভাল ছিল!

সুজাতা গোস্বামী

কলকাতা-২৭

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,

কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE