Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Narendra Modi

সম্পাদক সমীপেষু: রাজনীতির রঙ্গমঞ্চ

নবপ্রজন্ম তঞ্চকতা, মিথ্যাভাষণের সংস্কৃতির মধ্যে বড় হচ্ছে। রাজনীতি তাদের কাছে অসার, গুরুত্বহীন বলে মনে হলে আশ্চর্য কিছু আছে কি?

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০২১ ০৫:০০
Share: Save:

দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সাজাহান নাটকের সংলাপ, “পুত্র রাজনীতি বড়ো কূট।” সেই রাজনীতির কী প্রভাব পড়ছে শিশুদের উপর, আমরা খেয়াল করি কি? ধরুন, আপনি টিভিতে সংবাদ দেখছেন, পাশে বসে রয়েছে বাড়ির শিশুকন্যাটি। পর্দায় কোনও এক নেতা অন্য কোনও নেতা সম্পর্কে অপ্রীতিকর মন্তব্য করলেন। শুনে মেয়েটি বারবার সেই শব্দগুলি উচ্চারণ করল, এবং আপনি তাকে এক ধমকে চুপ করিয়ে দিলেন। কিন্তু তার মন থেকে মুছে গেল কি কথাগুলো? এখন সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে একটি ভিডিয়ো, যেখানে একটি বাচ্চা নরেন্দ্র মোদীকে নকল করছে। ভাইরাল হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনুকরণের ভিডিয়োও। অর্থাৎ, এই নেতাদের কথা শিশুদের কাছে মজার খোরাক। কিন্তু তারা তো এই বিকৃত সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হয়ে উঠেছে। নেতানেত্রীরা যদি শুধুমাত্র সিংহাসনের লড়াইয়ে উন্মাদ হয়ে রাজনীতিকে হাস্যকৌতুকের রঙ্গমঞ্চ করে তোলেন, তবে শিশুর মনে তার প্রভাব পড়বেই। শোভন-অশোভনের বিচার তৈরি হবে না। মহাপুরুষদের জীবনী পড়ানো হয়ে থাকে ছোটদের। শেখানো হয় তাঁদের আদর্শকে পাথেয় করে চলতে। সেই শিশু যখন বাস্তবের মাটিতে পা রেখে দেখছে, এক জন ব্যক্তিকে ‘চোর’ বলে নির্ধারণ করা হলে পরবর্তী কালে শুধুমাত্র দলবদলের মাধ্যমে সে সব অভিযোগ থেকে রেহাই পাচ্ছে, তখন সে বইয়ের সঙ্গে বাস্তবের মিল খুঁজে পাবে না। শিশুর মনের উপর এ-ও এক রকম চাপ। নবপ্রজন্ম তঞ্চকতা, মিথ্যাভাষণের সংস্কৃতির মধ্যে বড় হচ্ছে। রাজনীতি তাদের কাছে অসার, গুরুত্বহীন বলে মনে হলে আশ্চর্য কিছু আছে কি?

চয়নিকা চক্রবর্তী

দ্বাদশ শ্রেণি, শিলিগুড়ি গার্লস
হাই স্কুল

কাজ নেই

ওদের আর দেখতে পাই না। হলদিডাঙা, কুসুমতারা, চকচন্দন, ভায়োর থেকে গাড়ি ধরে শহরে ছুটে আসত ওরা। দেশের খবর নয়, কাজের খবরের সন্ধানে— কর্মখালির মাসিক বিজ্ঞাপনপত্র কিনতে ওদের প্রাত্যহিক গাড়িসফর। চৈত্রের গনগনে দুপুরেও কয়েক দল গাছের তলায় কী মনোযোগে পৃষ্ঠা উল্টে যেত! হয়তো স্বপ্ন, বাড়ির ছাদ তৈরি করবে, দাদুর বন্ধকের কৃষিজমি ফিরিয়ে দেবে মাসমাইনের টাকায়। সে এটিএমের বেসরকারি গার্ড হোক বা হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়। সুইপার, ক্যাম্পের নাপিত বা ধোপা, যে কোনও একটা কাজ পেলেই হল। ঘুষ দিয়ে যে চাকরি নেওয়ার সাধ্য নেই, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার নম্বরও নেই গ্রামের এই ছেলেমেয়েদের। শুধু ডালেভাতে বাঁচার একটু বন্দোবস্ত চেয়েছিল তারা। আপাতত এই ছেলেমেয়ের দল ঘরে ফিরে গিয়েছে। কত বাড়ল বেকারের সংখ্যা, কত জন কাজ হারাল, সেই পরিসংখ্যান জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। যারা ওদের মতো চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছিল কিন্তু এখন হাল ছেড়ে দিয়েছে, তাদের কথা এল না টিভির পর্দায়। কাজ হারানোর ভয়ের থেকেও নতুন কাজের সুযোগ তৈরি না হওয়াটা দেশের পক্ষে আরও ভয়ঙ্কর। ভয় হয়, নতুন নিয়োগের দরজা বন্ধ হলে লাফিয়ে বাড়বে স্কুলছুটের সংখ্যা। কী হবে লেখাপড়া করে? কাজই তো নেই। এত দিন জীবনে ‘নিজের পায়ে দাঁড়ানো’ বলতে তারা যা বুঝত, সময় তাদের শেখাল, সে কথা কতটা অর্থহীন। ফলে অভিভাবকরাও ক্রমশ নিরুত্তর হয়ে যাবেন, ভেঙে যাবে সমাজের বাস্তুতন্ত্র। উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার বরাদ্দেও কেন্দ্রীয় সরকার কাঁচি চালানোয় আজ কানাকড়িই মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের সম্বল।

আবার যে ছেলেগুলো জানত, ভোর রাতে চারশো মিটার দৌড়ে সফল হলে, আর লম্বা হলেই কার্গিল, দ্রাস, পুঞ্চ সেক্টরে যুদ্ধের চাকরিটি বাঁধা, তারাও এখন হতাশায় বন্ধ করেছে দৌড়। এ চাকরিতে বয়স একটু বেড়ে গেলেই আশা শেষ। ব্যর্থ পুরুষের মতো ফিরে গিয়েছে ঘরে। লঙ্কার চাষ করছে। ক’দিন আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক’জন ছাত্র বহুজাতিক বিদেশি সংস্থায় অনলাইন ইন্টারভিউ দিয়ে নিয়োগপত্র হাতে পাওয়ার পরেও তাদের বরখাস্তের চিঠি ধরিয়েছে সংস্থা‌। এ-ও এক অকালপ্রয়াণ। যাঁদের বয়স তিরিশের শেষের দিকে, সরকারি চাকরির জন্য আর এক কি দু’বছর সময় ছিল হাতে, তাঁরা আজ স্বেচ্ছায় ঘরবন্দি হয়ে থাকছেন। স্কুলই খুলছে না, স্কুলে চাকরি হবে কী করে? কাজই নেই, কাজের বিজ্ঞাপন বেরোবে কোথায়? বন্ধুরা মাঝে মাঝে প্রশ্ন করে, ‘কিছু হল?’ হওয়ার সম্ভাবনায় স্থগিতাদেশ দিয়েছে এই সময়।

সন্দীপন নন্দী

বালুরঘাট, দক্ষিণ দিনাজপুর

অন্য রোগ

‘ওষুধের জটে আঙুল কিছু ক্রেতার দিকেও’ (১৩-৫) সংবাদটি যে সত্য, নিজের অভিজ্ঞতায় তা সম্প্রতি বুঝলাম এলাকার এক সদাব্যস্ত ওষুধের দোকানে গিয়ে। করোনাকালে দোকানের ভিড় সামলাতে দোকানের মূল দরজা খোলা রাখা হচ্ছে, এবং বাইরে মানুষকে সারি দিয়ে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সারিতে দাঁড়িয়ে বেশ কিছু ক্ষণ পরে দোকানের কাউন্টারে পৌঁছে দেখা গেল, বেশির ভাগ ক্রেতাই যে সব ওষুধ কিনতে এসেছেন, তা প্রেসক্রিপশন বহির্ভূত— জ্বর, সর্দি, পেটব্যথা প্রতিরোধকারী। সঙ্গে বলবর্ধক এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ওষুধও আছে। আপাত ভাবে অপ্রয়োজনীয় ওষুধের ‘আপৎকালীন’ সংগ্রহ করছেন শুধুমাত্র ভয়ের বশে। একটা অতি প্রচলিত মাল্টিভিটামিন, কোভিডকালে যার চাহিদা চূড়ান্ত, তা এক-এক জন এক পাতার জায়গায় পাঁচ পাতা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। দোকানদার মৃদু আপত্তি করেও হার মানছেন।

এই মানসিকতা বাজারে ওষুধের কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি করছে, ওষুধের সঠিক উপযোগিতার পথও বন্ধ করছে, কারণ বেশির ভাগ ক্রেতাই ওষুধগুলো কিনছেন অপ্রয়োজনে, আতঙ্কের বশবর্তী হয়ে। এক দিকে যেমন ওষুধের জোগান কমছে, অন্য দিকে তেমন ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলো অনৈতিক ভাবে দাম বাড়ানোর সুযোগও পাচ্ছে। ডামাডোলের বাজারে অসাধু ওষুধ ব্যবসায়ীরা অন্যায্য দাম নিচ্ছেন, ক্রেতারা তাঁদের কেনা ওষুধের উপর যে পরিমাণ ছাড় পাওয়ার কথা, তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ওষুধ ব্যাপারটা এতই সংবেদনশীল যে, ক্রেতা দামের ব্যাপারে বেশি সংঘাতে যান না। ফলে এ ক্ষেত্রে ক্রেতা অধিকার সুরক্ষিত থাকে না। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের ঔষধ ও রাসায়নিক মন্ত্রক এবং রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা দফতর হাতে হাত মিলিয়ে যদি একটি টাস্কফোর্স গঠন করে, তা হলে ওষুধের অপব্যবহার বন্ধ হবে এবং উপভোক্তা অধিকারও সুরক্ষিত থাকবে।

দেবাশিস চক্রবর্তী

মাহেশ, হুগলি

চুপকথা

কেরলে বিজেপি শোচনীয় ফল করেছে, বিধানসভার ১৪০টি আসনের একটিও পায়নি। সে বিষয়ে একটি বিদ্রুপাত্মক পোস্ট করায় মালয়ালি কবি কে সচ্চিদানন্দন ফেসবুকের রোষে পড়লেন। তাঁর অ্যাকাউন্টটি ২৪ ঘণ্টার জন্য সাসপেন্ড করেছে ফেসবুক। নাট্যকার, সমালোচক এবং সাহিত্য অকাদেমির প্রাক্তন সচিব সচ্চিদানন্দন অবশ্য ফেসবুক কর্তৃপক্ষের চেয়ে অনেক বেশি বিজেপিকে দায়ী করছেন। যদিও বিজেপি এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে যে, এ ব্যাপারে পুরোপুরি ফেসবুকই দায়ী, এই ঘটনার সঙ্গে তাদের দলের কোনও যোগাযোগ নেই।

আন্দাজ হয়, কবি বিজেপিকে দায়ী করে অন্যায় করেননি, কারণ বিজেপি দল তথা কেন্দ্রীয় সরকার তাদের বিভিন্ন পদক্ষেপ ও কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এটা বুঝিয়ে দিয়েছে যে, তারা গণতান্ত্রিক দেশেও স্বৈরতন্ত্রে বিশ্বাসী, বাক্‌স্বাধীনতা রোধে অভ্যস্ত। সমাজমাধ্যমে নিজের মত প্রকাশ করে বহু মানুষ ইতিপূর্বে কেন্দ্রীয় সরকারের রোষে পড়েছেন। কবি সচ্চিদানন্দনের সঙ্গে যা হয়েছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়, অগণতান্ত্রিক এবং অনভিপ্রেত। এই ঘটনার অবশ্যই তীব্র প্রতিবাদ হওয়া উচিত। বাক্‌স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে বিরোধীদের সরব হওয়া দরকার।

পঙ্কজ সেনগুপ্ত

কোন্নগর, হুগলি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE