Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Birds

সম্পাদক সমীপেষু: বিপন্ন পড়শি

নগরায়ণের দৌরাত্ম্যে অধুনা বিলুপ্ত হওয়ার পথে যে সব প্রাণী, যেমন— খটাশ-ভাম বিড়াল-গোসাপ, তাদের এই পাখিরালয়ে ছিল অবাধ বিচরণ। শীতে আনাগোনা করত নানা মরসুমি পাখিও।

পাখি।

পাখি।

শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২২ ০৬:০৩
Share: Save:

দক্ষিণ ২৪ পরগনার নরেন্দ্রপুর এলাকায় ‘চিন্তামণি কর পাখিরালয়’ এক দশক আগেও ছিল নানা ধরনের পাখি, মাকড়সা (১০ থেকে ১৫ ধরনের), প্রজাপতির (১৫ থেকে ২০ ধরনের) আশ্রয় । এ ছাড়া বেশ কিছু অর্কিড এবং ফার্ন দেখা যেত। নগরায়ণের দৌরাত্ম্যে অধুনা বিলুপ্ত হওয়ার পথে যে সব প্রাণী, যেমন— খটাশ-ভাম বিড়াল-গোসাপ, তাদের এই পাখিরালয়ে ছিল অবাধ বিচরণ। শীতে আনাগোনা করত নানা মরসুমি পাখিও। ঘন গাছপালা এবং বিবিধ প্রজাতির প্রাণীর জন্য ১৯৮২ সালে এই স্থানটি অভয়ারণ্যের মর্যাদা পায়। বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ এবং প্রাণিকুলকে রক্ষা করার জন্য ২০০৫ সালে এটি বেসরকারি থেকে সরকারি মালিকানাভুক্ত হয়। প্রথম প্রথম সব ঠিক ছিল, কিন্তু ইএম বাইপাস তৈরির সময়ে বহু গাছ কেটে ফেলা হয়। এর পর অভয়ারণ্য-সংলগ্ন যেটুকু বনাঞ্চল ছিল, তা-ও ক্রমে ধ্বংস হয় বড় প্রোমোটারের থাবায়, বিশেষ করে এলাচি অঞ্চলে। পাখিরালয়ের ভিতরেও বেশ কিছু গাছ সম্পূর্ণ বা আংশিক নষ্ট হয় আমপানের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাখিরালয়ের বাস্তুতন্ত্র, এবং সমগ্র এলাকার পরিবেশ। সাম্প্রতিক কালে পাখিরালয়ের ভিতরে সরকারি উদ্যোগে কিছু গাছ লাগানো হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়।

বিষিয়ে ওঠা পরিবেশের জন্য মরসুমি পাখি আসে না বেশ কিছু বছর ধরেই, কমে আসতে শুরু করেছে স্থানীয় পাখির সংখ্যাও। হারিয়ে যাচ্ছে গোসাপ-ভাম বিড়াল জাতীয় প্রাণী। তবে, এর পিছনে নির্বিচারে গাছ কাটা ছাড়াও আরও একটি কারণ আছে। এক সময়ে যা ছিল প্রাণীগুলির বাসস্থান, সেখানে নির্মিত হয়েছে বাইপাস। প্রাণীদের চেনা ‘করিডর’-এ অযাচিত হানাদারি ঘটেছে মানুষের। যানবহুল বড় রাস্তা পারাপার করতে গিয়ে মারা যাচ্ছে একের পর এক গোসাপ এবং ভাম বিড়াল। ক্রমশ সঙ্কীর্ণ হয়ে আসা পাখিরালয়ের ভিতরে শুধু নয়, সীমানার বাইরেও অবিলম্বে নতুন করে বনাঞ্চল সৃষ্টির চেষ্টা শুরু না হলে ভবিষ্যতে প্রজাপতি এবং মাকড়সার যে ক’টি প্রজাতি এখনও অবধি টিকে আছে, তা-ও বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

সরকারি-বেসরকারি সম্মিলিত প্রয়াস ছাড়া ধ্বংস হতে বসা পরিবেশের পুনরুদ্ধার অসম্ভব। একমাত্র পর্যাপ্ত বৃক্ষরোপণই ফিরিয়ে আনতে পারে হারিয়ে যাওয়া ভারসাম্য। কিন্তু তার জন্য সামগ্রিক প্রচেষ্টা কোথায়? সড়ক অথবা বহুতল নির্মাণের পর, বট-অশ্বত্থ-পাকুড়ের পরিবর্তে কিছু বাহারি গাছ লাগিয়ে দেওয়া যে কোনও সমাধানই নয়, আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা দ্রুত উপলব্ধি করবেন এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে সচেষ্ট হবেন। আর আড়ম্বর সহকারে বৃক্ষরোপণ উৎসব করলেই হবে না, লাগানো গাছগুলির উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণেরও সবিশেষ প্রয়োজন।

রাজীব রায় গোস্বামী, সোনারপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

অমানবিক

বেসরকারি নেশামুক্তি কেন্দ্রে নেপাল রায় (৪০) নামক এক যুবকের অসহায় মৃত্যুতে (“‘পিটিয়ে খুন’ নেশামুক্তি কেন্দ্রে, ধৃত”, ১৯-৯) এক হৃদয়হীন ব্যবস্থাপনার চিত্র উঠে এল। মাসিক মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে বেসরকারি আবাসিক নেশামুক্ত কেন্দ্রগুলিতে অসহায় পরিবার তাঁদের সন্তানকে রেখে আসেন সুস্থতার আশায়। দুর্বল পরিকাঠামো ও উপযুক্ত প্রশিক্ষণহীন কতিপয় ব্যক্তিদ্বারা পরিচালিত এই সব কেন্দ্রে প্রথম দিকের যত্নআত্তি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষীণ হয়ে যায়। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি যে, এই সব ক্ষেত্রে ওষুধ পথ্য প্রয়োগে হিংস্র মনোভাব, কাউন্সেলিং-এর অভাব, সর্বোপরি স্নেহ-ভালবাসাহীন অমানবিক দৃষ্টিভঙ্গি আবাসিকদের জীবন দুর্বিষহ করে তোলে। এক দিকে কর্তৃপক্ষের চোখরাঙানি ও কঠোর নির্দেশ, অপর দিকে স্বাভাবিক জীবনের হাতছানি ও প্রত্যাশা— এই দোলাচলে এঁদের মনের অবস্থা কী হয়, তা আমাদের কল্পনার অতীত।

এ প্রসঙ্গে মনে এল বছরখানেক আগে মানসিক চিকিৎসার উৎকর্ষ কেন্দ্র পাভলভ হাসপাতালে গলায় ডিম আটকে এক যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনার কথা। খিদের তাড়না ও দ্রুত খাবার শেষ করতে হাসপাতাল কর্মীদের ধমক, এই দুইয়ের ধাক্কায় বেঘোরে প্রাণ গিয়েছিল ওই যুবকের।

আক্ষরিক অর্থেই জীবন্মৃত হয়ে, অপ্রশস্ত, আলো-বাতাসহীন চৌখুপিতে এই রোগীরা দিনাতিপাত করতে বাধ্য হন। ধারাবাহিক তাচ্ছিল্য ও উপেক্ষার ভাবটি যে কোনও প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের মজ্জাগত হওয়ায় নিয়মিত বিধিপালনের বিষয়টিও এক প্রকার অনুপস্থিত থাকে। যথাযথ পরিকাঠামো ও প্রশিক্ষণ ছাড়া চলা এই সব কেন্দ্রের অবহেলা ও উৎপীড়নের কাহিনি মাঝেমধ্যে সংবাদপত্রে জায়গা করে নিলেও, প্রশাসনের সার্বিক নজরদারির অভাবের জন্য এ ব্যবসা চলতেই থাকে।

সুপ্রতিম প্রামাণিক, আমোদপুর, বীরভূম

বীজতলা

প্রতিনিয়ত কয়েকশো লিটল ম্যাগাজ়িন জন্ম নিচ্ছে এবং কয়েকশো অকালে মৃত্যুবরণ করছে। তবু লিটল ম্যাগাজ়িনের স্রোত আবহমান কাল ধরে চলে আসছে সাহিত্যের জগতে। অথচ, লিটল ম্যাগাজ়িনে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিকদের দু’কলম লিখতে বড় কষ্ট। বহু খ্যাতনামা এবং প্রথিতযশা সাহিত্যিকের সাহিত্যের বীজ বপন হয়েছে কোনও না কোনও লিটল ম্যাগাজ়িনে। কিন্তু উপরে উঠে গেলে অনেকে আর ফিরে তাকান না শুরুর সিঁড়িটির পানে। মফস্সল এলাকার লিটল ম্যাগাজ়িনকে আরও অপাঙ্‌ক্তেয় মনে করা হয়। এমনটা কেন হবে? ছোট পত্রপত্রিকা না বাঁচলে, মফস্সল এলাকার সাহিত্য না বাঁচলে, মূল ধারার সাহিত্য এক দিন ফল্গু নদীর মতো অপসংস্কৃতির মরুভূমিতে মিশে যাবে।

লিটল ম্যাগাজ়িন বাঁচিয়ে রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ সমস্যা অর্থ। অনেক আশা নিয়ে এক দল নতুন সাহিত্যিক নতুন নামে, উদ্যমে একটা সাহিত্য পত্রিকা তৈরি করেন। দু’একটি সংখ্যা প্রকাশ করার পর উন্নাসিকতা, প্রথিতযশাদের অবহেলা এবং পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে অপমৃত্যু ঘটে। লিটল ম্যাগাজ়িন কেউ কিনতে চান না। সৌজন্য সংখ্যার দাবিদার প্রচুর। কিন্তু ছোট্ট একটা পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশ করতে বর্তমান পরিস্থিতিতে কত খরচ হয়, তার হিসাব কে রাখে! ফলে প্রাপক পত্রিকা নিয়ে ধন্য করেন প্রকাশককে, মূল্য দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ব্যতিক্রমী দু’-এক জন অবশ্যই আছেন। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, ব্যক্তিদ্বন্দ্বও লিটল ম্যাগাজ়িনকে স্বল্পায়ু করেছে। পত্রিকা কমিটির মধ্যে ইগোর লড়াই, ভুল বোঝাবুঝি এবং খুঁত খোঁজাখুঁজি চলতেই থাকে। ফলে, সম্পাদক একা হয়ে পড়েন। অচিরেই পত্রিকা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়।

সমাজমাধ্যমের দৌলতে লিটল ম্যাগাজ়িনের ভাগ্যাকাশে কালো মেঘ ঘনিয়ে এসেছে। মোবাইল-নির্ভর জীবন পত্রপত্রিকার প্রয়োজনীয়তা অনেকটা কমিয়ে দিয়েছে। যেখানে বড় পত্রপত্রিকাই বর্তমানে অসম প্রতিযোগিতার সঙ্গে লড়াই করছে, সেখানে ছোট ছোট পত্রিকার হাল সহজে অনুমান করা যায়। পত্রপত্রিকার প্রধান পৃষ্ঠপোষক বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংস্থার বিজ্ঞাপন। লিটল ম্যাগাজ়িন যে-হেতু কম সংখ্যায় প্রকাশিত হয়, কম ব্যক্তির কাছে পৌঁছয়, সে কারণে বিজ্ঞাপনদাতারা পৃষ্ঠপোষক হয়ে ওঠেন না, তাঁরা হয়ে ওঠেন অনুদানদাতা। ফলে অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে লিটল ম্যাগাজ়িন বেরিয়ে আসতে পারেনি।

সুকুমার প্রবৃত্তিকে জাগিয়ে এবং বাঁচিয়ে তুলতে না পারলে দশ এবং দেশের কখনও ভাল হতে পারে না। আর সাহিত্যচর্চা সুকুমার প্রবৃত্তিকে লালন-পালন করার অন্যতম মাধ্যম। সাহিত্যচর্চা শুরু হয় ছোট ছোট পত্রিকার মাধ্যমে। প্রাথমিক ভুলভ্রান্তি কাটিয়ে উঠে সাহিত্যের বীজতলা তৈরি করতে লিটল ম্যাগাজ়িনের সাহচর্যের কোনও বিকল্প নেই। তাই লিটল ম্যাগাজ়িনের সর্বজনীন পৃষ্ঠপোষকতা দরকার।

বরুণ মণ্ডল, রানাঘাট, নদিয়া

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Birds animals Urbanisation Extinct
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE