Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
India

সম্পাদক সমীপেষু: সবার আগে জনগণ

ভারত ক্ষুধা সূচকে ১২১টি দেশের মধ্যে ১০৭তম স্থানে পিছিয়ে পড়েছে। সে দিনের শিকাগোর সেই কালো ছেলেটার মতো আজ ভারতের লক্ষ লক্ষ শিশু খালি পেটে অবাক বিস্ময়ে শুনেছে ‘চন্দ্রযান-৩’এর সাফল্যে মানুষের উল্লাস।

—ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৫:১০
Share: Save:

‘পূর্ণ চন্দ্র অভিযান’ (২৭-৮) শীর্ষক সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, বিজ্ঞান গবেষণা আসলে এক প্রতিযোগিতা। বিশেষ করে অস্ত্র উৎপাদন আর চন্দ্র অভিযানের ক্ষেত্রে এই কথাটা খুবই খাটে। রাশিয়া আর আমেরিকার চাঁদের লড়াইয়ে বিজ্ঞানকে হতে হয়েছিল ঠান্ডা যুদ্ধের সেবক। কিন্তু এতে সাধারণ মানুষের উপকার কিছু হয়নি। জন স্টুয়ার্ট তাঁর বিখ্যাত গান আর্মস্ট্রং-এর প্রথম স্তবকে লিখেছিলেন, “শিকাগোর রাস্তায় কালো ছেলেটা খেলছিল। তার শরীরে‌ পুরো পোশাক ছিল না। তার পুরো খাবারও জোটেনি। তোমরা কি জানো না সে ওটা দেখেছিল এক জুলাই মাসের বিকেলে। সে দেখেছিল আর্মস্ট্রং নামের একটা মানুষ চাঁদের উপর হাঁটছে।”

ভারত ক্ষুধা সূচকে ১২১টি দেশের মধ্যে ১০৭তম স্থানে পিছিয়ে পড়েছে। সে দিনের শিকাগোর সেই কালো ছেলেটার মতো আজ ভারতের লক্ষ লক্ষ শিশু খালি পেটে অবাক বিস্ময়ে শুনেছে ‘চন্দ্রযান-৩’এর সাফল্যে মানুষের উল্লাস। ওই সাফল্যের দিনে সমাজমাধ্যমের একটি পোস্ট সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ফোন থেকে ফোনে ছুটে বেড়িয়েছে। সেই মেসেজে দশটি দেশের পতাকা দেখিয়ে বলা হয়েছে যে, এই দেশগুলির পতাকায় চাঁদ আছে। আর তার পর আমেরিকা, রাশিয়া, চিন আর ভারতের পতাকা দেখিয়ে বলা হয়েছে এই দেশগুলির পতাকা চাঁদে আছে। এখন যদি আমরা মানবসম্পদ সূচকে সবচেয়ে উন্নত প্রথম পনেরোটি দেশের পতাকা দেখি, তা হলে দেখব ওই দেশগুলির একটিরও পতাকা চাঁদে নেই। কিন্তু কেন? কারণ তারা তাদের দেশের সীমিত সম্পদ দেশের মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করে চলেছে।‌ যে রকেট আবহাওয়া, খনিজ সম্পদ ও যোগাযোগ প্রযুক্তির জন্য প্রয়োজনীয়, তা সাধারণ মানুষের কাজে লাগে। ওই কাজে অবশ্যই‌ অর্থ ব্যয় করা প্রয়োজন। কিন্তু চাঁদে জল আছে কি না জেনে সাধারণ মানুষ কি তা দিয়ে ধুয়ে জল খাবে?

মানবসম্পদ উন্নয়নে ১৩২তম স্থানে থাকা ভারতের এখন প্রয়োজন দেশের মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য এবং কর্মসংস্থানে সবচেয়ে বেশি মনোযোগী হওয়া। এই ক্ষেত্রগুলির করুণ অবস্থার মধ্যে এ ধরনের সাফল্য উপভোগ ছেঁড়া পাঞ্জাবিতে সোনার বোতামের মতোই অসহনীয়। কোনও বাড়ির অভিভাবক যদি তাঁর সন্তানদের শিক্ষা এবং খাওয়ার খরচ থেকে পয়সা বাঁচিয়ে বিদেশ ভ্রমণ করতে যান, তাঁকে কি বিচক্ষণ অভিভাবক বলা যায়?

সুজিত দে, কলকাতা-১১০

হিন্দুত্বের ছোঁয়া

‘চন্দ্র-আবেগে সওয়ার প্রধানমন্ত্রী’ (২৭-৮) প্রসঙ্গে এই পত্রের অবতারণা। ভারতের সাম্প্রতিক চন্দ্র অভিযানের সাফল্য ব্যাখ্যা করতে হলে কোনও বিশেষণই যথেষ্ট নয়। কী নিপুণ ও দেশীয় প্রযুক্তিগত দক্ষতায় ইসরোর বিজ্ঞানীরা চন্দ্রযান-৩’এর উৎক্ষেপণ ও অবতরণ ঘটালেন, তা সারা বিশ্বের মানুষ অবাক বিস্ময়ে অনুধাবন করলেন। আজ প্রতিটি ভারতবাসী এই সাফল্যে গর্বিত ও আবেগতাড়িত। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও সেই আবেগে শামিল। তিনি ভারতীয় বিজ্ঞানীদের এই অসামান্য সাফল্যের মর্যাদা দিলেন ২৩ অগস্ট তারিখটিকে ‘জাতীয় মহাকাশ দিবস’ ঘোষণার মাধ্যমে। শুধু তা-ই নয়, ২০১৯-এ চন্দ্রযান-২ যেখানে ভেঙে পড়েছিল, তার নাম দিলেন ‘তিরঙ্গা’, যা ভারতের জাতীয় পতাকাকে স্মরণ করায়।

কিন্তু প্রবাদে আছে চাঁদেরও কলঙ্ক থাকে। চন্দ্রযান-৩’এর অবতরণ স্থলের নামকরণ ‘শিবশক্তি পয়েন্ট’ রাখা এই কলঙ্কেরই শামিল বলে আমার ধারণা। মানবতার কল্যাণে নিয়োজিত শক্তিকে তিনি শিবশক্তি আখ্যা দিলেন। কিন্তু শিব তো হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজ্য এক দেবতামাত্র। এর কোনও বৈজ্ঞানিক বা ঐতিহাসিক ভিত্তি আছে কি না, তা কিন্তু পরীক্ষিত নয়। বিশেষত, ভারত যখন নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বলে গর্ব করে, সেখানে ভারতের অন্য ধর্মাবলম্বীদের কাছে এই ‘শিবশক্তি’ নিছক হিন্দুধর্মের এক আবেগ বলেই গণ্য হতে বাধ্য। চরম বৈজ্ঞানিক এই জাতীয় সাফল্যকে তাই বিশেষ এক ধর্মীয় বাতাবরণে নিয়ে আসা ধর্মনিরপেক্ষ এক রাষ্ট্রপ্রধানকে কি সত্যিই শোভা পায়? ‘শিবশক্তি পয়েন্ট’ নামকরণে আজ এই প্রশ্ন কিন্তু উঠছেই। ধর্মকে দূরে রেখে প্রতিটি ভারতবাসীর আজ ভাবা উচিত যে, এই নামকরণ কতটা যুক্তিপূর্ণ ও সমর্থনযোগ্য। তাই, ‘শিবশক্তি পয়েন্ট’-এর পরিবর্তে ‘ভারত শক্তি পয়েন্ট’ অথবা ‘ইন্ডিয়ান পাওয়ার পয়েন্ট’ ইত্যাদি নামকরণ সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে অধিক গ্রহণযোগ্য হতে পারত।

শান্তনু ঘোষ, শিবপুর, হাওড়া

বিজ্ঞানের পাশে

গোবরের মহিমা, গোচনার করোনানাশক গুণ, গণেশের মুখমণ্ডলে শল্য বাহাদুরি, বিমানের পূর্বসূরি পুষ্পক রথ— জাতীয় পুরাণ কথার অলীক উজ্জ্বল উদ্ধার নয়; ২৩ অগস্ট সন্ধ্যায় চন্দ্রযান-৩’এর ‘বিক্রম’ ভারতকে বিজ্ঞানের শুদ্ধ সত্তায়, সত্য পথে স্থাপিত করেছে। যেখানে অলীক পৌরাণিক শ্লাঘার জাবর কাটার বদলে আছে ব্যর্থতাকে স্বীকার করে ইসরোর চার বছরের অধ্যবসায়, অনুসন্ধানে, পরীক্ষা, পর্যবেক্ষণে, কৃচ্ছ্রসাধনে লক্ষ্যে স্থির থেকে গন্তব্যে পৌঁছনোর বৈজ্ঞানিক মানসিকতা। এই প্রফুল্ল আবহে চলমান প্রশংসা, হাততালির মধ্যে ‘ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর ফিজ়িক্স’-এর অধিকর্তার মূল্যবান জরুরি বার্তা ‘আত্মবিশ্বাসে ভর করে দৌড়তে হবে’ (২৪-৮)। কারণ দেশে মহাকাশ গবেষণায় এখনও বাধা অর্থ, মানব ও উন্নত প্রযুক্তির ঘাটতি। আর, সরকারের কৃপণ কৃপাদৃষ্টি। ২০২২-২৩’এ মহাকাশ গবেষণার বরাদ্দ ছিল ১২,৫৪৪ কোটি টাকা, যা ২০২১-২২ অর্থ-বছরের তুলনায় ৮ শতাংশ কম। ফলে, এই অভিযানেও ছিল পুরনো ক্রায়োজেনিক জ্বালানি, সাবেক পিএসএলভি রকেটযান ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা। পরিণামে নিউক্লিয়ার জ্বালানি ও উন্নততর প্রযুক্তির রকেট ব্যবহারে রাশিয়ার লুনা-২৫ এই সময়কালেই ভারতের থেকে দেরিতে যাত্রা করেও আগে চাঁদের দক্ষিণে পৌঁছে যায়। আছে চন্দ্রযান নির্মাণকারী সংস্থা রাঁচী হেভি এঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন-এ বেতন বন্ধের সমস্যা। ১৭ মাস প্রযুক্তিবিদ ও কারিগররা নির্মাণ কাজে বিনা বেতনেও অবিরত ছিলেন। এই সাফল্যেও ভোলা উচিত নয় ভারতের স্থান কিন্তু মহাকাশে উপগ্রহ সংখ্যার নিরিখে প্রথম দশটি দেশের মধ্যে নেই। বৈশ্বিক মহাকাশ অর্থনীতির মাত্র ২ শতাংশ ভারতের দখলে। তবু, ভারতের স্থান সম্ভাবনাময়। বিদেশের উপগ্রহ উৎক্ষেপণে এখনও পর্যন্ত ভারতের উপার্জন ২২ কোটি ৩০ লক্ষ ডলার। বেসরকারি স্টার্টআপের সংখ্যা প্রায় ১৫০। বর্তমান গতিতেও ২০৪০-এ মহাকাশ অর্থনীতি ৪০০০ কোটি ডলারে পৌঁছবে। তার জন্য বিজ্ঞানী ও কারিগরদের পাশে শুধু বাণী নয়, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি ও অর্থনৈতিক সহযোগ নিয়ে প্রেরণা জোগাতে হবে। ক্রীড়াবিদ থেকে বিজ্ঞানী— প্রস্তুতি পর্বে তাঁদের পাশে থাকার দৃষ্টান্ত কিন্তু এ দেশে বিরল। ২৩ অগস্ট প্রতি বছরের জন্য ‘জাতীয় মহাকাশ দিবস’ ঘোষণা হল। দিবস পালনে শুধু নয়, শপথেও যেন রাষ্ট্র ও তার নাগরিক থাকে।

মানস দেব, কলকাতা-৩৬

আর্থিক তছরুপ

রাজপুর অঞ্চলের স্থানীয় এক সমবায় সমিতির বর্তমান সরকার নিযুক্ত কর্মসমিতির বেলাগাম আর্থিক তছরুপ ও স্বেচ্ছাচারিতা‌র জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জন করা হাজার হাজার অর্থ বর্তমানে সম্পূর্ণ অনিশ্চয়তার মুখে। বহু আবেদন নিবেদন করেও কোনও সুবিচার পাওয়া যায়নি। বিষয়টি বিধানসভা স্পিকার, বিধায়ক, সমবায় মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, এমনকি খোদ রাজ্যপালের সচিবালয়ে মেল করে জানানো সত্ত্বেও একই‌ অবস্থা বর্তমান। ইতিমধ্যে এলাকায় টাকা না পাওয়ার জন্য জনসাধারণ অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। অবিলম্বে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করছি।

কমল ভট্টাচার্য, শ্রীরামপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

India Chandrayaan-3 Economy Society
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE