Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Ishwar Chandra Vidyasagar

সম্পাদক সমীপেষু: পথপ্রদর্শক বিদ্যাসাগর

‘সমাজবিজ্ঞানী বিদ্যাসাগর’ প্রবন্ধে যে বিষয়গুলি কিছুটা ছুঁয়ে যাওয়া হয়েছিল, তা আরও বিশদে বর্ণনা করা হয়েছে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২২ ০৬:৫৪
Share: Save:

আমার সাম্প্রতিক প্রবন্ধ ‘সমাজবিজ্ঞানী বিদ্যাসাগর’ (৪-৬) প্রসঙ্গে যে প্রতিক্রিয়া পাঠকদের কাছ থেকে পেয়েছি, তাতে আমি অভিভূত। সম্পাদকের দফতরে পাঠানো চিঠিগুলি শুধু যে বর্তমান কালেও বিদ্যাসাগরের বিশেষ প্রাসঙ্গিকতা নির্দেশ করে, তা-ই নয়, সঙ্গে সঙ্গে তাঁর জীবন এবং কর্মের আলোচনা বিষয়ে আমাদের সমাজের চলমান আগ্রহের কথাও স্মরণ করিয়ে দেয়। ১৮৭১ সালে লেখা বিদ্যাসাগরের বহুবিবাহ-সংক্রান্ত প্রথম বইটিতে কুলীন বহুগামিতা বিষয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আমার সংক্ষিপ্ত রচনাটি প্রকাশের সময় ঠিক এমন প্রতিক্রিয়াই আমি আশা করেছিলাম। প্রবন্ধটির সংক্ষিপ্ত রূপের কারণে ওই কাজটির উপর আমার বক্তব্যের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক ছেঁটে দেওয়া আবশ্যক হয়ে পড়েছিল। আর তাই পাঠকদের ‌আমি জানাতে চাই যে, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে বহুবিবাহ-র উপর আমার অনুবাদ বই আকারে প্রকাশিত হতে চলেছে, এগেনস্ট হাই-কাস্ট পলিগ্যামি শিরোনামে। এখানে ‘সমাজবিজ্ঞানী বিদ্যাসাগর’ প্রবন্ধে যে বিষয়গুলি কিছুটা ছুঁয়ে যাওয়া হয়েছিল, তা আরও বিশদে বর্ণনা করা হয়েছে। ওই বইয়ের ভূমিকায় আমি বহুবিবাহ-কে তার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে স্থাপন করেছি, এবং বোঝাতে চেষ্টা করেছি যে, বিদ্যাসাগরের গবেষণা-আগ্রহের বিষয়টি বোঝার জন্যই বহুবিবাহ-র প্রতি আমাদের বিশেষ নজর দেওয়া উচিত। এই বইয়ে আমরা এমন এক গবেষককে পাই যিনি নতুন পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করেন, এবং সেই তথ্যের ঐতিহাসিক বিশ্লেষণে নানা রকম পরীক্ষানিরীক্ষা করে চলেন। একই সঙ্গে তিনি এমন এক ব্যক্তি যিনি এও বুঝতে পারেন যে, লেখক হিসেবে তিনি কৃতবিদ্য, সুতরাং কুলীনপ্রথার অমানবিক বাস্তবকে তিনি পাঠকদের কাছে তুলে ধরতে পারবেন।

দ্বিতীয় বিষয়টি একটু পরিষ্কার করা দরকার। কেননা দেখছি, অন্তত এক জন পাঠকের কাছে আমার লেখা একটু ভুল ভাবে পৌঁছেছে। তিনি মনে করেছেন যে, বিদ্যাসাগরের ‘সমাজতত্ত্ব-কল্পনা’র কথা যখন আমি বলছি, আমি বোধ হয় কুলীন পরিবারে বিবাহিত মেয়েদের যন্ত্রণা এবং বঞ্চনাকে বাস্তবের চেয়ে কিছুটা লঘু করে দেখাতে চাইছি। সেটা কিন্তু কখনওই আমার বক্তব্য নয়। আমি বরং বলতে চাই যে, বিদ্যাসাগর যে ভাবে কৌলীন্য প্রথার কবলে অল্পবয়সি কন্যা এবং বধূদের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতাগুলিকে তুলে ধরছিলেন, তার জন্যই বহুবিবাহ আজও এমন প্রাসঙ্গিক গ্রন্থ হয়ে রয়ে গিয়েছে। সমাজবিদ্যার প্রতি তাঁর কল্পনাসমৃদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলতে আমি বোঝাতে চেয়েছি, তিনি যে কাহিনিগুলোর কথা বলেছিলেন সেগুলি প্রামাণ্য বা কোনও ব্যক্তিবিশেষের অভিজ্ঞতা কি না— তার চেয়েও অনেক বড় হয়ে উঠেছিল সাহিত্যধর্মী বর্ণনায় তাঁর অসামান্য পারদর্শিতা— এবং সমগ্র বাংলায় গ্রাম্যজীবন ও পারিবারিক সম্পর্ক বিষয়ে তাঁর নিজের বিপুল অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে— কৌলীন্য প্রথায় প্রোথিত অত্যাচারকে তুলে ধরায় তাঁর অতুলনীয় প্রয়াস। তাঁর প্রদত্ত পরিসংখ্যান এবং ঐতিহাসিক বিশ্লেষণগুলি যখন একত্র করে আমরা দেখি, বুঝতে পারি, তাঁর কজের গুরুত্ব কেবল সমাজসংস্কারে আবদ্ধ নয়, তার চেয়েও অনেক বেশি। সমাজবিদ্যা, পরিসংখ্যানবিদ্যা, ইতিহাস, এই বিষয়গুলিকে এক তলে এনে কী ভাবে সমাজ বিশ্লেষণের কাজ করতে হয়, তাও আমরা শিখতে পারি। আশা করি, আমার নতুন বইটি পশ্চিমবঙ্গের পাঠকদের, এবং বৃহত্তর বৃত্তের পাঠকদেরও, আরও ভাল ভাবে বিদ্যাসাগরের এই পথপ্রদর্শনকারী সমাজচর্চার মূল্য ভাল করে বুঝতে সাহায্য করবে।

ব্রায়ান হ্যাচার, টাফটস ইউনিভার্সিটি, আমেরিকা

ক্ষতির পরিমাণ

‘ক্ষতি ভয়ঙ্কর’ (৭-৭) শীর্ষক সম্পাদকীয় প্রসঙ্গে এই পত্রের অবতারণা। সেখানে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ জঁ দ্রেজ়কে উদ্ধৃত করে লেখা হয়েছে— অতিমারির সময়ে সবচেয়ে বেশি এবং অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে শিক্ষাক্ষেত্রে। উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে এই ক্ষতির গভীরতা যে কতটা, তা বিদ্যালয়ে প্রতি দিন ক্লাস করতে গিয়ে সম্যক ভাবে টের পাচ্ছি। কিন্তু এই ক্ষতিকে মান্যতা দিয়ে অতিমারি-উত্তর কালের জন্য বিশেষ শিক্ষা-প্রণালী তৈরিতে এই দেশ তথা রাজ্যের সরকারি শিক্ষা নিয়ামকদের উদ্যোগ এখনও দৃষ্টিগোচর হয়নি। অথচ, স্কুল খোলার পর দেখছি উচ্চশ্রেণিতে পাঠরত ছাত্রদেরও একটি অংশ অনভ্যাসের কারণে কার্যত অক্ষর পরিচয়হীন অবস্থায় রয়েছে। এ দিকে আগামী বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য সময় ও সিলেবাসের দৈর্ঘ্য অপরিবর্তিত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি দীর্ঘ বিরতির পর পুনরায় চালু হলেও প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের শ্রেণির উপযুক্ত মানে উত্তরণের কোনও সময় ও সুযোগ রাখা হয়নি। ফলে, আগামী দিনে বিদ্যালয়-শেষের পরীক্ষায় রাজ্যের বড় অংশ পরীক্ষার্থীর অকৃতকার্য হওয়ার আশঙ্কা। শিক্ষকদের নির্দিষ্ট সময়ে সিলেবাস শেষ করার দায় আছে। তাই আলাদা ভাবে পিছিয়ে থাকা ছাত্রদের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়ার অবকাশ নেই। এ ক্ষেত্রে সরকারি শিক্ষা বিভাগ সিলেবাসের বোঝা কমাতে বা পরীক্ষার দিনক্ষণ পিছিয়ে দিতে পারত। তা হলে ছাত্ররা কিছুটা তৈরি হতে পারত। কিন্তু তাদের কথা ভাবার অবকাশ শিক্ষাবিভাগের কর্মকর্তাদের নেই। তাই শিক্ষাছুট হওয়াই হয়তো তাদের একমাত্র ভবিতব্য।

কৌশিক চিনা, মুন্সিরহাট, হাওড়া

বাস্তবধর্মী

‘পরীক্ষায় পার্শ্বশিক্ষকের বেতন নিয়ে প্রশ্ন, বিতর্ক’ (৮-৭) শীর্ষক খবরের প্রেক্ষিতে এই পত্র। পরীক্ষার প্রশ্নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল সেটি পাঠ্যক্রমের অন্তর্গত কি না। সেই অধ্যায়ের অঙ্ক বা ওই ধরনের অন্য অঙ্ক শিক্ষার্থীদের শেখানো হয়েছে কি না। যদি এই প্রাথমিক দু’টি শর্ত পালিত হয়, তা হলে প্রশ্নের শব্দ বা উদ্দেশ্য নিয়ে কোনও সংশয় থাকা উচিত নয়। ওই প্রশ্নে এই দু’টি শর্ত লঙ্ঘিত হয়েছে কি না, জানা যায়নি। কোনও ব্যক্তি তাঁর তিন মাসের আয় দিয়ে দু’মাসের খরচ চালান। তাঁর মাসিক আয় এত টাকা হলে কত টাকা বছরে ধার করতে হবে? এ অতি পরিচিত প্রশ্নের ধরন। পার্শ্বশিক্ষকরা যে অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তা প্রশ্নের মাধ্যমে প্রকাশ করলেই আমরা ‘রে রে’ করে উঠছি কেন? ওই শিক্ষক ক্লাসে এই ধরনের সমাধান ছাত্রছাত্রীদের শিখিয়েছেন। তাই প্রশ্নও দিয়েছেন।

পার্শ্বশিক্ষকদের একাংশ এটাকে প্রতিবাদের ধরন বলে মনে করছেন। আমি তাঁদের সঙ্গেও একমত নই। গোয়ালা কত লিটার দুধে কত লিটার জল মেশান, দোকানদার ১ কেজির বাটখারাতে ৯০০ গ্রামের জিনিস দিয়ে কত লাভ করেন, চা ব্যবসায়ী অসম চা-দার্জিলিং চা মিশিয়ে বিক্রি করলে লভ্যাংশের পরিমাণ কত বাড়ে— ইত্যাদি অতি পরিচিত অঙ্কের ভাষা। এগুলো কখনও সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়নি। কারণ, এগুলো সত্যিই বাস্তবে হয়, ঠিক যেমন যে পরিমাণ বেতন প্রশ্নে উল্লিখিত আছে, তা-ই পার্শ্বশিক্ষকরা পেয়ে থাকেন। এই অপ্রিয় সত্যিটা আমরা মেনে নিতে পারছি না কেন?

প্রণয় ঘোষ, কালনা, পূর্ব বর্ধমান

পাখা-জল নেই

বাংলায় আষাঢ়-শ্রাবণ বর্ষাকাল। অথচ, এ বছর এখনও প্রকৃত বর্ষার দেখা নেই। ফলে অত্যধিক গরমে পড়ুয়ারা ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। অনেক স্কুলে ইলেকট্রিক পাখা থাকলেও তা খারাপ। বেশ কিছু স্কুলে পানীয় জলের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নেই। বাড়ি থেকে বড় বোতলে জল নিয়ে যেতে হচ্ছে। নয়তো অপরিস্রুত জল পান করে পেটের অসুখ-সহ অন্যান্য জলবাহিত রোগ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। এখন ছাত্রছাত্রীরা নিয়মিত স্কুল যেতে আগ্রহী। কিন্তু স্কুলে পাখা এবং পানীয় জলের ব্যবস্থা না থাকলে তারা হতোদ্যম হয়ে পড়বে। এ ব্যাপারে শিক্ষা দফতরের সক্রিয়তা জরুরি।

শান্তনু সিংহ রায়, জঙ্গিপুর, মুর্শিদাবাদ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ishwar Chandra Vidyasagar Polygamy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE